নিন্দা থেকে পুষ্পধারায়
মেহরিন জাহান, টিবিএন ডেস্ক
মে ৭ ২০২৩, ২২:২৪
- 0
দীর্ঘ বন্ধুর পথ, বহু মানুষের নিন্দা সয়ে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃটেইনের রানির আসন, মুকুট ও মর্যাদা অর্জন করে নিলেন ক্যামিলা পার্কার। তার এই যাত্রা রূপকথার কোনো গল্প বললে ভুল হবে না।
ব্রিটিশ জনগণ ও বিশ্ববাসী তাদের হৃদয়ের রানি প্রিন্সেস ডায়ানার সংসার ভাঙার জন্য ক্যামিলা পার্কারকেই সবসময় দায়ি করেছে, মিডিয়ার ক্রমাগত নিন্দার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। রাজপরিবার থেকেও তিনি তিক্ততা পেয়েছেন। কেবল চার্লসের ভালোবাসাই ছিল তার শক্তি।
সব কটূক্তি, ঘৃণার দৃষ্টি উপেক্ষা করে দৃঢ়ভাবে সবসময় তাই প্রেমিক চার্লসের পাশে ছিলেন ক্যামিলা। চার্লসও কখনও ছাড়েননি প্রিয়তমার সঙ্গ। তার হাত ধরেই ৭৫ বছর বয়সে এসে শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বৃটেইনের রানি হলেন ক্যামিলা।
রাজ্যাভিষেকের খবর সংগ্রহে যাওয়া সিবিসি নিউযের সাংবাদিক টিনা ব্রাউন বলেন, “এখানে মানুষের মুখে বারবার ‘রূপকথা’ শব্দটি ঘুরেফিরে আসছে… রাজা অবশেষে ওই নারীকে রানির মর্যাদা দিতে যাচ্ছেন, যিনি সেই টিনএজ বয়স থেকে তার পাশে থেকেছেন… এটি একটি বিশাল আনুষ্ঠানিকতা, রাজ্যের বড় উৎসব বটে, তবে আমরা এখানে চার্লস-ক্যামিলার একান্ত ব্যক্তিগত গল্পটি দেখছি… আমরা দেখতে যাচ্ছি যে বছরের পর বছর ধরে যে সম্পর্ক নিয়ে মুখরোচক গল্প হয়েছে, সেই সম্পর্ক অবশেষে মুকুট পরেছে।”
রানির আসনে অভিষিক্ত হওয়ার বিশেষ দিনে ঝলমলে সাদা একটি গাউন পরেছিলেন ক্যামিলা। প্রিয়জনদের নাম ওই গাউনে লিখিয়ে নিয়েছিলেন তিনি।
ব্রুস ওল্ডফিল্ড ক্রচারের ডিজাইন করা ওই গাউনের সামনে অংশের নিচের দিকে দেখা গেছে ক্যামিলার সন্তান টম ও লরা এবং নাতি-নাতনি গস, ফ্রেডি, লুইস, এলিযা ও লোলার নাম।
তার পোষ্য দুই কুকুরছানার আদলে করা দুটি নকশাও দেখা গেছে গাউনের ওই অংশে।
চার্লস-ক্যামিলার সম্পর্কের উত্থান-পতন
ক্যামিলা পার্কারের জন্ম অভিজাত ব্রিটিশ পরিবারে। আর বৃটেইনের রানি এলিজাবেথের ছেলে চার্লস জন্মের পর থেকেই রাজ্যের পরবর্তী প্রধান।
এ দুজনের প্রেমের সম্পর্কের শুরু সেই ১৯৭০ এর দিকে। তবে চার্লস নৌবাহিনীতে যোগ দিতে চলে যাওয়া সে সময় সম্পর্ক এগোয়নি। ক্যামিলা ১৯৭৩ সালে বিয়ে করেন অ্যান্ড্রু পার্কার বোলেসকে আর চার্লস ১৯৮১ সালে বিয়ে করেন ডায়ানা স্পেন্সারকে।
অন্যত্র বিয়ে হলেও দুজনের যোগাযোগ অক্ষুণ্ন ছিল। ক্যামিলার ছেলে টমের গডফাদারও বলা হতো চার্লসকে। ১৯৮৬ সাল থেকে দুজনের বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের গুঞ্জণ উঠতে থাকে ব্রিটিশ মিডিয়ায়।
ক্যামিলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় ১৯৯৬ সালে প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে বিয়েবিচ্ছেদ হয় চার্লসের। এর এক বছর আগে বিয়ে ভাঙে ক্যামিলার। তখন থেকেই সবার কাছে ঘৃণিত নারী হয়ে ওঠেন ক্যামিলা। আর ডায়ানা হয়ে ওঠেন সবার হৃদয়ের রানি।
বিয়েবিচ্ছেদের আগে এক সাক্ষাৎকারে ডায়ানা বলেছিলেন, ‘আমার বিবাহিত জীবনের সদস্য তিন জন হয়ে যাওয়ায় একটু গাদাগাদি হয়ে যাচ্ছে।'
পরে অবশ্য নিজেরও বিয়েবর্হিভূত একটি সম্পর্কের কথা তিনি প্রকাশ করেছিলেন।
২০১৭ সালের এক সাক্ষাৎকারে তীক্ত অতীত অভিজ্ঞতার বিষয়ে ক্যামিলা বলেন, ‘ভয়ঙ্কর ছিল সেই অভিজ্ঞতা। অত্যন্ত অপ্রীতিকর ছিল সেসব মুহূর্ত। আমি কোনোদিন আমার শত্রুকেও এমন পরিস্থিতিতে দেখতে চাইব না। আমার পরিবার পাশে থাকায় কঠিন সময়গুলো পার করতে পেরেছিলাম।’
১৯৯৭ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় ডায়ানার মৃত্যু হয়। এরপর থেকে ক্যামিলার সঙ্গে সম্পর্ক প্রকাশ্যে আনেন চার্লস। তারা বিয়ে করেন ২০০৫ সালে।
এই বিয়ের পর থেকে ক্যামিলার প্রতি মানুষের আচরণ সহনশীল হতে থাকে। তবে চার্লস ও ডায়ানার ছেলেরা তাকে তখনও মেনে নেননি।
এক সাক্ষাৎকারে চার্লস-ডায়ানার ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারি বলেছিলেন, ক্যামিলা নিজের ইমেজ ঠিক করার জন্য তাকে ও তার ভাই উইলিয়ামকে ব্যবহার করে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়েছেন।
এদিকে, রাজপরিবারে পরবর্তী রাজা চার্লসের সঙ্গে ক্যামিলার উপাধি ‘কুইন কনসর্ট’ হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ। এই উপাধির অর্থ হলো, চার্লস রাজা হলে ক্যামিলা রানি হবেন ঠিকই, তবে রাজ্যের তার কোনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকবে না।
রাজ্যাভিষেকের নিমন্ত্রণ পত্রে ক্যামিলাকে রানি বলেই আখ্যায়িত করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতায়ও তিনি রানি হয়েছেন, রানির মুকুটই পরেছেন। চার্লস জানিয়েছেন, তার স্ত্রী কুইন কনসর্ট নন, কুইন-ই। তবে রাজপরিবারের জন্মগত সদস্য নন বলে ক্যামিলা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পাবেন না।