ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থনীতি যাচ্ছে কোন পথে?

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৩০ ২০২৫, ২২:৩৯ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৫ ২০২৫, ০:২১

অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

  • 0

ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশি অ্যামেরিকান অধ্যাপক শওকত আলী।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প অ্যামেরিকার অর্থনীতির শৃঙ্খলা একের পর এক ভাঙছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশি অ্যামেরিকান একজন অর্থনীতিবিদ।

টিবিএনের ‘আওয়ার ডেমোক্রেসি’ প্রোগ্রামের উপস্থাপক এহসান জুয়েলের করা এক প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেন ডক্টর শওকত আলী।

ট্রাম্পের এ মেয়াদে অ্যামেরিকার অর্থনীতির সামগ্রিক বাস্তবতা জানতে শওকত আলীর উদ্দেশে উপস্থাপক বলেন, ‘আপনি একজন অর্থনীতিবিদ। আপনার কাছে জানতে চাই, এই যে ট্যারিফ (শুল্ক) কিংবা ইন্টারেস্ট রেট (সুদের হার) বাড়ানো, কমানো এসব নিয়ে প্রেসিডেন্ট কথা বলছেন। আবার ট্যারিফের কারণেও দেশের অর্থনীতিতে নানা উত্থান-পতন চলছে। সবকিছু মিলিয়ে ট্রাম্প আসলে অর্থনীতিতে অ্যামেরিকাকে কোন দিকে নিতে চান এবং কোন জায়গাটাকে সুসংহত হবে বলে তিনি মনে করছেন?’

জবাবে নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শওকত আলী বলেন, ‘এ প্রশ্নগুলো আপনি যেটা করেছেন, ভেরি ইম্পরট্যান্ট একটা দেশের জন্যে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মতো সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দিক দিয়ে বা ইন টার্মস অব মিলিটারি পাওয়ার (সামরিক দিক দিয়ে), ইনফ্লুয়েন্সার অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব (বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তারকারী। যে দেশের অর্থনীতি যদি ভালো না থাকে, তাহলে স্বাভাবিকভাবে সারা দুনিয়াতে তার একটি ইমপ্যাক্ট পড়ে।

‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে কথা যেটা আপনি আগেই বলেছেন, (ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ার) জেরম পাওয়েল কিন্তু অ্যাপয়েন্টেড বাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং অর্থনীতি রাজনীতি দুটো জিনিস। এখানে অর্থনীতি যেটা চলে, দেশের নিজস্ব ডোমেস্টিক, ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক কন্ডিশনের ওপর ভিত্তি করে ডোমেস্টিক পলিসিগুলো আপনার রচনা বা প্রণয়ন করা হয়। জেরেম পাওয়েল এদিক দিয়ে রিপাবলিকান হলেও তিনি জাতীয় স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থে, অর্থনৈতিক স্বার্থে আপনার যে প্রেগম্যাটিক ডিসিশন সেটা নিচ্ছে, সেটা আমরা জানি ফেডারেল রিজার্ভ হচ্ছে অটোনোমাস বডি। তাকে হুমকি ধুমকি দিয়ে চলে না।’

‘এটা তো বাংলাদেশ না’

অ্যামেরিকায় হুমকি-ধমকিতে কাজ হয় না মন্তব্য করা শওকত আলী বলেন, ‘এটা তো আর বাংলাদেশ না যে, যা খুশি বলে দিয়ে দিলাম। তো ফলে জেরম পাওয়েল দেখেন, যেটা আপনি বলছেন, কী বলেছেন উনি? উনি এসে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন যে, আমি কারও হুমকি-ধমকিতে রেট অফ ইন্টারেস্ট আমি কমাব না।

‘আচ্ছা রেট অফ ইন্টারেস্টের বিষয়টা কী? কস্ট অফ বোরোয়িং (ঋণ গ্রহণের বিপরীতে খরচ) বলে। আপনি যখন টাকাটা নেবেন, তখন এই বোরোয়িং কস্ট যখন লোন নিচ্ছেন, তখন রেট অফ ইন্টারেস্ট যদি কম থাকে যে, বরোয়ার তার জন্য সুবিধা হয়। এবার আপনি আসেন বরোয়ার (ঋণগ্রহীতা) কারাা। আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় ইন্ডাস্ট্রিগুলোর দিকে তাকান, মাল্টিন্যাশনাল করপোরেশন, এরাই কিন্তু বরো করছে। মনে রাখবেন (ট্রাম্প) ওয়ান পয়েন্ট্ থ্রি ট্রিলিয়ন ডলার এদেরকে ডোনেট করেছিলেন ফার্স্ট টার্মে জাস্ট টু হেলপ দিস পিপল। সাধারণ মানুষের জন্য বাইডেন যেটা অলমোস্ট ওভার সেভেন ট্রিলিয়ন ডলার উনি দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ, গরিব মানুষ, মধ্যবিত্ত মানুষের জন্যে, ইকোনমিক এম্পাওয়ারমেন্টের জন্য। ট্রাম্প কিন্তু এর ধার ধারে না।’

মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা

ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশি অ্যামেরিকান অধ্যাপক শওকত আলী।

তিনি বলেন, ‘এখন যেটা তিনি (ট্রাম্প) বলছেন, তো সেটা হচ্ছে বোরোইং কস্টটাকে লোয়ারিং করার জন্য। উনি এটা করছেন। তাতে হবে কী? ইনফ্লেশন বাড়বে। আচ্ছা ইনফ্লেশন যদি বাড়ে, আমি যে কথাটা আগেই বললাম যে, বিগ ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট যারা পাওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার মাল্টিন্যাশনাল করপোরেশন, তারা হয়তো সুবিধা পাবে। তাদের সংখ্যা কত হতে পারে? টেন পারসেন্ট, টুয়েলভ পারসেন্ট, ফিফটিন পারসেন্ট, কিন্তু যখন আপনি রেট অফ ইন্টারেস্টটা কমিয়ে দিলেন ইনফ্লেশন বেড়ে গেল।

‘এর থেকে কিন্তু কেউ রেহাই পাবে না। গরিব মানুষ, মধ্যবিত্ত, যখনই সে বাজারে যাবে, হি ইজ কট (ধরাশায়ী হবে)। একটা ডিফারেন্ট আমি আপনাকে বলতে চাই। সেটা হলো ট্যারিফের একটা বিষয় হলো, আপনি দেখেন গাড়ি। নতুন যে গাড়িগুলো হচ্ছে বা আমদানিযোগ্য যে গাড়িগুলো আসছে, আপনি জানেন অলরেডি দাম বেড়ে গেছে।’

এ অধ্যাপক উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ধরেন আমি গাড়ি কিনলাম না। তাহলে আমাকে ট্যারিফ দিতে হবে না, কিন্তু ইনফ্লেশন যদি বেড়ে যায়, আমার কিন্তু চাল, ডাল, মাছ, মাংস যা বলেন শাকসবজি, এগুলোতে কিন্তু দাম বেড়ে যাবে। ওভারঅল প্রাইস লেভেল বেড়ে গেলে তখন আমি কিন্তু কট হলাম। অর্থাৎ এইটি, নাইনটি পারসেন্ট মানুষের এই দুর্ভোগ বাড়ানোর চেষ্টা করতে চাই না—এই কারণে জেরম পাওয়েল বলছে যে, আমি আপনার রেট অফ ইনফ্লেশন বেড়ে যাবে ভবিষ্যতে। আর হচ্ছে আপনার ইন্টারেস্টটা আমি কমাব না।’

জেরম পাওয়েলের সিদ্ধান্ত যথার্থ জানিয়ে শওকত আলী বলেন, ‘একটা পয়েন্ট হচ্ছে কারেক্টলি হি সেইড ইট (তিনি যথার্থ বলেছেন)। সেটা হচ্ছে ইনফ্লেশন কিন্তু আস্তে আস্তে প্রাইস লেভেলটা বাড়ছে। তার কারণ আপনি দেখেন যুক্তরাষ্ট্রের পার্সোনাল যে লোনটা নেওয়া হয় মেনলি, এটাকে আমরা ক্রেডিট লোন বলি অলমোস্ট টু ট্রিলিয়ন ক্লোজ টু ওয়ান অ্যান্ড হাফ ট্রিলিয়ন। মানে কনজ্যুমার লোন। তার মানে এই টাকাটা বরো (ধার) করা হয় আপনার খরচ, খাবার দাবার এইগুলো করার জন্য।

‘ফলে যখন দেখা গেল যে, মার্কেটে গুডস অ্যান্ড সাপ্লাই (পণ্য ও জোগান) নাই। কারণ আপনি বিদেশ থেকে তো ট্যারিফ ইম্পোজ (শুল্ক আরোপ) করে বসে আছেন। সাপ্লাই তো নাই।’

‘এগুলো যে কেন উনি করছেন?’

অ্যাপলকে অ্যামেরিকায় পণ্য উৎপাদনে ট্রাম্পের জোরাজুরির বিষয়ে অর্থনীতিবিদ শওকত আলী বলেন, ‘উনি বলছেন, যেমন অ্যাপল কম্পিউটারের কথা ধরেন। উনি বলছেন কম্পিউটার এখন তৈরি হতে হবে চায়না বা কোরিয়া বা এগুলো থেকে হবে না। তাইওয়ান থেকে হবে না; হবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আপনার অ্যাপল সিইও বলেছে যে, জাস্ট স্টার্ট আ কোম্পানি আপনার অ্যাটলিস্ট ফাইভ টু টেন ইয়ার্স আমার লাগবে। আর প্রফিট লস সেটা তো আপনার আরও কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ বছর লাগবে। ফলে আমার পক্ষে এটা সম্ভব না।

‘নট অনলি দ্যাট। তিনি আরও বলেছেন যে, এই দেশে (অ্যামেরিকা) যখন ওই পর্যায়ে আফটার সেভেন ইয়ার্স যদি আমি তৈরি করি অ্যাপল, তাহলে এই প্রোডাক্টগুলোর দাম ৩৫০০ থেকে ৪০০ ডলার হবে। এটা ভেরি ডেঞ্জারাস ভাই। এগুলো যে কেন উনি করছেন, কার যুক্তিতে করছেন? এ কারণে আমি আগেই বলেছি যে অর্থনীতি আর রাজনীতি কমপ্লিটলি ডিফারেন্ট।’

‘ট্রেড ইজ অ্যা টু ওয়ে রোডস’

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব নিয়ে লং আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির এ অধ্যাপক বলেন, ‘…আমি একটা কথা বলি, ট্রেড ইজ অ্যা টু ওয়ে রোডস (দ্বিমুখী সড়ক)। ফর এক্সামপল, বাংলাদেশ। আমরা গার্মেন্টস রপ্তানি করি যুক্তরাষ্ট্রে বিলিয়নস অফ ডলার। এখন এই রপ্তানির পরে আমরা যেটা পাই ডলার কারেন্সি, যেটাকে আমরা বলি গোল্ড কারেন্সি। অনেক সময় আমরা বলি রিজার্ভ কারেন্সি। আচ্ছা এই যদি সে ফর এক্সাম্পল, টেন বিলিয়ন ডলার আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আমরা একটা (রপ্তানি) করি।

‘যদি টারিফ বসান আপনি এবং আমি যদি বিক্রি না করতে পারি, আমার কাছে কিন্তু কোনো ইনকাম নাই। এজ এ হোল আমি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো জিনিস আমদানি করতে পারব ইনটার্মস অফ ডলার? আমি তো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উপকার করতে পারব না। আমার লসটা হচ্ছে। এগজ্যাক্টলি দিস ইজ হ্যাপিনিং রাইট নাউ অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব (বিশ্বজুড়ে এখন ঠিক এটাই হচ্ছে)।’

চীনের উদাহরণ টেনে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘চায়নার ব্যাপারেও তাই। চায়নার সাথে যে বড় ট্রেড পার্টনার তারা, চায়না যদি কোনো কিছু এক্সপোর্ট না করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, যে জিনিসগুলো, ম্যানুফ্যাকচারিং, টেকনোলজি, ফার্মাসিউটিক্যাল গুডস, ম্যানুফ্যাকচারিং গাড়ি, তারপরে আপনার এগ্রিকালচারাল গুড, সে নিবে কেন? সে দুনিয়ার অন্য জায়গা থেকে নেবে কম পয়সায় যেখানে পাওয়া যায়।

‘সুতরাং ইকোনমিক যে শৃঙ্খলা, ডিসিপ্লিনটা, উনি ব্রেক করছেন। একটার পর একটা ব্রেক করেছেন এ পর্যন্ত থ্রো প্রেসিডেনশিয়াল অর্ডার, এক্সিকিউটিভ অর্ডার এইসব করে।’