
৭ লাখ বছর পর জেগে উঠছে ইরানের তাফতান আগ্নেয়গিরি

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯ ২০২৫, ৮:২৩

আগ্নেয়গিরির নিচে গ্যাসের চাপ তৈরি হচ্ছে। ছবি: নিউজ১৮
- 0
স্থানীয়দের জানান, প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের কাশ শহর থেকেও গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।
ধারণা করা হতো প্রায় ৭ লাখ ১০ হাজার বছর ধরে নিস্তেজ আছে ইরানের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত তাফতান আগ্নেয়গিরি। তবে বিজ্ঞানীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন সক্রিয় হতে যাচ্ছে এই আগ্নেয়গিরিটি।
লাইভ সায়েন্স জানায়, গত ৭ অক্টোবর জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস জার্নালের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত তাফতানের চূড়ার কাছাকাছি ভূমির একটি অংশ ৯ সেন্টিমিটার (৩.৫ ইঞ্চি) উপরে উঠেছে।
এই উত্থান এখনও কমেনি, যা ইঙ্গিত দেয় যে আগ্নেয়গিরির নিচে গ্যাসের চাপ তৈরি হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, এটি আগ্ন্যুৎপাতের আগাম ইঙ্গিত হতে পারে, তবে এখনো সরাসরি ঝুঁকি স্পষ্ট নয়।
স্প্যানিশ ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের গবেষণা কেন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ ন্যাচারাল প্রোডাক্টস অ্যান্ড অ্যাগ্রোবায়োলজির আগ্নেয়গিরিবিদ এবং গবেষণার সিনিয়র লেখক পাবলো গঞ্জালেজ বলেছেন, তাফতান আগ্নেয়গিরিকে কাছ থেকে আরও পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। কেননা আগে এটি মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হয়নি।
গবেষকরা সাধারণত ধরে নেন, কোনো আগ্নেয়গিরি যদি হোলোকোন যুগের শুরু থেকে (১১ হাজার ৭০০ বছর আগে) অগ্ন্যুৎপাত না করে, তাহলে তা মৃত বা বিলুপ্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক উত্থান এবং কার্যকলাপের কারণে, তাফতানকে মৃত না ধরে সুপ্ত বা ঘুমন্ত অবস্থায় আছে বলে উল্লেখ করেন পাবলো।
পাবলো লাইভ সায়েন্সকে বলেন, ভবিষ্যতে এটি বিস্ফোরিত হতে পারে। সেটি হয়তো জটিলভাবে, নয়তো শান্তভাবে। তবে তাত্ক্ষণিক বিস্ফোরণের কোনো আশঙ্কা নেই।
তিনি জানান, আগ্নেয়গিরিটি আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
তাফতান আগ্নেয়গিরি ১২ হাজার ৯২৭ ফুট (৩ হাজার ৯৪০ মিটার) উচ্চতার একটি স্ট্র্যাটোভলকানো। এটা মূলত আরব সাগরের ভূত্বক ইউরেশিয়ার কন্টিনেন্টের নিচে ঢুকে যাওয়ার ফলে গঠিত। মানব ইতিহাসে এর অগ্ন্যুৎপাত হওয়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গনজালেজের তত্ত্বাবধানে থাকা গবেষক মোহাম্মদ হোসেইন মোহাম্মদনিয়া ২০২০ সালে স্যাটেলাইট চিত্র পর্যালোচনা করেছিলেন। তখন তাফতান সক্রিয় নয় বলে দেখতে পান।
তবে ২০২৩ সালে স্থানীয়রা সামাজিকমাধ্যমে আগ্নেয়গিরি থেকে গ্যাস নির্গমনের খবর দিতে শুরু করেন।
স্থানীয়দের জানান, প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের কাশ শহর থেকেও গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।
মোহাম্মদনিয়া ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির সেন্টিনেল-১ স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, চূড়ার কাছাকাছি ভূমি সামান্য উঁচু হয়েছে।
মোহাম্মদনিয়া বলেন, ভূমি কেন উঁচু হচ্ছে তা আপাতত জানা সম্ভব নয়। তবে তারা এজন্য ভূমিকম্প বা বৃষ্টিকে দায়ী করেননি।
গবেষণার পরবর্তী ধাপে গ্যাস পর্যবেক্ষণকারী বিজ্ঞানীদের সহযোগিতা নেওয়া হবে বলে জানান পাবলো।
তিনি বলেন, 'মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। বরং ইরানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জন্য সতর্ক বার্তা। যেন তারা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেন।’