অ্যামেরিকায় প্রতি বছর বিপুল খাদ্যের অপচয়

টিবিএন ডেস্ক

জুন ২৪ ২০২৩, ২১:৩৭

খাবার নষ্টের তালিকায়  বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে আছে অ্যামেরিকা। ছবি: সংগৃহীত

খাবার নষ্টের তালিকায় বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে আছে অ্যামেরিকা। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক মানুষ যেমন অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, অন্যদিকে ধনী দেশে অপচয় হচ্ছে প্রচুর খাবার। পৃথিবীতে প্রতিবছর চাহিদার তুলনায় বেশি খাদ্য উৎপাদন হলেও ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে।

খাবার নষ্টের তালিকায় চীন ও ভারতের পর বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে আছে অ্যামেরিকা। ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে বৃটেইন, জার্মান, ফ্রান্স, ইটালি ও সুইডেনের চেয়েও অ্যামেরিকান নাগরিকরা চেয়ে বেশি খাবার অপচয় করেন।

অ্যামেরিকায় প্রতি বছর রান্না করা খাবারের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট করা খাবারের পরিমাণ ১১৯ বিলিয়ন পাউন্ড, যা দিয়ে ১৩০ বিলিয়ন মানুষের খাবার নিশ্চিত করা সম্ভব। নষ্ট করা খাবারের দাম ৪০৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

অথচ অ্যামেরিকাতেই ১০ মিলিয়ন শিশুসহ মোট ৩৫ মিলিয়ন মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এরপরেও অ্যামেরিকনরা কেন এতো খাবার অপচয় করেন?

এই প্রশ্নের অনেক উত্তর থাকলেও মূল জবাবটি হলো আর্থ-সামাজিক বৈষম্য।

পুরো বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১.৪ বিলিয়ন খাদ্যের অপচয় হয়, সেখানে অ্যামেরিকা একাই তার উৎপাদিত খাদ্যের ৪০ শতাংশ নষ্ট করে । এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির (ইপিএ) তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর অ্যামেরিকা তার উৎপাদিত খাদ্যের ২৪ শতাংশ ল্যান্ডফিল্ডে ও ২২ শতাংশ খাবার পুড়িয়ে নষ্ট করে। একজন অ্যামেরিকান প্রতিদিন গড়ে ০.৫ কিলোগ্রাম অর্থাৎ এক পাউন্ড খাবার ফেলে দেয়।

অ্যামেরিকায় কোন ধরনের খাবার বেশি অপচয় হয়?

অ্যামেরিকায় সবচেয়ে বেশি নষ্ট হয় রুটি, যা প্রতি বছর নষ্ট হওয়া শস্যপণ্যের ৩৮ শতাংশ। এরপর রয়েছে দুধ। প্রতি বছর উৎপাদিত হওয়া দুধের ২০ শতাংশ সিংকে ফেলে দেয়া হয়। তারপর রয়েছে আলু। ৫.৮ মিলিয়ন আলু প্রতি বছর ফেলে দেয়া হয়।

অ্যামেরিকানরা প্রচুর পরিমাণে তাজা সবজি ও ফলমূল ফেলে দেয়। উৎপাদিত ফল ও সবজির অর্ধেকের বেশি অপচয় করে তারা। প্রতি বছর প্রায় ৬০ মিলিয়ন টন ফল ও সবজি ফেলে দেয়া হয়, যার ১২ শতাংশ নষ্ট করেন উৎপাদকরা এবং ভোক্তারা ২৮ শতাংশ অপচয় করেন।

ইউনাইটেড স্টেইটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার অনুযায়ী, ছুটির দিনগুলোতে খাবার অপচয়ের পরিমাণ ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অ্যামেরিকায় ছুটির দিনে থ্যাংকসগিভিং প্রোগ্রাম সবচেয়ে বেশি পালিত হয়। এ সময় অ্যামেরিকানরা ৩৫ শতাংশ মাংস অপচয় করেন, যা বছরে ৯৩ মিলিয়ন কিলোগ্রামের সমতুল্য।

তাছাড়া খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনের সময় অনেক খাদ্য অপচয় হয়।

প্রতি বছর এতো খাবার অপচয়ের কারণ কী?

খাদ্যশৃঙ্খলের পুরোটা জুড়েই খাদ্যের অপচয় হয়। তারপরেও নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে অনেক বেশি খাদ্য অপচয় হয়। বেশিরভাগ খাবারই উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত হওয়ার সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়।

এছাড়া বাড়ি, দোকান ও রেঁস্তোরায় অতিরিক্ত খাবার রান্না করে এবং পরে তা ফেলে দেয়া হয়। অনেক সময় ফসলের দাম কম হলে কিংবা উৎপাদন বেশি হলে খাবার অপচয় হয়। মাঝে মাঝে খাবারের রঙ কিংবা প্যাকেজিং ক্রেতাদের আকর্ষণ না করতে পারলেও খাবার অপচয় হয়।

৮০ শতাংশেরও বেশি অ্যামেরিকান খাবার ফেলে দেয় খাবারের লেভেলিংয়ের জন্য। সাধারণত প্যাকেটজাত খাবারে মেয়াদের লেভেলিং থাকে। এগুলোতে অনেক সময় ‘বাই সেল’ এবং ‘বেস্ট ইফ ইউজড বাই’ এসব লিখে একটি নির্ধারিত তারিখ দেয়া থাকে, যা ফেডারেল নিয়ন্ত্রিত নয়। কেবল উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের মানসম্পন্নতার মাপকাঠি অনুসারে পণ্য বিক্রি করা হয়। এতে করে লেভেলিং অনুযায়ী মেয়াদ না থাকলে পণ্যগুলো ফেলে দেয়া হয়।

এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, অ্যামেরিকানরা উৎপাদিত মাংসের ২০ শতাংশ ল্যান্ডফিল্ডে ফেলে দেয়।

খাবার অপচয় পরিবেশের উপর কী প্রভাব ফেলছে?

খাবার অপচয়ে পরিবেশের উপরও পড়ছে ক্ষতিকর প্রভাব। অপচয় করা খাবারের সমাপ্তি ঘটে ল্যান্ডফিল্ডে। ল্যান্ডফিলে বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলা হয়, যা মিথেন নির্গত করে। এর ফলে এমন গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদন হয় যা যানবাহন থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ২৮-৩৬ গুণ বেশি ক্ষতিকর।

প্রকৃতপক্ষে, ল্যান্ডফিল্ডগুলো মিথেন নির্গত করার তৃতীয় সর্বোচ্চ উৎস। ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন (এফএও) অনুসারে, বিশ্বব্যপী আট শতাংশ গ্রিনহাউস উৎপাদনের জন্য খাদ্যবর্জ্য দায়ী।

অ্যামেরিকায় জৈব বর্জ্য সবচেয়ে বেশি মিথেন নিঃসরণ করে। এর থেকে নির্গত হওয়া মিথেন ৩৭ মিলিয়ন গাড়ি বা ৪২টি কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নিঃসরিত মিথেনের সমান। তাছাড়া, অ্যামেরিকায় কৃষিকাজে অনেক পানির প্রয়োজন হয়। শুধু কৃষিকাজের জন্য ৮০শতাংশ পানি প্রয়োজন হয়। তাই উৎপাদিত খাবার নষ্ট হলে পানিরও অপচয় হয়। এর মধ্যে এমনিতেই কৃষিকাজের ক্ষেত্রে প্রতি বছর ২১-৩৩ শতাংশ পানির অপচয় হয়, যা পরিবেশের ক্ষতির কারণ।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন