৮ মাসে অ্যামেরিকার শ্রমবাজার থেকে উধাও ১২ লাখ শ্রমিক

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১ ২০২৫, ৮:০৪ হালনাগাদ: সেপ্টেম্বর ৭ ২০২৫, ১৮:১৮

ডনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতিগুলো দেশের শ্রমশক্তিকে প্রভাবিত করছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ছবি: এবিসি নিউজ

ডনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতিগুলো দেশের শ্রমশক্তিকে প্রভাবিত করছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। ছবি: এবিসি নিউজ

  • 0

সাধারণত অ্যামেরিকার কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অভিবাসীরা কমপক্ষে ৫০ শতাংশ অবদান রাখেন।

লেবার ডে উপলক্ষে দেশে আজ শ্রমিকদের অবদান উদযাপনের জন্য কুচকাওয়াজ এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এবারের লেবার ডে অ্যামেরিকার জন্য অনেকটাই ভিন্ন। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসী বিতাড়নের কঠোর অভিযানের কারণে আতঙ্কিত দেশের শ্রমজীবী মানুষরা।

প্রাথমিক আদমশুমারি ব্যুরোর তথ্য বিশ্লেষণ শেষে পিউ রিসার্চ সেন্টার জানায়, জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত দেশের ১২ লাখের বেশি অভিবাসী শ্রমশক্তি অদৃশ্য হয়ে গেছেন। এর মধ্যে অবৈধভাবে দেশে থাকা ব্যক্তিদের পাশাপাশি বৈধ বাসিন্দারাও অন্তর্ভুক্ত।

এবিসি নিউজ জানায়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতিগুলো দেশের শ্রমশক্তিকে প্রভাবিত করছে।

মেক্সিকো সীমান্তের ঠিক ওপারে, টেক্সাসের ম্যাকঅ্যালেনে ভুট্টা এবং তুলা ক্ষেত ফসল কাটার জন্য প্রায় প্রস্তুত। তবে খামারকর্মী অ্যাডভোকেসির পরিচালক এলিজাবেথ রদ্রিগেজ উদ্বিগ্ন। কারণ পর্যাপ্ত শ্রমিক না পাওয়ায় ক্ষেত পরিষ্কার করা বা জিন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি পরিচালনা করা তার জন্য কঠিন হবে।

রদ্রিগেজ বলেন, ‘খামার, ব্যবসা এবং নির্মাণস্থলে অভিবাসন আইন প্রয়োগকারী পদক্ষেপ সবকিছুকে স্থবির করে দিয়েছে। মে মাসে, যখন আমাদের তরমুজ এবং ক্যান্টালুপ মৌসুমের শীর্ষে ছিল, তখন পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকায় ফসল কাটতে দেরি হয়। ফলে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে যায়।

ডালাসের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের শ্রম অর্থনীতিবিদ পিয়া ওরেনিয়াস বলেন, সাধারণত অ্যামেরিকার কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অভিবাসীরা কমপক্ষে ৫০ শতাংশ অবদান রাখেন।

পিউর সিনিয়ন গবেষক স্টেফানি ক্র্যামারের মতে, দেশের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষই বিদেশ থেকে এসেছে। তথ্যমতে কৃষি, মাছ ধরা এবং বনায়নের ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ কর্মী অভিবাসী। তিনি আরও জানান, নির্মাণ শ্রমিকদের প্রায় ৩০ শতাংশ অভিবাসী এবং ২৪ শতাংশ পরিষেবা কর্মী অভিবাসী।

রদ্রিগেজ জানান, ম্যাকঅ্যালেন এবং এর আশেপাশের নির্মাণ স্থানগুলোও সম্পূর্ণ স্থবির। তিনি বলেন, আমাদের একটি বিশাল শ্রমশক্তি রয়েছে যারা কাগজপত্রবিহীন। আমরা দেখেছি আইস তাদের অভিযানের জন্য বিশেষ করে নির্মাণ সাইটগুলোকে লক্ষ্য করেছে এবং মেকানিক ও মেরামতের দোকানগুলোকে লক্ষ্য করার চেষ্টা করছে।’

অ্যাসোসিয়েটেড জেনারেল কন্ট্রাক্টরস অফ অ্যামেরিকার সরকারি কর্মসংস্থানের তথ্য বলছে,দেশের প্রায় অর্ধেক মেট্রোপলিটন এলাকায় নির্মাণ কাজের সংখ্যা কমেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড-সান বার্নার্ডিনো-অন্টারিও এলাকায় সবচেয়ে বেশি ৭,২০০ কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেস-লং বিচ-গ্লেনডেল এলাকায় ৬,২০০ কর্মসংস্থান হ্রাস পেয়েছে।

অ্যামেরিকার স্বাস্থ্যসেবার ওপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়েও সতর্ক করেছেন ক্র্যামার। তিনি বলেন, প্রায় ৪৩ শতাংশ গৃহ স্বাস্থ্যসেবা সহায়কই অভিবাসী।

সার্ভিস এমপ্লয়িজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এসইআইইউ স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি খাত এবং সম্পত্তি পরিষেবায় প্রায় ২০ লাখ কর্মীর প্রতিনিধিত্ব করে। ক্যালিফোর্নিয়ায়, ২০১৫ সালের এসইআইইউ সদস্যদের মধ্যে আনুমানিক অর্ধেক দীর্ঘমেয়াদী কর্মী অভিবাসী ছিলেন বলে জানান সংস্থাটির সভাপতি আর্নুলফো দে লা ক্রুজ।

তিনি বলেন, ‘যখন লক্ষ লক্ষ অ্যামেরিকান আর কোনও গৃহকর্মী খুঁজে পাবে না, তখন কী হবে? যখন অভিবাসীরা আমাদের ফসল কাটার জন্য মাঠে থাকবে না, তখন কী হবে? আমাদের হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমগুলোতে কে কর্মী রাখবে?'