দাম্পত্য বিচ্ছেদের পর কোন পথে ট্রুডো?

টিবিএন ডেস্ক

আগস্ট ৩ ২০২৩, ১২:৫৬

জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগোয়ার ট্রুডো। ছবি: সংগৃহীত

জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগোয়ার ট্রুডো। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও সোফি গ্রেগোয়ার ট্রুডো দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। এর পর থেকেই রাজধানী অটোয়ায় চ্যাটিং ক্লাসের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন: এই সিদ্ধান্ত কি ট্রুডোর রাজনৈতিক ভবিষ্যতে পরিবর্তন ঘটাবে?

ক্যানাডার সবচেয়ে বিখ্যাত এই রাজনৈতিক দম্পতি ২ আগস্ট ইন্সটাগ্রাম বার্তায় ১৮ বছরের বিবাহিত জীবন অবসানের ঘোষণা দেন।

তবে বিচ্ছেদের কারণ এখনও অজানা। ট্রুডো দম্পতিও এ সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। তারা পোস্টে বলেন, ‘অনেক অর্থবহ ও কঠিন আলোচনার পর আমরা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বরাবরের মতোই আমরা একে অপরের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বজায় রেখে পরিবার ঘনিষ্ঠ সদস্য হয়ে থাকব। আমরা যা কিছু একসঙ্গে গড়েছি, তার জন্য শ্রদ্ধা রইল। যা কিছু আমাদের গড়ে তোলার কথা, সেই কাজ চলবে।’

অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, বিচ্ছেদ ঘোষণায় লিবারেল পার্টির শীর্ষ এই নেতার দলীয় অবস্থান সম্পর্কে জল্পনা এখন কেবল বাড়বে।

কয়েক মাস আগে ট্রুডো নিশ্চিত করেছিলেন, তিনি আগামী নির্বাচনে তার লিবারেল পার্টিকে নেতৃত্ব দেয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনটি সাধারণ নির্বাচনে জয়ী এই নেতা অবিশ্বাস্যভাবে চতুর্থ ম্যান্ডেটেও জয় চেয়েছেন।

তবে অটোয়াবাসী বলছে, ‘আজ থেকে তার জীবনটি অন্যরকম দেখাচ্ছে।’

ইনোভেটিভ রিসার্চ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট গ্রেগ লাইল বলেন, ‘ট্রুডো পারিবারিক ইস্যুতে রাজনীতির খেলা থেকে সরে গেছেন। লিবারেল সরকার শুরু থেকেই সংগ্রাম করছে। প্রধানমন্ত্রী তার দলের দেখাশোনা করছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’

লাইল দাবি করেন, ট্রুডো বেশ বড় ব্যবধান নিয়ে নির্বাচনের সমর্থনে পিছিয়ে আছেন। সম্প্রতি তিনি ক্যাবিনেটে তার দলের উল্লেখযোগ্য রদবদল করেছেন। এতে দলীয় কোন্দলও তার পিছু ছাড়েনি। তার ওপর তিনি আইনত আলাদা হয়ে যাচ্ছেন এবং বাচ্চারা তার সঙ্গেই থাকছে।

লাইল বলেন, ‘ট্রুডোর জীবনের অনেক বিষয়ই আমাদের কাছে অজানা। তবে অতিরিক্ত পারিবারিক দায়িত্ব তার ওপর চাপ বাড়িয়ে তুলবে। হয়ত তিনি আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না - অবশ্য ট্রুডো কখনই প্রকাশ্যে এ ঘোষণা দেবেন না।’

তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে না দেয়া পর্যন্ত তার চলে যাওয়ার বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তার যে মুহূর্তে মনে হবে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন, তখনই তিনি অনেক কর্তৃত্ব হারাবেন। বিশেষ করে তিনি নিজের দলে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হবেন।’

লাইল দাবি করেন, ইভাঞ্জেলিক্যাল ভোট ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ খুব বেশি সমর্থন করে না। তবে ক্যানাডিয়ান মুসলিম ও শিখদের কাছ থেকে তিনি ব্যাপক সমর্থন পেয়েছেন। ফলে তার বিচ্ছেদ সম্ভবত ওই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তার রাজনৈতিক সম্পর্ককে আঘাত করবে না।

ট্রুডো ২০১৩ সাল থেকে লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে মেজরিটি গভর্নমেন্ট নিয়ে প্রথমবারের মতো ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৯ ও ২০২১ সাধারণ নির্বাচনে তিনি মাইনরিটি গভর্নমেন্টে জয় পেয়েছেন।

লাইল বলেন, ‘২০১৫ সালে জনগণ তাকে ভোট দেয়ার কারণ হলো, জনগণ ভেবেছিল ট্রুডো তাদের সংগ্রাম ও পরিস্থিতি অনুভব করেছেন। তারা আশা করেছিলেন ট্রুডোর সরকার সেই সংগ্রামে সহায়তা করবে।’

তিনি মনে করেন, ‘ট্রুডো-সোফির বিচ্ছেদ রাজনীতিতে ট্রুডোর পক্ষে সহানুভূতি নিয়ে আসতে পারে। সাধারণ নাগরিক তাদের জীবনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জীবনের মিল দেখলে নিজেদেরকে সেই কাতারে ফেলতে পারবে। এটি একটি ভালো দিক হতে পারে।’

ক্যানাডার রাজনৈতিক ইতিহাসে আট বছর ক্ষমতায় থাকার পর নেতা হিসেবে তার মেয়াদ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। দেশটির সাধারণ রাজনৈতিক প্রথা অনুযায়ী একজন দলীয় নেতা সাধারণত সর্বোচ্চ ১০ বছর নেতৃত্ব দেন।

দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও নির্বাচনে লিবারেল ক্যাবিনেটের চারজন মন্ত্রী নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বলে ব্যাপকভাবে গুঞ্জন রয়েছে। অবশ্য দলের দীর্ঘদিনের এক সংগঠক পলিটিকোকে বলেছেন, তাদের কেউই সুসংগঠিত ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রস্তুত নন।

ট্রুডো দম্পতির এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জাস্টিন ও সোফি পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে একে অপরের পাশে থাকবেন। তারা সামনের দিনগুলোতে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ব্যক্তিগত ছুটি কাটাবেন।’

অবশ্য বয়সী ক্যানাডিয়ানদের জন্য ট্রুডোর বিচ্ছেদের গল্পের বেশিরভাগই পুরোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি মাত্র।

ট্রুডোর বাবা ক্যানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ইলিয়ট ট্রুডো ও সঙ্গী মার্গারেট ১৯৭৭ সালে আলাদা হয়ে যান। তিনিও তিনটি নির্বাচনের পর ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন। পিয়েরের সন্তানরাও এরপর তার সঙ্গেই থাকত।

মার্গারেটের সঙ্গে আলাদা থাকতে শুরু করার পর থেকে হঠাৎ করেই তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। তিনি কাকে ডিনারে নিয়ে যাচ্ছেন সেটিও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হতো।

পিয়েরে ইলিয়ট ট্রুডো ও মার্গারেট ।

জো ক্লার্কের প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভদের কাছে পরাজিত হওয়ার পরে ১৯৮০ সালে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পিয়েরে ‘বিরল চতুর্থ মেয়াদে’ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

পিয়েরে এবং মার্গারেট ১৯৮৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিয়েবিচ্ছেদ করেছিলেন।

পিয়েরে ইলিয়ট ট্রুডোর ক্ষমতায় থাকার সময় তার মুখপাত্র প্যাট্রিক গোসেজ মনে করেছিলেন, মার্গারেটের সঙ্গে বিচ্ছেদ পিয়েরে ট্রুডোর দেশ পরিচালনার পারফর্ম্যান্সকে প্রভাবিত করছে কিনা তা নিয়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নেরও জবাব দিতে হয়েছিল তাকে।

তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা পুরোপুরি জানতাম পিয়েরে খুব বিচলিত ছিলেন। এমনকি কিছু সময়ের জন্য তার সঙ্গে মেলামেশা করাও কঠিন ছিল। আপনার কর্মজীবনে ব্যক্তিজীবনের কিছু প্রভাব থাকবেই। কর্মজীবনে কোনও প্রভাব না ফেলে এই বিষয়গুলো সামাল দেয়া বেশ কঠিন।’

গোসেজের ধারণা, যদি জাস্টিন ট্রুডোর বিচ্ছেদ তার ওপর চাপ সৃষ্টি করে ও তার রাজনৈতিক পারফর্ম্যান্সকে কঠিন করে তোলে, তবে এটি তাকে পিয়েরের মতোই নতুন করে ফিরে আসার সুযোগ দিতে পারে।

আবার অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ট্রুডো তার বিচ্ছেদের কারণে অসন্তুষ্ট ভোটারদের সঙ্গে নতুন করে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের সহমর্মিতা ক্ষমতায় টিকে থাকার আরেকটি পয়েন্টও হতে পারে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন