ফ্রান্সে দাঙ্গা: মেয়রের বাড়িতে হামলা

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ২ ২০২৩, ২০:০৭

প্যারিসে এক মেয়রের বাড়িতে হামলায় চালায় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: সংগৃহীত

প্যারিসে এক মেয়রের বাড়িতে হামলায় চালায় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহতের জেরে চলমান দাঙ্গায় এক মেয়রের বাড়িতে হামলা হয়েছে। এতে তার স্ত্রী ও সন্তান আহত হয়েছেন। সহিংস বিক্ষোভের পঞ্চম দিন রোববার সাতশজনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সব মিলিয়ে গত পাঁচ দিনে গ্রেফতার করা হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষকে।

দেশজুড়ে বিক্ষোভের মধ্যেই শনিবার নিহত কিশোর নাহেলের শেষকৃত্য হয়েছে। সে সময় শহরগুলোতে হাজার হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

দাঙ্গা পরিস্থিতি সামাল দিতে জার্মানিতে রোববারের রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করেছেন প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সহিংসতার মাত্রা অবশ্য আগের কয়েক রাতের তুলনায় শনিবার রাতে অনেকটাই কমেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড দারমানিন রোববার ভোরে টুইট করে বলেন, ‘আজকের রাত অনেকটাই শান্ত ছিল। দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

প্যারিসের শহরতলি লে হেয় লেস রোজেসে মেয়র ভিনসেন্ট জ্যঁ বার্নের বাড়িতে অবশ্য শনিবার রাতেই হামলা হয়েছে। ঘটনার সময় মেয়র তার কার্যালয়ে ছিলেন, বাড়িতে ছিলেন তার স্ত্রী ও দুই সন্তান।

ভিনসেন্ট জানান, একটি গাড়ি তার বাড়ির বাগানের গেইট ভেঙে ঢুকে পড়ে। তাতে আগুন ধরিয়ে সরে যায় দুষ্কৃতিকারীরা। সন্তানদের নিয়ে তার স্ত্রী বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের দিকে আতশবাজি ছোড়া হয়।

মেয়রের অভিযোগ, গাড়িতে আগুন দেয়ার মাধ্যমে তার বাড়িতে আগুন দেয়ারই পরিকল্পনা ছিল। তার পরিবারকে হত্যার উদ্দেশ্যে এই হামলা হয়।

তিনি বলেন, ‘এটি অকল্পনীয় কাপুরুষতা… সীমা অতিক্রম করা হয়েছে…।’


এর আগে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারির জন্য সরকারের প্রতি কয়েকবার আহ্বান জানিয়েছিলেন মেয়র ভিনচেন্ট। এ কারণে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী এলিজাবেথ বোর্ন বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটি সহিংসতার ঘটনাকে বিচারে আওতায় আনব। মেয়রের বাড়িতে হামলায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার হবে।’

সরকারি হিসাবে, দেশজুড়ে চলা বিক্ষোভে এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি গাড়ি ভাংচুর হয়েছে, দোকান, রেস্তোরাঁসহ সাতশর বেশি স্থাপনায় লুটপাত, অগ্নিসংযোগ হয়েছে। আহত হয়েছেন দুইশরও বেশি পুলিশ অফিসার।

সহিংসতা বন্ধে রোববার আহ্বান জানিয়েছেন নিহত কিশোরের নানি। তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আপনারা দোকানপাট, বাস, স্কুলে ভাঙচুর করুন তা আমরা চাই না… তারা (বিক্ষোভকারীরা) নাহেলকে অযুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে… আমরা চাই পরিস্থিতি শান্ত হোক।’

প্যারিসের নানতেরে শহরের একটি ট্রাফিক স্টপে গত মঙ্গলবার নর্থ-আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কিশোর নাহেল এমকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

নায়েলকে ট্রাফিক স্টপে পুলিশের গুলি চালানোর দৃশ্য। ভিডিও থেকে নেয়া ছবি



ফ্রেঞ্চ সংবাদমাধমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় যে নাহেল গাড়ি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের দিকে তেড়ে যাচ্ছিলেন। আত্মরক্ষায় পুলিশ গুলি করে।

তবে ঘটনার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ভিন্ন তথ্য প্রকাশ হয়।

ফুটেজে দেখা যায়, হলুদ রংয়ের গাড়ি থামিয়ে দুজন অফিসার ভেতরে থাকা চালকের সঙ্গে কথা বলছেন। এর মধ্যে একজন চালকের দিকে বন্দুক তাক করে আছেন। এক পর্যায়ে গাড়িটি চলতে শুরু করামাত্র পুলিশ অফিসার গুলি করেন। অল্প কিছদূর গিয়েই নিয়ন্ত্রণহীন গাড়িটি একটি পোস্টে লেগে আটকে যায়।

ভেতরেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় নাহেলকে। ভিডিও ভাইরাল হলে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনায় অভিযুক্ত ফ্রেঞ্চ পুলিশ কর্মকর্তাকে আনুষ্ঠানিক তদন্তের আওতায় নেয়া হয়।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন