দুর্বল পাসপোর্টধারীদের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ হয়ে উঠছে কঠিন ও ব্যয়বহুল

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪ ২০২৫, ১২:২৫

অ্যালেক্সের ভাষায়, এটা ভ্রমণ না, মানসিক চাপ। ছবি: গ্রোক এআই

অ্যালেক্সের ভাষায়, এটা ভ্রমণ না, মানসিক চাপ। ছবি: গ্রোক এআই

  • 0

সংক্ষেপে, পাসপোর্ট শক্তিশালী না হলে ভ্রমণ শুধু ঝামেলাই নয়, মানসিকভাবে অপমানজনক অভিজ্ঞতাও হয়ে উঠতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক অ্যালেক্স সিঙ্গাপুরে থাকেন এবং কাজের পাশাপাশি ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ করেন। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় বাধা হলো দুর্বল পাসপোর্ট। এজন্য তিনি সুযোগ পেলে অন্য দেশের পাসপোর্ট নিতে দ্বিধা করবেন না।

তিনি বলেন, ‘যদি কেউ আমাকে বা আমার সন্তানদের অন্য দেশের পাসপোর্ট দিতে চাইত, আমি দ্বিধা না করে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে নিতাম।’

হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকার পাসপোর্টের অবস্থান ৫১তম। এই র‌্যাংকিং অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিকরা খুব কম দেশেই ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন, যা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে বেশ ঝামেলাপূর্ণ করে তোলে।

অ্যালেক্স বলেন, শক্তিশালী পাসপোর্টধারীরা কখনও বুঝতে পারেন না দুর্বল পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণের ঝামেলা, খরচ আর সময়ের অপচয় কতটা কঠিন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন,’অস্ট্রেলিয়া ঘুরতে যেতে হলে কেন আমাকে ১০ বছরের পাসপোর্টের প্রতিটি পাতার কপি আপলোড করতে হবে?

সম্প্রতি তিনি তার সঙ্গীকে নিয়ে ইউরোপ ঘুরতে গিয়েছিলেন। এজন্য শেনজেন ভিসা এবং যুক্তরাজ্যের ভিসা—দুটাই লাগবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ছয় সপ্তাহ লেগেছে। এই সময় তাকে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়েছে, ফলে পুরো ভিসা প্রক্রিয়ার সময়ে তিনি কোথাও ভ্রমণই করতে পারেননি।

অ্যালেক্স জানান, আগের বার ইউরোপে ভ্রমণের জন্য ভিসা করতে গিয়ে তাকে ব্যাংক স্টেটমেন্ট আনতে বলা হয়। এই শর্তটি তিনি জানতে পারেন ভিসা সেন্টারে গিয়েই।

সমস্যা হলো, সিঙ্গাপুরে তিনি যেসব ব্যাংকে যান, তাদের কেউই এই সিলমোহর দিতে রাজি ছিল না। কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর অবশেষে একটি ব্যাংক সম্মত হলেও প্রতি পাতার জন্য ১০ ডলার নিয়ে ওয়াটারমার্ক প্রিন্ট করে দেয়।

অ্যালেক্সের ভাষায়, এটা ভ্রমণ না, মানসিক চাপ। প্রতিটি ধাপে একেকটা ঝামেলা এইসব ঝামেলার পাশাপাশি প্রতিবার ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে যাওয়ার জন্য তাকে অতিরিক্ত ৫০ ডলার খরচ করতে হয়েছে।

চীনা পাসপোর্টধারী লিলি (ছদ্মনাম), জানান ভিসা অফিসাররা অহংকারী আচরণ করেছেন এবং অপমানজনক প্রশ্ন করেছেন। যার মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল, ‘তুমি কি ভিসার সময় শেষ হওয়ার পরেও দেশে থাকবে’?

ভিসা প্রক্রিয়ায় তাকে ক্রিমিনাল রেকর্ড বা তার অনুপস্থিতির প্রমাণ দিতে হয়েছে যা করতে সময় ও অতিরিক্ত খরচ দুটোই লেগেছে।

অ্যালেক্স বলেন, এত সব নিয়মের ভেতর দিয়ে যেতে এক ধরনের অপমানবোধ তৈরি হয়। তিনি আরও বলেন, দুর্বল পাসপোর্টধারী অনেকেই শিক্ষিত, দায়িত্বশীল এবং সমাজে প্রতিষ্ঠিত মানুষ। তবুও তাদের ভ্রমণের জন্য সাক্ষাৎকার দিতে হয়, নানা ধাপ পেরোতে হয়।

কিন্তু একই সময়ে শক্তিশালী পাসপোর্টধারীরা এসব কিছু ছাড়াই সহজে অনেক দেশে প্রবেশ করতে পারেন। এটা মূলত দেশগুলোর ভিসা-চুক্তির সুবিধার কারণে।

সংক্ষেপে, পাসপোর্ট শক্তিশালী না হলে ভ্রমণ শুধু ঝামেলাই নয়, মানসিকভাবে অপমানজনক অভিজ্ঞতাও হয়ে উঠতে পারে।

অ্যালেক্সের মতো লিলিও জানান, তিনি তার দেশকে ভালোবাসলেও পাসপোর্ট বদলাতে চান।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক উদ্যোক্তা পন্থ রায়ের ভাষায়, দুর্বল পাসপোর্ট মানে ভ্রমণ শুরু হওয়ার আগেই একগাদা বাধা পেরোনো।

রায় বলেন, প্রতিটি দেশের ভিসার নিয়ম এত বিস্তারিতভাবে খুঁজে বের করতে হয় যে ভ্রমণের আনন্দটাই কমে যায়। একদম হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে কোথাও যাওয়ার সুযোগই থাকে না

ইউরোপ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেছেন—তার বন্ধুরা সহজেই এক সপ্তাহের মধ্যে ফ্লাইট বুক করে ঘুরতে যেতে পারলেও তিনি পারতেন না।

কারণ, ছোট ট্রিপের জন্যও তাকে ৩ মাস আগেই পরিকল্পনা শুরু করতে হতো—ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট, কাগজপত্র প্রস্তুতি এবং অনুমোদনের সময়ের জন্য।