নিউ ইয়র্কে বিচার নিয়ে কেন ট্রাম্পের আপত্তি
টিবিএন ডেস্ক
এপ্রিল ৫ ২০২৩, ২১:৩০
- 0
ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় নিজের ইমেজের জন্য ক্ষতিকর তথ্য গোপনের জন্য ব্যবসায়িক তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে।
নিউইয়র্কসিটির ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মঙ্গলবার মামলার শুনানিতে তার বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। এই অভিযোগের সবগুলোই নিউ ইয়র্ক স্টেইটে নির্ধারিত ফৌজদারি অপরাধের তালিকার সর্বনিম্ন শ্রেণিভুক্ত। ট্রাম্প অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে মামলায় অভিযোগকরা হয়েছে, ট্রাম্প তার সম্পর্কে নেতিবাচকতথ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে পৌঁছাতে বাধা দেয়ার জন্যএকটি ‘ক্যাচ অ্যান্ড কিল’ স্কিম পরিচালনা করেন। এ ধরনের তথ্য চাপা দিতে তিনি অর্থ ব্যয় ও চাপ প্রয়োগ করেছেন।
সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তিন জনকে হাশ মানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন পর্নস্টার স্টর্মিড্যানিয়েলস এবং সাবেক প্লেবয় মডেল কারেন ম্যাকডুগাল। এছাড়া তিনি একজন দারোয়ানকেও হাশমানি দেন, যিনি দাবি করেছিলেন ট্রাম্পেরবিয়েবহির্ভূত একটি সন্তান রয়েছে।
একটি অভিযোগে বলা হয়, ট্রাম্প ওই দুই নারী ও দারোয়ানকে অর্থ দেয়ার জন্য তার সাবেক ফিক্সার মিশেল কোহেনের নামে চেকে সই করেন। তবে নিজের ব্যবসায়িক রেকর্ডে বলা হয়েছে, আইনি পরিষেবা পেতে কোহেনকে এই অর্থ দেয়া হয়।
আদালতেশুনানির পর ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্টঅ্যাটর্নি অ্যালভিন ব্র্যাগ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিউ ইয়র্ক স্টেইট আইনে প্রতারণার অভিপ্রায়এবং অন্য অপরাধ গোপন করতে ব্যবসায়িক রেকর্ড জালিয়াতি একটি অপরাধ।এই মামলাটি ঠিক এ বিষয়ক। এখানে বিভিন্ন অপরাধঢাকতে ৩৪টি মিথ্যা বিবৃতিদেয়া হয়েছে৷’
অ্যামেরিকার ইতিহাসে এই প্রথম একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হলেন।
ট্রাম্প টাওয়ার থেকে আদালতে যাওয়ার পথে ট্রাম্প সোশ্যালমিডিয়ায় লেখেন, ‘লোয়ার ম্যানহাটনের কোর্টহাউযের দিকে যাচ্ছি। খুব পরাবাস্তব ঘটনা মনে হচ্ছে- বাহ, তারা আমাকে গ্রেফতার করতে যাচ্ছে। বিশ্বাস করতে পারছি না, অ্যামেরিকায় এটি ঘটছে।’
তিনিআদালতে প্রবেশের পর আত্মসমর্পণ করেন। এরপর তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়।
স্থানীয়সময় বেলা আড়াইটা নাগাদবিচারক হুয়ান মার্চেনের সামনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকঅভিযোগের শুনানি শুরু হয়।
আদালত কক্ষে সংবাদকর্মীদের ঢুকতে দেয়া হলেও শুনানির ভিডিও করায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিউজ ফটোগ্রাফাররা বিচার শুরুর আগে আইনজীবীদের মাঝে বসে থাকা সাবেক প্রেসিডেন্টের কিছু ছবি তোলেন।
আদালত কক্ষের সাংবাদিকদের তথ্য অনুযায়ী, বিচারক ট্রাম্পকে বিশৃঙ্খলা না করার বিষয়ে সতর্ককরে বলেন তেমন কিছু ঘটলে তাকে বের করে দেয়া হবে। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট পুরো শুনানির মধ্যে প্রায় ১০টি বাক্য উচ্চারণ করেন।
সংক্ষিপ্তশুনানি শেষে বিচারক মার্চেন আগামী ৪ ডিসেম্বর ট্রাম্পের আদালতে হাজিরার নতুন তারিখ দেন।
ট্রাম্পেরআইনজীবী টড ব্ল্যাঞ্চ পরে সাংবাদিকদেরবলেন, ‘আমরা এই মামলায় কঠিন লড়াই করতে যাচ্ছি।’
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে নিউ ইয়র্কেরজামিন আইন অনুযায়ী সেগুলোর জন্য অভিযুক্ত কারো হেফাজতে থাকার প্রয়োজননেই। ফলে ট্রাম্পকে আলাদা করে জামিন আবেদন করতে হয়নি।
শুনানি শেষ হওয়ার পরপরই ট্রাম্প আদালতত্যাগ করেন। তিনি কালো এসইউভি বহর নিয়ে লাগার্ডিয়া বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন। এই বহরের ওপর চক্কর দিচ্ছিল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের হেলিকপ্টার।
ব্যক্তিগতবিমান তাকে ফ্লোরিডায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি ব্যক্তিগত রিসোর্ট মার-আ-লাগোতে সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির আভিযোগটি আবার কার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়। ট্রাম্প দাবি করেন, ২০২৪ সালের নির্বাচন সামনে রেখে প্রচারকে বিঘ্নিত করতেই তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে।
কয়েক শ’সমর্থকের উদ্দেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি কখনোই ভাবিনি অ্যামেরিকায় এমন কিছু ঘটতে পারে। আমার একটাই অপরাধ- সবসময় চেষ্টা করেছি এ জাতিকে সুরক্ষিত রাখতে।’
‘এটাতার সবচেয়ে আতঙ্কের স্থান’
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ উত্থাপনের খবর মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ামাত্র বাইরে অবস্থানরত ট্রাম্পবিরোধীরা করতালিতে ফেটে পড়ে।
ইয়ানভ্যালেস নামের একজন বলেন, ‘নিউ ইয়র্কের বুকে ডনাল্ড ট্রাম্পেরবিরুদ্ধে প্রথম ফৌজদারি অভিযোগের বিচার শুরুর বিষয়টি বেশ কাব্যিক।
‘এটি আমার কাছেএকটি দুর্দান্ত অনুভূতি, বিশেষ করে একজন নিউইয়র্কার হিসেবে। তিনি (ট্রাম্প) কয়েক দশক ধরে এইশহরটিকে ধ্বংস করে চলেছেন। অবশেষে নতুন ইতিহাস রচনা এবং তাকে অভিযুক্ত করার বিষয়টি সত্যিই ভালো লাগছে।’
ভ্যালেস বলেন, ‘স্থানটি তার কাছে আতঙ্কের। কারণ তিনি (ট্রাম্প) সব সময় নিউ ইয়র্কেরভালবাসা পেতে চেয়েছেন, তবে কখনওপাননি। তিনি নিম্নবিত্ত ও নিউইয়র্কের শ্রমজীবী শ্রেণিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিজের ক্যারিয়ার গড়েছেন। তাই তার বিচার দেখতে পারা আনন্দের।’
ট্রাম্পজর্জিয়ায় এবং মার-এ-লাগোতে জব্দকরা নথি সংক্রান্ত বিষয়ে কমপক্ষে আরও দুটিফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হতে পারেন।
তবেনিউ ইয়র্কবাসীদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়টি হলো, ট্রাম্পের আদালতে মুখোমুখি হওয়ার প্রথম ঘটনাটি তাদের স্টেইটেই ঘটেছে।
ট্রাম্পবিরোধীদের একজন বলেন, ‘আমি জানিতিনি নিউ ইয়র্ককে, বিশেষ করে ম্যানহাটনকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণাকরেন। এই জায়গার ইতিহাসের অংশ না হতে তিনি মরিয়া ছিলেন। তবে ম্যানহাটন ইতিহাস গড়ে ট্রাম্পকে ৩৪টি অপরাধের মুখোমুখি করেছে।’
আদালতের সামনের অন্যদিকে এডওয়ার্ড ইয়ংও কারেন লিচব্রানের মতো ট্রাম্পভক্তরা শুনানি শেষে তাদের প্রিয় প্রেসিডেন্টকে দেখার অপেক্ষায় ছিলেন।
এডওয়ার্ড বলেছিলেন, তিনি ‘দায়িত্ব ও কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে’ এখানে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি জিতবেন এবং তিনি জিতেছেন। তিনি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন। তার প্রতিশ্রুতি ছিল অ্যামেরিকার কর্মজীবী মানুষ এবং আমার মতো পুরুষ ও নারীদের সাহায্য করা।’
তিনি বলছিলেন, “আমি (ট্রাম্পের) সাহায্য পেয়েছি। এখন পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে এবং ডনাল্ড ট্রাম্প বিপদে পড়েছেন। তাকে জানতে চাই ‘স্যার আমি আপনার সাহায্য পেয়েছি। আপনার প্রতি আমাদের সমর্থন অটুট, প্রয়োজনে আমি সানন্দে আপনার জন্য গুলির সামনে বুক পেতে দেব।“
কারেনের জন্য ট্রাম্পের আত্মসমর্পণের মুহূর্তটি ‘বুক ভেঙে’ দেয়ার মতো।
তিনি বলেন, ‘যিনি আমাদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তার আঙুলের ছাপ নেয়া ও ছবি তোলার ঘটনাটি ভয়ঙ্কর। এটা অ্যামেরিকা, আমাদের মান এর চেয়ে অনেক ভালো।’
ট্রাম্প সমর্থক মার্জোরি টেলর গ্রিন অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারেন বলে একটি একটি আশংকা ছিল। কারণ তিনি দিনের শুরুতে একটি সমাবেশ করেছিলেন। তবে ট্রাম্প আদালতে যাওয়ার সময় তেমন কিছু ঘটেনি। টেলর মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য পার্কে ছিলেন।