ইইউর প্রকল্পে বিডিআরসি ও আইএফআরসি ‍
জুলাই অভ্যুত্থানে আহত প্রায় ৮ হাজার মানুষ পাচ্ছেন সহায়তা

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২ ২০২৫, ২২:৪৭ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৪ ২০২৫, ৬:০০

জুলাই আহতদের ধারাবাহিক চিকিৎসা সেবা জোরদারের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োজনীয় ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন সরঞ্জাম হস্তান্তর করে ইইউ। ছবি: বিডিআরসিএস

জুলাই আহতদের ধারাবাহিক চিকিৎসা সেবা জোরদারের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োজনীয় ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন সরঞ্জাম হস্তান্তর করে ইইউ। ছবি: বিডিআরসিএস

  • 0

এ উদ্যোগে কারিগরি সহায়তা দেবে ড্যানিশ রেড ক্রস ও সুইডিশ রেড ক্রস।

গত বছরের সালের জুলাই ও আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহায়তায় আগামী এক বছর কাজ করবে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস) ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি)।

এ উদ্যোগে কারিগরি সহায়তা দেবে ড্যানিশ রেড ক্রস ও সুইডিশ রেড ক্রস।

‘পাথওয়েজ টু হিলিং (পিটুএইচ)’ শীর্ষক এই উদ্যোগে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ১৬ জেলার প্রায় ৮ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হবেন।

ইইউর দুই মিলিয়ন ইউরোর এ প্রকল্পের আওতায় গণঅভ্যুত্থানে আহত ও ক্ষতিগ্রস্তরা চিকিৎসাসেবা, ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন সহায়তা, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত ব্যক্তিরা অ্যাসিস্টিভ ডিভাইস বা চলাফেরায় সহায়ক সরঞ্জাম এবং জীবিকা সহায়তা পাবেন।

প্রকল্পের আওতায় আগামীর স্বাস্থ্যকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যসুবিধা উন্নয়ন ও স্কুল পর্যায়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানবিষয়ক সচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করা হবে।

জুলাই আহতদের ধারাবাহিক চিকিৎসা সেবা জোরদারের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ঢাকার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রয়োজনীয় ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন সরঞ্জাম হস্তান্তর করে ইইউ।

অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশসহ উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। আরও উপস্থিত ছিলেন বিডিআরসিএস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম, মহাসচিব ডা. কবির এম আশরাফ আলম, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. শাহানা জাফর, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এস.এম. খোরশেদ আলম মজুমদার, আইএফআরসি বাংলাদেশ ডেলিগেশনের প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর সোনাক্ষী দেসহ সংশ্লিষ্টরা।

ওই সময় আহত ব্যক্তিদের একাংশের সঙ্গে আলাপ শেষে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শারীরিকভাবে গুরুতর আহত ও মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্তদের সহায়তায় বদ্ধপরিকর, যেন তারা মর্যাদার সঙ্গে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।’

চলতি বছরের আগস্ট থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আহতদের ওপর যৌথ মূল্যায়ন পরিচালনা করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট ও আইএফআরসি।

সেখান থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সরকারি গেজেট অনুযায়ী গুরুতর আহত ক্যাটাগরি-এ এবং মধ্যম আহত ক্যাটাগরি-বি তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৪০১ জনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

এর মধ্যে ৬৯৪ জন পরবর্তী মূল্যায়ন শেষে চিকিৎসা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও জীবিকা সহায়তা ও প্রশিক্ষণ পাবেন। পাশাপাশি জীবিকা উন্নয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও কয়েক হাজার মানুষ এ উদ্যোগের মাধ্যমে উপকৃত হবেন।

গণঅভ্যুত্থানে আহতদের একজন, যিনি আগে গাজীপুরে পিক-আপ ভ্যান চালাতেন, বলেন, ‘আন্দোলনে আমার দুই হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একাধিকবার সার্জারি হলেও এক হাত এখনও অচল। কোনো কাজ করতে পারি না।

‘রেড ক্রিসেন্ট আমার বাড়িতে গিয়েছিল। আমার অবস্থা বিস্তারিত জেনেছে এবং জানিয়েছে আমাকে চিকিৎসা ও জীবিকা সহায়তা দেওয়া হবে, যেন আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি।’

অনুষ্ঠানে রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যান ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘রেড ক্রিসেন্ট সবসময় মানুষের পাশে আছে। বছরব্যাপী এই কর্মসূচি আমাদেরকে ২০২৪ সালের জুলাই/আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আরও শক্তভাবে দাঁড়াতে সহায়তা করছে, যেন তারা একটি নিরাপদ স্বাভাবিক জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন।’

আইএফআরসি প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর সোনাক্ষী দে ইইউর অর্থায়ন ও পার্টনারশিপের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো অভ্যুত্থানে বেঁচে থাকা মানুষদের শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা পুনর্গঠনে সহায়তা করা। ইইউর সহযোগিতায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে পারছি।’

নিরপেক্ষতা, মানবিকতা এবং স্বাধীনতা— এ নীতিতে অটল থেকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ; ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ ও চাহিদাভিত্তিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

পিটুএইচ উদ্যোগের কার্যক্রম আগামী মাসগুলোতে ১৬টি জেলাজুড়ে আরও বিস্তৃত হবে, যাতে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি, পরিবার ও কমিউনিটি প্রয়োজনীয় সহায়তা পেতে পারে।