৪৬ হাজার বছর ‘ঘুমিয়ে থাকা’ প্রাণীকে জাগালেন বিজ্ঞানীরা

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ৩০ ২০২৩, ১২:৫৪

হিমায়িত মাটিতে পাওয়া নেমাটোড নামের এক ক্ষুদ্র প্রাণীকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

হিমায়িত মাটিতে পাওয়া নেমাটোড নামের এক ক্ষুদ্র প্রাণীকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

সাইবেরিয়ার উত্তরের কোলিমা নদীর তীর থেকে পারমোফ্রস্ট বা হিমায়িত মাটিতে পাওয়া নেমাটোড নামের একটি ক্ষুদ্র প্রাণীকে বিজ্ঞানীরা ৪৬০০০ বছরের ‘নিদ্রা’ থেকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন।

মাইক্রোস্কোপিক নেমাটেডগুলোকে খুঁজে পাওয়ার পরে গবেষকরা তাদের অ্যানিমেশন বা নিদ্রা থেকে সফলভাবে জাগিয়ে তোলেন। এক রেডিওকার্বন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রাগৈতিহাসিক যুগে নিয়ান্ডারথাল এবং ভয়ানক নেকড়েদের বিচরণের সময় এসব আণুবীক্ষণিক প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল পৃথিবীতে। এরা প্যানাগ্রোলাইমাস কোলিমেনসিস নামে একটি বিলুপ্ত প্রজাতির অন্তর্গত, যা এতদিন অজানা ছিল বিজ্ঞানীদের।

পিএলওএস জেনেটিক্স জার্নালে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘বিস্ময়কর আবিষ্কারটি প্রাণীদের বিবর্তন প্রক্রিয়া বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কোনো প্রজন্মের টিকে থাকার সময়কাল দিন থেকে সহস্রাব্দ পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে। কিছু প্রজাতির প্রাণীর দীর্ঘমেয়াদে বেঁচে থাকার ফলে বিলুপ্ত প্রজাতিটি আবার ফিরে আসতে পারে।

মাদারবোর্ডকে পাঠানো এক ইমেইলে ইউনিভার্সিটি অফ কোলনের এভলুশনারি বায়োলজিস্ট ফিলিপ শিফার লিখেছেন, ‘এদের (নেমাটেড) বিবর্তন আক্ষরিক অর্থে ৪০ হাজার বছর ধরে থমকে ছিল।’

শিফার বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ান আউটব্যাকে ফিল্ডওয়ার্ক পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন এদের একই প্রজাতির অন্যান্য নমুনার সঙ্গে তুলনা করছি। আমার দল বিশ্বজুড়ে নমুনা সংগ্রহ করছে। তাদের জিনোম অধ্যয়ন করে আমরা গত ৪০ হাজার বছরে এই প্রজাতি কীভাবে আলাদা হয়েছে সে সম্পর্কে অনেক কিছু বোঝার আশা করছি।’

নেমাটোডস বা রাউন্ডওয়ার্মস হচ্ছে স্কুইগলি প্রাণীর একটি অত্যন্ত অভিযোজনযোগ্য গোষ্ঠী, যা সাধারণত আণুবীক্ষণিক হয়ে থাকে। এরমধ্যে অল্প কিছু প্রজাতি খালি চোখে দৃশ্যমান হয়। অনেক নেমাটোড ‘ক্রায়োবায়োসিস’ অবস্থায় থেকে হিমায়িত তাপমাত্রায় বেঁচে থাকার ক্ষমতা অর্জন করেছে। এ প্রক্রিয়ায় তারা মূলত তাদের বিপাকীয় ক্ষমতা বন্ধ করে দেয় এবং নিষ্ক্রিয় কুঁড়িতে রূপান্তরিত হয়। পরে অনুকূল পরিস্থিতিতে এরা পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা প্রাগৈতিহাসিক আমলের অনেক জীবকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এর মধ্যে একটি ব্যাকটিরিয়া প্রজাতি রয়েছে, যা কমপক্ষে ২৫ মিলিয়ন বছর আগে বসবাস করত। নতুন এ গবেষণায় যুক্ত কয়েক গবেষক এর আগে পারমাফ্রস্ট রাশিয়ার ইয়াকুটিয়া অঞ্চলে পাওয়া নেমাটোড পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন যেগুলোর বয়স সম্ভবত ৪১০০০ বছর।

এখন শিফার ও তার সহকর্মীরা সাইবেরিয়ান পারমাফ্রস্টে পি কোলিমেনসিস আবিষ্কারের সঙ্গে সময়সীমা আরও কয়েক হাজার বছর বাড়িয়েছেন। নমুনায় প্রাচীন উদ্ভিদের রেডিওকার্বন বিশ্লেষণ অনুসারে, কোলিমা নদীর তীরবর্তী উত্তর মেরুর গফারদের গর্তে সংরক্ষিত পারমাফ্রস্ট থেকে ৪৫,৮৩৯ থেকে ৪৭,৭৬৯ বছর আগের নেমাটোডগুলো পাওয়া গেছে।

নেমাটোডগুলো বরফ যুগের শেষের দিকের এবং মানব সভ্যতার উত্থানের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরেও আধুনিক পরিবেশে ঘোরাফেরা এবং প্রজনন শুরু করার জন্য খুব বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। দলটি পরীক্ষাগারে পি কোলিমেনসিসের ১০০টিরও বেশি প্রজন্মকে লালন-পালন করেছে। প্রতিটি নতুন প্রজন্ম প্রায় আট থেকে ১২ দিন স্থায়ী হয়।

শিফার বলেন, ‘মূলত আপনাকে কিছু ব্যাকটেরিয়া, আর্দ্রতা এবং ঘরের তাপমাত্রাসহ একটি কালচার (আগর) প্লেটে কৃমিগুলোকে উপযুক্ত পরিবেশে আনতে হবে। এরা তখন শুধু হামাগুড়ি দিতে শুরু করে। এরপর আবার প্রজনন শুরু করে। এদের ক্ষেত্রে প্রজনন আরও সহজ, কারণ এটি একটি অযৌন প্রজাতি। এদের পুরুষদের খুঁজে বের করে মিলিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এরা কেবল ডিম তৈরি করতে শুরু করে যা পরে নতুন প্রজন্মের বিকাশ ঘটায়।

একটি প্রাণী একটি ভূতাত্ত্বিক যুগের জন্য ঘুমিয়ে যেতে পারে তারপর আবার জেগে উঠে বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে শুরু করতে পারে।

শিফার উপসংহারে বলেন, ‘ক্রিপ্টোবায়োসিস জীবন ও মৃত্যুর আন্তঃপর্যায়ে রয়েছে। এটি প্রজাতিগুলোকে খুব চরম পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। প্রক্রিয়াটি অধ্যয়ন করে আমরা জেনেটিক এবং জৈব রাসায়নিক স্তরের প্রজাতিগুলি কীভাবে এটি করে তা বুঝতে পারি। স্বাভাবিকভাবেই অনেক আবাসস্থল অনুপুযুক্ত হয়ে ওঠার সঙ্গে আমরা বৈশ্বিক পরিবর্তনের সময় প্রজাতিগুলো কীভাবে বিকশিত হতে পারে সে সম্পর্কে এখানে অনেক কিছু শিখতে পারি।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন