বাংলাদেশের ওপর কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চান ট্রাম্প?

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৭ ২০২৫, ২১:৫৯ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৫ ২০২৫, ১:২৬

বন্দরে কন্টেইনার, পণ্যবাহী জাহাজ ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি। গ্রাফিক্স: অ্যাপারেল রিসোর্সেস

বন্দরে কন্টেইনার, পণ্যবাহী জাহাজ ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি। গ্রাফিক্স: অ্যাপারেল রিসোর্সেস

  • 0

ট্রুথ সোশ্যালে সোমবার পোস্টে ট্রাম্প এ হুমকি দেন।

পহেলা আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কার্যকর করার হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

ট্রুথ সোশ্যালে সোমবার পোস্টে তিনি এ হুমকি দেন।

পোস্টে সংযুক্ত করা চিঠিতে ট্রাম্প লিখেন, একাধিক দেশের ওপর বাণিজ্যিক চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে এবং নতুন বাণিজ্য চুক্তি না হলে এ পদক্ষেপ কার্যকর হবে।

বাংলাদেশ ও অ্যামেরিকার মধ্যে ২০২৪ সালে ছয় বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতির প্রেক্ষাপটে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্যনীতি পুনরায় সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

বাংলাদেশের ওপর চাপ

বাংলাদেশের ওপর এ ৩৫ শতাংশ শুল্ক গত এপ্রিলে ঘোষিত সম্ভাব্য ৩৭ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম। বাংলাদেশের পণ্য অ্যামেরিকার মোট আমদানির ১ শতাংশের কম। এটি বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত বস্ত্র ও পোশাক শিল্পকেন্দ্রিক।

এপ্রিল মাসে যে ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতের সূচনা হয়েছিল, তা ৯ জুলাই শেষ হতে যাচ্ছে। এ সময়সীমা ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়াতে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের জন্য বাণিজ্য আলোচনা চালানোর শেষ সুযোগ হতে পারে।

বাংলাদেশ এখনও অ্যামেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা তেমন এগিয়ে নিতে পারেনি। এর পেছনে রয়েছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাব খাটানোর সীমিত ক্ষমতা। কারণ অ্যামেরিকান পণ্যের ওপর বাংলাদেশের শুল্ক এরই মধ্যে খুব কম।

নতুন ঘোষণার পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের শুল্কের কারণে অ্যামেরিকান ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনবে।

আরও কয়েকটি দেশের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি

বাংলাদেশ ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশের ওপরএ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে।

জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয়ের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে ১০ শতাংশ বেইজলাইন শুল্ক এপ্রিলেই ঘোষণা করা হয়।

অ্যামেরিকার সঙ্গে ২০২৪ সালে জাপানের বাণিজ্য ঘাটতি ৬৯ বিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ কোরিয়ারক্ষেত্রে সেটি ৬৬ বিলিয়ন ডলার। গাড়ি, স্টিল ও ইলেকট্রনিকস পণ্যের ওপর শুল্কের কারণে আলোচনায় বিলম্ব হচ্ছে।

এশিয়ার এ ‍দুই দেশ ছাড়া থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, মিয়ানমার ও লাওসের ওপর সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ,মালয়েশিয়া ও কাজাখস্তানের ওপর ২৫ শতাংশ করে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। এর বাইরে কম্বোডিয়ার ওপর ৩৬ শতাংশ এবং তিউনিসিয়া ও সার্বিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ করে শুল্কের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

শুল্কের এ হার সরকারপ্রধানদের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে বর্ণনা করা হয়েছে, যা এপ্রিল মাসে দেওয়া আগের হুমকির পরিবর্তে এসেছে। তখন ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রেখে ৯০ দিনের মধ্যে ৯০টি বাণিজ্য চুক্তির জন্য চাপ দেন। এখন পর্যন্ত শুধু যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রাথমিক চুক্তি হয়েছে, যার বিস্তারিত এখনো চূড়ান্ত নয়।

অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা পর এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ পড়ে গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের শুল্কজনিত উদ্বেগের প্রতিফলন। অ্যামেরিকার সরকারি বন্ডের দামও কমেছে, যা বাজার থেকে আস্থা সরে যাওয়ার ইঙ্গিত।

বাংলাদেশের জন্য এ শুল্ক হুমকি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে তুলছে। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ ও নিয়োগ স্থগিত করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, স্থায়ীভাবে শুল্ক আরোপ বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করতে পারে।

বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ

পহেলা আগস্টের সময়সীমার আগে বাংলাদেশ একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারে। আলোচনায় অগ্রগতি না থাকায় উচ্চ হারে শুল্ক বাংলাদেশের অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে আঘাত করতে পারে।

ন্যাশনাল ফরেইন ট্রেইড কাউন্সিলের জেইক কোলভিন জানিয়েছেন, যেসব দেশ চুক্তিতে পৌঁছায়, তারাও শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে নামাতে পারেনি।

নতুন শুল্কে বাংলাদেশের সরকার রাজনৈতিক চাপে পড়বে। সামনের দিনগুলোতে নতুন কোনো ঘোষণা আসতে পারে, কিন্তু আপাতত বাংলাদেশ এক সম্ভাব্য ‘বাণিজ্য ধাক্বা’র জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।