
পৃথিবীর তৈরিতে লাগে ১০০ কোটি বছর, চীন করছে এক সপ্তাহে

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯ ২০২৫, ৭:৪৯ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৩ ২০২৫, ১৪:২৭

চীন এই শিল্পে নেতৃত্ব নিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। ছবি: ইকোপোর্টাল
- 0
কম সময়ে দেশটি এতো পরিমাণ উৎপাদন বাড়িয়েছে যা অন্য কোনো দেশ করতে পারেনি।
প্রাকৃতিক হীরা তৈরি হতে পৃথিবীর গভীরে কয়েক শ কোটি বছর সময় লাগে। তবে চীনে এখন ল্যাবে হীরা তৈরি করা সম্ভব, যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় নিখুঁত মানের হীরায় পরিণত হয়।
২০২২ সালে চীনের ল্যাবে উৎপাদিত হীরার পরিমাণ কয়েকশো ক্যারাট পর্যন্ত পৌঁছেছে।
যেহেতু এই হীরা আর বিরল নয়, তাই প্রশ্ন উঠছে—ল্যাব-নির্মিত হীরার এই উৎপাদন প্রকৃত হীরার বাজার মূল্যকে কি প্রভাবিত করবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদিও মান প্রায় নিখুঁত, তবে প্রাকৃতিক হীরার ঐতিহ্য, রেয়ারিটি এবং বাজারের চাহিদা এখনও প্রভাব রাখে।বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, ল্যাব হীরা দ্রুত উৎপাদিত হলেও এটি মূল্য কমাবে না, বরং হীরার চাহিদার ধরন পরিবর্তন করতে পারে।
প্রাকৃতিক হীরা পৃথিবীর প্রায় ১৫০-২০০ কিলোমিটার গভীরে তৈরি হয়। এখানে চরম চাপ ও তাপের কারণে কয়েক শ কোটি বছর ধরে কার্বন পরমাণু একত্রিত হয়ে ক্রিস্টাল কাঠামো গঠন করে, যা আমরা হীরার আকারে ব্যবহার করি।
প্রাকৃতিক হীরার অনন্যতা কেবল বয়সে সীমাবদ্ধ নয়। এরা ধীরে ধীরে গঠিত হয়েছে। কার্বন, চাপ বা তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে হীরার বৃদ্ধি থেমেছে আবার কখনও চলেছে। এই দীর্ঘ উথান-পতনের বৃদ্ধি প্রাকৃতিক হীরাকে আরও বিরল ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
হীরাগুলোকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে আনার জন্য আগ্নেয়গিরির মাধ্যমে কিম্বার্লাইট বা ল্যাম্প্রোলাইট শিলাগুলোর উদ্গিরণ হতে হয়।
এই প্রক্রিয়ায় হীরা এমন “ডিপ টাইম’ অনুভূতির সঙ্গে গঠিত হয়, যা কয়েক দিনের মধ্যে কখনোই সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। ফলে, প্রাকৃতিক হীরা কেবল বিরলই নয়, বৈজ্ঞানিক ও নান্দনিকভাবে অসাধারণ।
চীন কীভাবে হীরা তৈরি করছে
প্রাকৃতিক হীরা তৈরি হতে পৃথিবীর কয়েক শ বছর প্রয়োজন। তবে চীনের ল্যাবের গবেষকরা কয়েক দিন বা এক সপ্তাহেই হীরা তৈরি করতে পারেন। ল্যাবে হীরা তৈরির জন্য উচ্চ চাপ ও উচ্চ তাপ (এইচপিএইচটি) মেশিন ব্যবহার করা হয়।
এই প্রযুক্তি পৃথিবীর গভীরে ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়াকে অনুকরণ করে, যাতে ছোট আকারের হীরা দ্রুত এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্যভাবে তৈরি করা যায়। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত হীরা প্রায় নিখুঁত মানের হয়, যা দ্রুত উৎপাদনের সুবিধা দেয় এবং বাজারে প্রাকৃতিক হীরার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চীন এই শিল্পে নেতৃত্ব নিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। কম সময়ে দেশটি এতো পরিমাণ উৎপাদন বাড়িয়েছে যা অন্য কোনো দেশ করতে পারেনি। চীনের অবকাঠামো এবং সমর্থন ল্যাব-ফ্যাক্টরিগুলোকে বড় পরিসরে সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করেছে।
বর্তমানে বিশ্ব বাজারের অধিকাংশ সিন্থেটিক হীরা চীনের উৎপাদিত, যা হীরার বাজার চাহিদাকে পরিবর্তন করছে এবং প্রাকৃতিক হীরার প্রথাগত উৎপাদকদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।
প্রাকৃতিক হীরার মূল্য নির্ধারণে দুটি প্রধান বিষয় হলো বয়স এবং বিরলতা। এগুলো পৃথিবীর গভীরে কয়েক শ বছর ধরে তৈরি হয় এবং বিশেষ ভূ-গঠনশাস্ত্রীয় ঘটনাগুলোর মাধ্যমে উপরের স্তরে আসে। এমন দীর্ঘ ইতিহাস কোনো ল্যাব-নির্মিত হীরায় পাওয়া যায় না।
বর্তমানে চীন এই ল্যাব-নির্মিত হীরার উৎপাদনে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং বিপুল পরিমাণ হীরা তৈরি করে বাজারে হীরার দামের চাপ সৃষ্টি করছে। তরুণ প্রজন্ম চীনের এই হীরা বেশি ব্যবহার করছে, কারণ এগুলো খননকৃত হীরার তুলনায় পরিষ্কার এবং সাশ্রয়ী।
প্রাকৃতিক হীরা সৃষ্টিতে বিলিয়ন বছর সময় নেয়, কিন্তু ল্যাব কয়েক দিনে হীরা তৈরি করতে পারে, ঠিক যেমন কৃত্রিম ফটোসিন্থেসিস থেকে শক্তি উৎপাদন। প্রাকৃতিক হীরা ঐতিহাসিক, আর ল্যাব-নির্মিত হীরা দ্রুত পাওয়া যায়।
এখন প্রশ্ন উঠছে, আমরা কি কেবল চকচকে দেখার জন্য হীরা কিনব নাকি ইতিহাস ও কাহিনীও মূল্যায়ন করব?