ডলার ও অ্যামেরিকার অর্থনীতি ঝুঁকিতে যে কারণে

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ২০ ২০২৫, ১৯:৩৯

ফেডারেল রিজার্ভ ভবনের ওপর ডলারের ছবি। গ্রাফিক্স: মার্কেট ওয়াচ

ফেডারেল রিজার্ভ ভবনের ওপর ডলারের ছবি। গ্রাফিক্স: মার্কেট ওয়াচ

  • 0

‘কোনো একজন লোকের, কোনো একজন প্রেসিডেন্টের, পলিটিক্যাল পার্টির মর্জি অনুসারে ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুসারে সিদ্ধান্ত নেয় না ফেডারল রিজার্ভ বোর্ড। তারা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে কারণে অনেক বেশি কনফিডেন্স ইন ডলার।’

অ্যামেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমাতে চেয়ারম্যান জেরম পাওয়েলকে পীড়াপীড়ি করছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। অর্থনীতির সার্বিক বাস্তবতা মাথায় রেখে ট্রাম্পের দাবি মানছেন না জেরম পাওয়েল। এমন পরিস্থিতিতে অ্যামেরিকান ডলার ও অর্থনীতির ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশি অ্যামেরিকান বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছে টিবিএন।

‘আওয়ার ডেমোক্রেসি’ প্রোগ্রামে সঞ্চালক হাবিব রহমান অ্যামেরিকার অর্থনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন করেন লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক হাসান ফেরদৌসের কাছে।

টিবিএন: সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরম পাওয়েল ব্যাক এন্ড ফোর্থ করছেন। আসলে ব্যাক এন্ড ফোর্থ বলব না। কারণ জেরম পাওয়েল উনি যেটা বলার, উনি উনার দিক থেকে বলছেন। আসলে উনাকে ক্রমাগতভাবে আক্রমণ করে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, জেরম পাওয়েল কেন ইন্টারেস্ট রেট কমিয়ে আনছেন না, যেখানে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক এবং ইইউ অনেকবার, দুই-তিনবার কমিয়েছে ইন্টারেস্ট রেট।

এটি করছেন না জেরম পাওয়েল। বিকজ জেরম পাওয়েল ইজ নট লিসেনিং টু হিম। তো এই কারণে উনি মনে করছেন যে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে প্রশ্নটি আছে, সেটি উনি শুনছেন না, কিন্তু জেরম পাওয়েল বলছেন যে, এটি করার সময়টি এখন নয় এবং এটি করতে হলে আরও তথ্য আমাদের কাছে আসতে হবে।

আরেকটি শঙ্কার কথা উনি ব্যক্ত করেছেন, যদি এটি করেন তাহলে ইউএস ডলার খুব আনস্টেবল (অস্থিতিশীল) হয়ে যাবে এবং এটির ব্যাপক একটি প্রভাব পড়তে পারে ইউএস ইকোনমি, মিডল ক্লাস এবং লো ইনকাম পিপলের ওপরে। এটি যদি আমাদেরকে একটু ব্যাখ্যা করেন আপনি। কেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ রকম আত্মঘাতী করার ব্যাপারটিতে ক্রমাগতভাবে প্রেশার দিচ্ছেন যেখানে উনি জানেন এটির ফল হিতে বিপরীত হতে পারে এবং হিতে বিপরীত হলে এখান থেকে বের হয়ে আসা খুব মুশকিল হবে।

হাসান ফেরদৌস: আপনারা জানেন যে, জেরম পাওয়েলকে কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্প সাহেবই অ্যাপয়েন্ট করেছেন। কেমন? তারই মনোনীত জেরম পাওয়েল এবং তাকে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া সরানো যাবে না। এটা একটা কনস্টিটিউশনাল পজিশন বলে আপনি চাইলেই তাকে সরাতে পারবেন না। অফকোর্স ইউ আর প্রেসিডেন্ট। আপনি অনেক কিছুই করেন যা নিয়ম মেনে করেন না, কিন্তু আইনত আপনার করার অধিকার নেই। আপনাকে দেখাতে হবে যে, আপনি (পাওয়েল) একটা দুর্নীতি করেছেন। ইনফ্যাক্ট একটা দুর্নীতির একটা সূত্র তিনি (ট্রাম্প) খুঁজে পেয়েছেন।

জেরম পাওয়েলের নির্দেশে ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ডের নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে এবং মাগা (মেইক অ্যামেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন) মহলে বলা হচ্ছে যে, এই ভবনের পেছনে জেরম পাওয়েলের ব্যক্তিগত স্বার্থ আছে। ফলে দে মে ইউজ ওই প্রিটেক্সটা। ওই বাহানাটা ব্যবহার করে জেরম পাওয়েলকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে দাবি করতেও পারে তারা, তবে মূল ব্যাপারটা হচ্ছে এ রকম যে, ডনাল্ড ট্রাম্প আগের টার্মেও কিন্তু দাবি করেছেন যে, ইন্টারেস্ট রেট কমাতে হবে।

ইন্টারেস্ট কমানোর মানেটা কি? ইন্টারেস্ট রেট কমানোর মানে হচ্ছে আপনি যখন জিনিসপত্র কিনবেন, দাম কমে আসবে। আপনার হাতে পয়সা বেশি হবে। আপনি ইনভেস্ট করার চেষ্টা করবেন।

লোকে বেশি খরচ করে বলে জিডিপি গ্রোথটা বাড়ে। স্পেন্ডিং বাড়া মানে কিন্তু জিডিপি গ্রোথটা বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়া। ফলটা কী হয়? আপনি যেটা একটু আগে বললেন, এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। কেমন? শর্ট টার্ম, মিডিয়াম অ্যান্ড লং টার্ম। এটা একটা দিক আর সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসবে ডলারের প্রতি। হোয়াট ইজ ডলার ইন দ্য গ্লোবাল কনটেক্সট (বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ডলার কী)?

ডলার হচ্ছে বিশ্বের এখন পর্যন্ত রিজার্ভ কারেন্সি। আমাদের দেশে (বাংলাদেশ) ২০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে। ২০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে আমাদের মানে, আমাদের টাকার অ্যাগেইনস্টে নিরাপত্তার জন্য আমরা ২০/২৫ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রাখি। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে এখন পর্যন্ত ৮৮ পারসেন্ট দেশে (কমে আসছে ক্রমান্বয়ে নানা কারণে) কিন্তু গ্লোবাল রিজার্ভ কারেন্সি হচ্ছে ডলার এবং এটা প্রধান। লোকে কেন কেনে? এই বিশ্বাস থেকে যে এই ডলারটা অনেক বেশি স্টেবল কারেন্সি এবং তার কারণটা কী? তার কারণটা আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ড।

কোনো একজন লোকের, কোনো একজন প্রেসিডেন্টের, পলিটিক্যাল পার্টির মর্জি অনুসারে ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুসারে সিদ্ধান্ত নেয় না ফেডারল রিজার্ভ বোর্ড। তারা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সে কারণে অনেক বেশি কনফিডেন্স ইন ডলার।

যদি এ কথা প্রমাণিত হয় যে, না একজন প্রেসিডেন্ট চাইলেই যেকোন সময় ইন্টারেস্ট বাড়াতে পারেন কমাতে পারেন এবং ফেডার রিজার্ভ বোর্ডের চেয়ার প্রেসিডেন্টের বা দেশের প্রধান নির্বাহীর নির্দেশে বা পরামর্শে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তাতে গ্লোবাল কনফিডেন্স হেলে পড়বে। সারা বিশ্বে যে কনফিডেন্স আছে ডলারের ওপরে, দ্যাট উইল বি লস্ট।

সারা বিশ্বে অর্থনীতিতে বড় রকমের একটা নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া ফেল ফেলবে। এটাই মূল ব্যাপার।

ট্রাম্প সাহেব কেন বারবার ইনসিস্ট করছেন রেট কমানোর জন্য? আপনারা জানেন, গত সপ্তাহে আমরা দেখেছি যে আমাদের (অ্যামেরিকা) মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, টু পয়েন্ট সেভেন পারসেন্ট এখন ইনফলেশন রাইজ করেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়া শুরু করেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে। মূল কারণ ট্যারিফ (শুল্ক)।

ট্যারিফের প্রভাব যত বাড়বে, দাম তত বাড়া শুরু করবে। ট্রাম্প সাহেব এই ভয়টা পাচ্ছেন। ট্রাম্প সাহেব কী প্রমিজ (প্রতিশ্রুতি) নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন? সব দাম কমে যাবে, তাই তো? এখন যদি দাম বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত এবং তার দলের রেপুটেশন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগামী নির্বাচন, মধ্যবর্তী নির্বাচনে তার জয়লাভের সম্ভাবনা কমে আসবে। একই ঘটনা ঘটবে উইথ ইনফ্লেশন অ্যান্ড ডলার।