
মাশরুম মার্ডার নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ৯ ২০২৫, ১২:১২
.jpg)
অভিযুক্ত এরিন প্যাটারসন। ছবি: ওয়ান নিউজ
- 0
ঘটনাটি ঘটেছিলো ২০২৩ সালের ২৯শে জুলাই। সেদিন এরিন প্যাটারসনের ডাইনিং টেবিলে আসলে কী ঘটেছিল, সেই রহস্য গত দুই বছর ধরে পুরো বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছে।
অবশেষে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সীমা ছাড়িয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলা ‘মাশরুম মার্ডার’ মামলায় অভিযুক্ত এরিন প্যাটারসন।
নয় সপ্তাহব্যাপী বিচারপ্রক্রিয়া শেষে তাকে তিনজনকে হত্যার দায়ে এবং আরেকজনকে হত্যাচেষ্টায় দোষী ঘোষণা করে আদালত।
অভিযুক্ত এরিন প্যাটারসন থাকতেন অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া স্টেইটের লিয়ংগ্যাথার মোরওয়েল নামক শহরের একটি দোতলা বাড়িতে। ঘটনার দিন দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন ৫০ বছর বয়সি এরিন। দাওয়াতে আমন্ত্রিত ছিলেন তার সাবেক স্বামী সিমন প্যাটারসনের পরিবার।
সিমন উপস্থিত না থাকলেও হাজির ছিলেন তার ৭০ বছর বয়সি বাবা-মা ডন ও গালি প্যাটারসন, গালির ৬৬ বছর বয়সি বোন হিথার উইকিনসন এবং তার স্বামী ইয়ান উইকিনসন। অতিথিদের জন্য বিফ ওয়েলিংটন রান্না করেন দুই সন্তানের মা এরিন ।
তবে, তিনি নিজে ওই খাবার খাননি এবং সিমনের জন্য রাখা খাবার আলাদা করে ফ্রিজে রাখেন।
দুপুরে খাওয়ার পর সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে ভর্তি হন চারজন। পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তারা বিষাক্ত ‘ডেথ ক্যাপ’ মাশরুম খেয়েছিলেন।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৃত্যু হয় ডন, গালি ও হিথারের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে থাকলেও ইয়ান উইকিনসন প্রাণে বেঁচে যান।
ঘটনার পর এরিন নিজেও দুই সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে যান। তবে তাদের শরীরে বিষের কোনও প্রমাণ মেলেনি। চিকিৎসকদের সন্দেহে পুলিশে খবর দেয়া হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য।
বিচার চলাকালে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়। নয় সপ্তাহ ধরে, জুরি বোর্ডের বিচার শেষে এরিন প্যাটারসনকে তিন জনকে হত্যা এবং একজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
এরিন গুগলে ডেথ ক্যাপ মাশরুম সম্পর্কে অনুসন্ধান করেন।তার মোবাইল লোকেশন দেখা গেছে মাশরুম সংগ্রহের পরিচিত এলাকায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, স্থানীয় একটি ডাস্টবিনে ফুড ডিহাইড্রেটর ফেলে দিচ্ছেন তিনি যেখানে বিষাক্ত মাশরুমের নমুনা মেলে।
নয় মাস ধরে চলা বিচার শেষে আদালত এরিনকে তিনটি হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করে। যদিও এরিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, পুরোটাই ছিল একটি দুর্ঘটনা।
এরিনের আইনজীবীর দাবি, তার মক্কেল মাশরুম খেতে ভালোবাসেন এবং তিনি বিভিন্ন ধরণের মাশরুম সংগ্রহ করেন। তিনি দুর্ঘটনাবশত এই বিষাক্ত মাশরুম খাবারে দিয়েছিলেন এবং পরে ভয় পেয়ে মিথ্যা বলেছেন কারণ প্রিয়জনদের এই করুন পরিণতি দেখে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সেদিন যা কিছু ঘটেছে তা একটি দুঃখজনক দুর্ঘটনা মাত্র।
তবে এরিনের আইনজীবী স্বীকার করেছেন, এরিন সেই দিনগুলিতে পুলিশকে একাধিকবার মিথ্যা বলেছিলেন।
বেঁচে ফেরা একমাত্র ব্যক্তি জুরিদের সামনে বলেন, তিনি দেখেছিলেন খাবারগুলো চারটি ছাই রঙের থালায় পরিবেশন করা হয়, আর এরিন তার খাবারটি একটি কমলা থালায় নিয়ে আসেন।
পুলিশকে সবচেয়ে হতবাক করেছে এরিনের হত্যার উদ্দেশ্য। তার প্রাক্তন স্বামী সাইমন আদালতে বলেন, ২০১৫ সালে বিচ্ছেদের পরও তাদের মধ্যে সাধারণ আলাপচারিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
আদালতের রায় অনুযায়ী এরিন হয়তো জীবনের বাকি সময় জেলে কাটাবেন।