
গাজায় নিহত হওয়ার আগে আল জাজিরা সাংবাদিকের মর্মস্পর্শী বার্তা

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১১ ২০২৫, ৭:১৭

ইসরায়েলের হামলায় নিহত আল জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরীফ। ছবি: এনডিটিভি
- 0
সংবাদ সম্প্রচারের সময়, আল জাজিরার একজন উপস্থাপককে তার সহকর্মীদের মৃত্যুর খবর জানাতে গিয়ে চোখের জল সামলাতে দেখা গেছে।
গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালের কাছে ইসরায়েলি হামলায় নিহত পাঁচ সাংবাদিকের মধ্যে একজন ছিলেন আল জাজিরার সংবাদদাতা আনাস আল-শরীফ।
সামাজিক মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে নিজেই শেষ একটি বার্তা পোস্ট করেন ২৮ বছর বয়সী এই সাংবাদিক। শেষ ও দীর্ঘ সেই বার্তাটি আগেই লিখেছিলেন আল-শরীফ। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর শরীফের বন্ধু বার্তাটি তার পক্ষ থেকে পোস্ট করেন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, পোস্টটি তার ‘শেষ ইচ্ছাপত্র’ এবং যদি তার লিখিত এই কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছায় তাহলে এর অর্থ ইসরায়েল তাকে হত্যা করতে সফল হয়েছে।
শেষ বার্তায় শরীফ বলেন, ‘এটা আমার শেষ ইচ্ছা, আমার শেষ বার্তা। যদি আমার এই কথাগুলো তোমার কাছে পৌঁছায়, তাহলে জেনে রাখো যে ইসরায়েল আমাকে হত্যা করতে এবং আমার কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করতে সফল হয়েছে। আল্লাহর শান্তি, করুণা এবং আশীর্বাদ তোমাদের উপর বর্ষিত হোক। আল্লাহ জানেন জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের গলিতে ও রাস্তায় যেদিন থেকে আমি জ্ঞান-বুদ্ধি পেয়েছি, সেদিন থেকেই আমি আমার সর্বশক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে চেষ্টা করেছি যেন আমি তাদের সমর্থন এবং কণ্ঠস্বর হতে পারি।’
আল-জাজিরার এই সাংবাদিক আশা করেছিলেন তিনি অধিকৃত আশকেলনে (আল-মাজদাল) তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন। তিনি তার বার্তায় বলেন ‘আল্লাহর ইচ্ছাই সর্বোচ্চ এবং তার হুকুমই চূড়ান্ত।’
শরীফ বলেন, ‘জীবনে আমি সব ধরনের যন্ত্রনার মধ্যে দিয়ে গেছি, বহুবার প্রিয়জন হারানোর তিক্ত যন্ত্রনা ভোগ করেছি। তা সত্ত্বেও মিথ্যাচার বা বিকৃতি ছাড়াই সত্যকে অবিকলভাবে প্রকাশ করতে আমি কখনও দ্বিধা করিনি। আল্লাহ যেন তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী থাকেন যারা নীরব ছিলেন, যারা আমাদের হত্যাকে মেনে নিয়েছে, যারা আমাদের শ্বাসরোধ করেছে, আর যাদের অন্তর আমাদের শিশু ও নারীদের ছিন্নভিন্ন দেহও নাড়া দিতে পারেনি এবং যারা আমাদের জনগণের ওপর দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা হত্যা যজ্ঞ থামায়নি।’
আল-শরীফ তার শেষ বার্তায় গাজাবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন, যেন তারা নিষেধাজ্ঞার কারণে দমে না যান এবং সীমানায় আটকে না পড়েন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দৃঢ়ভাবে এগিয়ে আসুন এই দেশ ও মানুষের মুক্তির পথে, যতদিন না আমাদের দখলকৃত মাতৃভূমিতে মর্যাদা ও স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়।’
সাহসী এই সাংবাদিক তার পরিবার বিশেষ করে তার মেয়ে যাকে তিনি বড় হতে দেখেননি, তার ছেলে, স্ত্রী ও মায়ের খেয়াল রাখতে সকলের প্রতি অনুরোধ করেন।
পোস্টে তিনি বলেন, ‘যদি আমি মারা যাই, তবে আমি নীতির ওপর দৃঢ় থেকেই মারা যাচ্ছি। আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তার ফয়সালায় সন্তুষ্ট, তার সাক্ষাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস পোষন করি এবং এই বিশ্বাস রাখি আল্লাহর কাছে যা আছে সেটাই সর্বোত্তম ও চিরস্থায়ী।
বার্তার শেষে শরীফ বলেন, ‘গাজাকে ভুলবেন না। আর আমাকে ভুলে যাবেন না আপনাদের নেক দোয়ায় আমার মাগফিরাতের জন্য।’
এনডিটিভি জানিয়েছে, আল-শরীফের সাথে আল জাজিরার সংবাদদাতা মোহাম্মদ ক্রিকেহ, ক্যামেরাম্যান ইব্রাহিম জাহের, মোমেন আলিওয়া এবং মোহাম্মদ নৌফাল ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। সংবাদ সম্প্রচারের সময়, একজন উপস্থাপককে তার সহকর্মীদের মৃত্যুর খবর জানাতে গিয়ে চোখের জল সামলাতে দেখা গেছে।
হামলার পরপরই, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের লক্ষ্যবস্তু করার কথা স্বীকার করে এবং আল-শরীফ হামাসের একটি সন্ত্রাসী সেলের প্রধান হিসেবে কাজ করত বলে দাবি করে।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের সিন্ডিকেট এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।