
জর্ডানে ওপেন হার্ট সার্জারির পর ফের গাজার মৃত্যুপুরীতে শিশু নিভীন

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২১ ২০২৫, ১২:১৪ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৪ ২০২৫, ৬:০৮

ওপেন হার্ট সার্জারি করা শিশু নিভীন। ছবি: বিবিসি
- 0
পরিবারের অভিযোগ, জর্ডানের হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচার হলেও চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই ফেরত পাঠানো হয় নিভীনকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় তাঁবুতে চলছে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের লড়াই।
গাজার উত্তরের আল-শাতি শরণার্থী ক্যাম্পের একটি অস্থায়ী তাঁবুতে সাত মাস বয়সী নিভীনকে কোলে নিয়ে বসে আছেন তার মা ৩৩ বছর বয়সী ইনাস আবু ডাক্কা। জর্ডানের হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচার হলেও চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রেখেই ফেরত পাঠানো হয় নিভীনকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় তাঁবুতে চলছে তার শ্বাস-প্রশ্বাসের লড়াই।
নিভীন জন্ম নিয়েছে চলমান যুদ্ধের মধ্যে। জন্ম থেকেই তার হার্টে ছিল একটি ছিদ্র। তার মা বলছেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই ছিল এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।’
শিশুটির মা ইনাস বিবিসিকে বলেন, ‘নিভীনের জীবন নিয়ে লড়াইটা ওর জন্য খুব কঠিন ছিল। ওজন বাড়ছিল না, একটু পরপর অসুস্থ হয়ে পড়ত।’
নিভীনের বাঁচার একমাত্র সুযোগ ছিল গাজার বাইরে চিকিৎসা পাওয়া। মার্চ মাসের শুরুতে, যুদ্ধবিরতির সুযোগে ২৯ জন অসুস্থ ফিলিস্তিনি শিশুকে জর্ডানে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়। সেই সুযোগে ইনাস ও তার বড় মেয়ে নিভীনকে জর্ডানে নেওয়া হয় চিকিৎসার জন্য।
জর্ডানে পৌঁছে নিভীনের ওপেন হার্ট সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হয় এবং সে ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়, এবং গাজায় আবার শুরু হয় ইসরায়েলি অভিযান।
জর্ডানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১২ মে রাতে ইনাসকে জানানো হয়, পরদিনই তাদের গাজায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে, কারণ কর্তৃপক্ষের মতে নিভীনের চিকিৎসা ‘সম্পন্ন’ হয়েছে।
শিশুটির মা ইনাস জানান, ‘যখন আমরা এসেছিলাম তখন যুদ্ধবিরতি ছিল। এখন যুদ্ধ চলছে, কীভাবে তারা আমাদের ফিরিয়ে দিতে পারে?’
এই অবস্থার মধ্যে ওপেন হার্ট সার্জারি করা নিভীনকে নিয়ে গাজায় ফিরতে বাধ্য হয় তার পরিবার।
গাজায় ফিরে নিভীনের পরিবার বলছে, তার চিকিৎসা শেষ হয়নি এবং তার শারীরিক অবস্থা এখনও গুরুতর।
ইনাস বলেন, ‘আমার মেয়ের শারীরিক অবস্থা ভালো না, যেকোনো সময় তার মৃত্যু হতে পারে। তার হৃদরোগ আছে, মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস নিতে পারে না, নীল হয়ে যায়। হাসপাতাল ছাড়া সে এই তাঁবুতে বাঁচতে পারবে না।’
যদিও জর্ডান ১৩ মে জানায় ‘চিকিৎসা সম্পন্ন হওয়ার’ পর তারা ১৭ জন শিশু গাজায় ফেরত পাঠিয়েছে। পরের দিন আরও চারজন অসুস্থ শিশুকে গাজা থেকে জর্ডানে আনা হয়।’
জর্ডান সরকার বিবিসিকে জানিয়েছে, যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে, তারা সবাই ‘ভালো অবস্থায়’ ছিলেন এবং চিকিৎসা শেষ করেছেন। তারা আরও বলে, প্রথম থেকেই এটি জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, সুস্থ হলে শিশুদের গাজায় ফেরত পাঠানো হবে।
জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, ‘জর্ডান ফিলিস্তিনিদের নিজেদের ভূখণ্ডে রাখার নীতি মেনে চলে এবং তাদের বাইরে স্থানান্তর করে দেশের নিয়ম ভঙ্গ করতে চায় না।’
তবে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘এই শিশুদের এখনও চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। তাদের ফিরিয়ে দেওয়া মানে তাদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া।’