
ট্রাম্প-মাস্কের দুটি পথ দুটি দিকে বেঁকে গেছে যেসব কারণে

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৩০ ২০২৫, ০:৩৬ হালনাগাদ: নভেম্বর ১৪ ২০২৫, ৩:০২

প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার সদ্য সাবেক উপদেষ্টা ইলন মাস্ক। কোলাজ: মাত্রুভূমি
- 0
একসময় যিনি ছিলেন ট্রাম্পের প্রিয় ‘প্রযুক্তি উপদেষ্টা’, এখন সেই সম্পর্ক শীতল হয়ে গেছে। মাস্কের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ১০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান এখনও ট্রাম্পের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে খরচ হয়নি। আর ট্রাম্পও মাস্ককে নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন না।
শুরুটা হয়েছিল ব্যাপক হইচইয়ের মধ্য দিয়ে। শেষটা হলো হেমন্তের কালজয়ী গানের চরণ ‘আজ দুজনার দুটি পথ ওগো দুটি দিকে গেছে বেঁকে’র মতো করে।
আলোচিত কিন্তু প্রত্যাশিত ঘোষণায় ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, তিনি সরকারি কাজ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা ডোজ থেকে বিদায় ঘটেছে বেশ হতাশার মধ্য দিয়ে।
মাস্ক একসময় অ্যামেরিকার প্রশাসনিক জটিলতা বা আমলাতন্ত্রের বাধা দূর করার হাতিয়ার হিসেবে ডোজকে দেখেছিলেন।
একাধিক সাক্ষাৎকার ও নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে মাস্ক স্বীকার করেন, ওয়াশিংটনের ভেতরে বাস্তব পরিবর্তন আনা তার কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন।
আমলাতন্ত্র নিয়ে হতাশা
সরকারি খরচ কমানো, অপচয় রোধ করা এবং সিস্টেম আধুনিক করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাস্ক যখন ‘ডোজ’ শুরু করেন, তখন তিনি ভেবেছিলেন, এটা হবে একটা টেকনোলজিক্যাল মিশন। কিন্তু শিগগিরই তিনি বুঝতে পারেন, সরকারি আমলাতন্ত্রের ধীরগতি এবং জটিলতা যেন এক প্রাচীন দুর্গ—যেখানে প্রতিটি সিদ্ধান্ত নিতে বহু স্তরের অনুমোদন লাগে।
ডোজের সাবেক কর্মকর্তা বলেন, তারা ভেবেছিলেন কোড আর লজিক দিয়ে ওয়াশিংটন ঠিক করতে পারবেন। কিন্তু এখানে সিস্টেমটাই ঠিক হওয়ার মতো না।
ট্রাম্পের ব্যয় নীতির সমালোচনা
ডনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থিত একটি বিশাল ব্যয় বিল নিয়ে ইলন মাস্ক প্রকাশ্যে আপত্তি তোলেন। তিনি বলেন, এ বিল বাজেট ঘাটতি বাড়াবে এবং তার সংস্থার খরচ কমানোর প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে যাবে। মাস্ক এটাকে ‘অর্থ ব্যয়ের উৎসব’ বলে মন্তব্য করলে হোয়াইট হাউজে অস্বস্তি তৈরি হয়। অনেক রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা মাস্কের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হন। হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তাঁবুর ভেতর থেকে ঢিল ছোড়া যায় না।‘
এআই চুক্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব
ইউনাইটেড আরব আমিরাতে এআই ডেটা সেন্টার চুক্তি করে ইলন মাস্কের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। এটা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন বিলিয়নেয়ার। বিশেষ করে মাস্কে তার প্রতিষ্ঠান এক্স-এআইকে চুক্তিতে রাখার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, মাস্ক মনে করেন, তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে পাশ কাটিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এটাই ওয়াশিংটনের পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির আরেক উদাহরণ।
সম্মান ও ব্যবসার ক্ষতি
রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ফলে তার ব্যবসায়িক ব্র্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেন মাস্ক। শেয়ারহোল্ডাররাও উদ্বেগ প্রকাশ করেন, মাস্ক ব্যবসার দিকে যথেষ্ট মনোযোগ দিচ্ছেন না। মাস্ক একবার বলেন, রাজনীতিতে তিনি অনেক বেশি সময় দিয়ে ফেলেছেন। এর মধ্যে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনাও ঘটে।
ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল
একসময় যিনি ছিলেন ট্রাম্পের প্রিয় ‘প্রযুক্তি উপদেষ্টা’, এখন সেই সম্পর্ক শীতল হয়ে গেছে। মাস্কের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ১০০ মিলিয়ন ডলারের অনুদান এখনও ট্রাম্পের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে খরচ হয়নি। আর ট্রাম্পও মাস্ককে নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন না। রিপাবলিকান শিবিরের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মাস্কের সমালোচনা শুরু করেছেন।
প্রভাব নিয়ে ক্ষোভ
প্রথম দিকে ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউজে বিশেষ প্রভাব রাখতেন—ক্যাবিনেট সদস্যদের সরাসরি টেক্সট করা, প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট চাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এসব আগ্রাসী কৌশল সরকারি কার্যক্রমে অস্বস্তি তৈরি করে। কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, মাস্কের সরকারি ব্রিফিং পাওয়া ও নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবসা চালানোর মধ্যে স্বার্থের সংঘাত রয়েছে। ফলস্বরূপ, হোয়াইট হাউজ মাস্কের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, মাস্ক একজন সিইওর মতো আচরণ করছিলেন; সরকারি কর্মচারীর মতো নয়।
প্রচারে ব্যর্থতা
মাস্ক রাজনীতিতে প্রভাব বাড়াতে একাধিক নির্বাচনি প্রচারে অর্থ ঢেলেছেন। তবে ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। সবচেয়ে আলোচিত ছিল উইসকনসিন সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি প্রার্থীর পেছনে ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করা।
ওই প্রার্থী নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে হেরে যান। এক্সে মাস্ক লিখেন, রাজনীতি কেবল কঠিন নয়; ব্যয়সাপেক্ষ, নোংরা ও প্রায়শ অর্থহীন।
এক্সে দেওয়া বিদায় পোস্টে মাস্ক লিখেছেন, সরকারি কাজ ছেড়ে আবার সেই জায়গায় তিনি ফিরছেন, যেখানে নির্মাণ হয়। টেসলা স্পেস-এক্স আর এক্স-এআইয়ের এখন তার পূর্ণ সময় দরকার।
অনেকেই স্বস্তি পেয়েছেন। মাস্কের সরকারি অধ্যায় ইতিহাসে সাহসী এক পরীক্ষা হিসেবে থাকবে, না কি এটি হবে একটি শিক্ষা, তা সময়ই বলবে, তবে এটুকু নিশ্চিত, ওয়াশিংটন আবার পুরোনো ছন্দে ফিরে গেছে। আর ইলন মাস্ক আবার তার রকেট ও রোবট তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।