
ফেসবুকে 'অ্যানোনিমাস পেজ' থেকে গুজব, নেপথ্যে কী?

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২২ ২০২৫, ৮:২৮ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৫ ২০২৫, ০:৫২
.jpg)
‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামে ফেসবুক পেজ থেকে ছড়িয়ে পড়ে গুজব। ছবি: ঢাকা পোস্ট
- 0
অ্যামেরিকার হাওয়াই দ্বীপ, নাইজেরিয়া এবং অজানা আরেকটি তৃতীয়ত দেশ থেকে চালানো হয় পেজটি।
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার পরপরই সামাজিমক মাধ্যমে ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামে একটি ফেসবুক পেজ কে ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়।
মূলত বিমান বিধ্বস্তের আগের দিন অর্থাৎ ২০ জুলাই ঐ ফেসবুক থেকে দেয়া একটি পোস্টকে ঘিরে তৈরি হয় গুজব ও আতঙ্ক।
স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়, একটি বিদ্যালয়ের বিল্ডিং ধসে পড়বে, অনেক শিশুর প্রাণহানি ঘটবে। বিদ্যালয়ের বিল্ডিংয়ের দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণের কারণেই এমন দুর্ঘটনা ঘটবে।
এরপরই সোমবার উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজের প্রাইমারি ভবনে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এরপরেই সামাজিক মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে স্ট্যাটাসের যোগসূত্র থাকার দাবি করে পোস্ট করতে থাকেন।
শুধু তাই নয়, সোমবার সন্ধ্যায় ওই একই পেজ থেকে আরও একটি স্ট্যাটাসে দাবি করা হয়- বাংলাদেশে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি বোমা বিস্ফোরিত হবে। এটি হতে পারে কোনো হোটেল কিংবা হাসপাতালে।
মুহূর্তের মধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় পোস্টটি। অনেকেই তাদের সেই পোস্ট শেয়ার করে এক ধরনের আতঙ্ক-উদ্বিগ্নের কথাও প্রকাশ করেন।
এ বিষয়টি নজরে আসে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশিরেও।
নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া এক বার্তায় মঙ্গলবার শিশির লেখেন, ‘অনলাইন জুয়াড়িদেরকে খোদা বানিয়ে ফেলা বন্ধ করুন! আজকের এই দিনে এমন জিনিসে অ্যাটেনশন দিতে হবে তা ভাবাও কষ্টকর।’
‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নিয়ে যে হাইপ তোলা হয়েছে, তারপর একটু সময় দিলাম পেজটার পেছনে। যা পেলাম তা হচ্ছে- ‘প্রথমত, এটি অ্যানোনিমাস হ্যাকার গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু নয়। অ্যানোনিমাস এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে যে ফেসবুক পেজ দেয়া আছে সেটি এই পেজ নয়।’
‘দ্বিতীয়ত, ‘অ্যানোনিমাস মেইন পেজ’ নামক পেজটি ঘেঁটে জানা গেছে, এটি একটি অনলাইন জুয়ার পেজ। মূলত অনলাইন জুয়া প্রমোট করা (টিকিট বিক্রির) এবং নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তারা অনলাইন গেমিং বা জুয়া সংক্রান্ত পোস্ট দিয়ে থাকে।’
তৃতীয়ত, তাদের যে পোস্ট ভাইরাল হয়েছে ‘স্কুল ভবন ধসে’ পড়া সংক্রান্ত সেটিতে লেখা হয়েছিল: ‘A school building will collapse leaving lots of kids l!veless. We see a terrible disaster fast coming, This will be as a result of poor maintenance on the building. We shall do everything in our power to avert this terrible catastrophe we’ve seen coming.’
‘এখানে কোনোভাবেই বাংলাদেশের নাম উল্লেখ নেই। আর বাংলাদেশে আজ যে ঘটনা ঘটেছে তাতে স্কুল ভবন ধসে পড়েনি। ভবনের ওপর বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। যারা মারা গেছেন কেউ ভবনের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কারণে মারা যাননি। মারা গেছেন বিমান বিস্ফোরিত হয়ে লাগা আগুনে। ফলে এটা কোনোভাবেই বলার সুযোগ নেই যে, ওই পেজে বাংলাদেশের এই ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল।’
চতুর্থত, এই পেজটি যে একটি স্ক্যামার জুয়াড়ি গ্রুপ দ্বারা পরিচালিত তা স্পষ্ট হচ্ছে তাদের ওই পোস্টটি বাংলাদেশে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে। ভাইরাল হওয়ার প্রথম দিকেও পেজটির ট্রান্সপারেন্সি সেকশন চেক করে দেখা গেছে এটি ৩টি দেশ থেকে চালানো হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে অ্যামেরিকার হাওয়াই দ্বীপ, আরেকটি নাইজেরিয়া এবং তৃতীয়ত দেশের নাম অ্যাডমিন প্রকাশ করেনি।’
‘পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর তাদের পেজের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠায় অ্যাডমিনদের অবস্থানকারী দেশের তথ্য তারা হাইড করে দিয়েছে। আফ্রিকায় নাইজেরিয়া অনলাইন জুয়াড়িদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। জুয়ার প্রমোশনমূলক ওদের একটা পুরনো ভিডিওতে একজন আফ্রিকানকে দেখা গেছে। অর্থাৎ এটির সঙ্গে নাইজেরিয়ান জুয়াড়িদের কানেকশন থাকার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে।’
‘তাদের পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পরে যখন বুঝতে পেরেছে তারা বাংলাদেশিদের অ্যাটেনশন পাচ্ছে (বিক্ল থেকে তাদের ফলোয়ার ২ লাখের কাছাকাছি থেকে ৩ লাখের ওপরে উঠেছে) তখন একের পর এক বাংলাদেশ বিষয়ক পোস্ট দেয়া শুরু করেছে। এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভয়ঙ্কর কিছু বাংলাদেশের মার্কেটগুলোতে ঘটবে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছে।
‘একই সঙ্গে তাদের আরও নানান জুয়ার পেজ প্রমোট করা শুরু করেছে বাংলাদেশি নতুন ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে। আহ্বান জানাচ্ছে দ্রুত ফলোয়ার হওয়ার জন্য। এই পেজটি ফলো করে জানি না কতজন অনলাইন জুয়ায় ঝুঁকে ফতুর হয়। এমনিতেই বাংলাদেশে অনলাইন জুয়া নানানভাবে বাড়ছে।’