নিউ ইয়র্ক সিটিতে কেন নিজেদের প্রতিনিধি পাচ্ছে না বাংলাদেশি কমিউনিটি

শরিফুল ইসলাম, নিউ ইয়র্ক

প্রকাশিত: মে ১৮ ২০২৫, ২১:৩৪ হালনাগাদ: নভেম্বর ২১ ২০২৫, ৮:৫৫

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা শাহ নাওয়াজ, ডিস্ট্রিক্ট থার্টি নাইনের কাউন্সিল উইম্যান শাহানা হানিফ ও কমিউনিটি নেতা গিয়াস আহমদ। কোলাজ: টিবিএন২৪

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা শাহ নাওয়াজ, ডিস্ট্রিক্ট থার্টি নাইনের কাউন্সিল উইম্যান শাহানা হানিফ ও কমিউনিটি নেতা গিয়াস আহমদ। কোলাজ: টিবিএন২৪

  • 0

কমিউনিটির সদস্যদের ভাষ্য, নির্বাচনে বাংলাদেশি অ্যামেরিকানরা ঐক্যবদ্ধ না হওয়ায় নিজেদের মধ্য থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কমিউনিটি।

বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি অ্যামেরিকানের বসবাস নিউ ইয়র্ক সিটিতে। তাদের মধ্য থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা ব্যাপক কষ্টসাধ্য বিষয় নয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজেদের প্রতিনিধি ঠিক করতে পারছে না বাংলাদেশি কমিউনিটি।

কী কারণে এমনটি হচ্ছে, সে বিষয়ে কমিউনিটির সদস্যদের অভিমত নিয়েছে টিবিএন২৪।

তাদের ভাষ্য, নির্বাচনে বাংলাদেশি অ্যামেরিকানরা ঐক্যবদ্ধ না হওয়ায় নিজেদের মধ্য থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কমিউনিটি।

নিউ ইয়র্কের সিটি মেয়রসহ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া গৌরবের। প্রতি নির্বাচনে মেয়র, কম্পট্রোলার, পাবলিক অ্যাডভোকেট ও সিটি কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন ৫৪ জন জনপ্রতিনিধি।

ভোট এনওয়াইসির তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে পাঁচ মিলিয়ন ১২৬ হাজার ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

জনপ্রতিনিধিদের কাছে ভোটারদের প্রত্যাশা

ডিপার্টমেন্ট অফ লেবারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক সিটিতে বেকারত্বের হার প্রায় পাঁচ শতাংশ। তাই এবারের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বেকারত্ব, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এবং নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়কে বিবেচনায় রাখছেন ভোটাররা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটির এক সদস্য বলেন, ‘অনেক ক্রাইম হয়। স্পেশালি আমাদের বাঙালি কমিউনিটির ওপরে।’

বাড়িভাড়া ও কর বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে আরেক বাংলাদেশি অ্যামেরিকান বলেন, ‘হাউজিং রেন্ট আপ হইতেছে। ট্যাক্স অনেক আপ হইতেছে। ইনশাল্লাহ নেক্সট যে আসবে, ও একটু আমাদের সবাইকে হেল্প করবে।’

নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রতি দিলেও ভোটের পর তা ভুলে যান বলে অভিযোগ করেন নিউ ইয়র্ক সিটির বাংলাদেশি কমিউনিটির এক সদস্য।

তার ভাষ্য, ‘নিরাপত্তার ছুতু দিয়ে আসে যে, আমি নিরাপত্তাটার শতভাগ নিশ্চয়তা দেব, বাট ক্ষমতায় যাওয়ার পর দেখা যায় যে, পূর্বের অবস্থানে চলে যায়।’

সিটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ‍অনুপাতে বাড়ছে না প্রতিনিধিত্ব

নিউইয়র্ক সিটির ব্যবসা-বাণিজ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে নিজেদের অবস্থান তৈরি করছে বাংলাদেশি কমিউনিটি। ক্রমবর্ধমান হচ্ছে তাদের গুরুত্ব ও সুনাম। ফলে কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সিটির মেয়র, স্টেট সিনেটরসহ জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন।

গুরুত্বের এ অনুপাত ভোটে দেখছে না বাংলাদেশি কমিউনিটি। সিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নেই কোনো বাংলাদেশি অ্যামেরিকান।

সিটির ৫১টি ডিস্ট্রিক্টে একমাত্র নির্বাচিত বাংলাদেশি জনপ্রতিনিধি ডিস্ট্রিক্ট থার্টি নাইনের কাউন্সিল উইম্যান শাহানা হানিফ।

এমন বাস্তবতায় কমিউনিটির সদস্যরা বলছেন, শুধু দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও বিভেদের দেয়াল তৈরি করায় নিজেদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

তারা আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

কী বলছেন জনপ্রতিনিধি ও কমিউনিটি নেতারা

কাউন্সিল উইম্যান শাহানা হানিফ মনে করেন, সিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যাওয়ার জন্য নিজেদের আরও বেশি প্রস্তুত করতে হবে।

তার ভাষ্য, ‘আমাদের এখন, মানে, কাজ অনেক। সবার সাথে আমাদের কথা বলতে হবে। আমাদের প্রত্যেকটা কমিউনিটির সাথে কথা বলতে হবে। শুধুমাত্র বাংলাদেশি না। আর তাদেরকে বলতে হবে যে, ভোট দিতে আসতে হবে।’

কমিউনিটি নেতা গিয়াস আহমদ বলেন, ‘হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল হিল, সিটি হলে, গভর্নর অফিসে, পুলিশ ডিপার্টমেন্টে, বিভিন্ন এজেন্সিতে তারা কাজ করছে। অতএব আমাদের মধ্যে যদি কাদা ছোড়াছুড়ি হয়, তাহলে কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কিন্তু এটাকে ভালোভাবে নেবে না।’

আরেক কমিউনিটি নেতা শাহ নাওয়াজ বলেন, ‘আমরা সব কমিউনিটি মিলে একসাথে চেষ্টা করব একজন যোগ্য ব্যক্তি যে ব্যক্তি মনে করবে আমাদের এশিয়ান কমিউনিটিকে, আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটিকে, আমাদের মুসলিম কমিউনিটিকে আমাদের সহযোগিতা করবে। সেই লোককেই আমরা যেন প্রথমে ভোট দিই।’