
৩৫ বছরে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ক্ষমতার যত পালাবদল

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৫ ২০২৫, ০:২৫ হালনাগাদ: নভেম্বর ২৮ ২০২৫, ২১:২২

নিউ ইয়র্ক সিটির দৃষ্টিনন্দন ভবনের সারি। ছবি: রয়টার্স
- 0


প্রকাশিত: নভেম্বর ৫ ২০২৫, ০:২৫ হালনাগাদ: নভেম্বর ২৮ ২০২৫, ২১:২২

নিউ ইয়র্ক সিটির দৃষ্টিনন্দন ভবনের সারি। ছবি: রয়টার্স
অ্যামেরিকার প্রাণকেন্দ্র নিউ ইয়র্ক সিটিতে ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৫ বছরে ক্ষমতার অনেক পালাবদল হয়েছে।
ডেভিড ডিনকিনসের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এ সময়কালে শহরটি চরম অপরাধের স্তর থেকে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।
এ সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে শহরের মেয়রদের গৃহীত নীতি ও তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব।
নব্বই থেকে আজ অবধি নিউ ইয়র্কের মেয়ররা শুধু শহর পরিচালনা করেননি, তারা আইনশৃঙ্খলার কঠোরতা থেকে শুরু করে সামাজিক সমতা এবং মহামারি মোকাবিলা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
ডেভিড ডিনকিনস (১৯৯০ থেকে ১৯৯৩)
নিউ ইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম আফ্রিকান অ্যামেরিকান মেয়র হিসেবে ডেভিড ডিনকিনসের কার্যকাল শুরু হয় ১৯৯০ সালে। তার প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য ছিল শহরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।
এ লক্ষ্যে তিনি ‘সেফ স্ট্রিটস, সেফ সিটি’ উদ্যোগ নেন, তবে তার সময় শহরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা ছিল প্রকট।
রুডি জুলিয়ানি (১৯৯৪ থেকে ২০০১)
রিপাবলিকান পার্টির নেতা রুডি জুলিয়ানি ১৯৯৪ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে কঠোর আইনশৃঙ্খলা নীতি চালু করেন। তার এ নীতি ‘ব্রোকেন উইন্ডোজ’ নামে পরিচিত ছিল।
এ নীতির আওতায় ছোটখাট অপরাধের ক্ষেত্রেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতো। নীতিটি অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সাহায্য করে এবং একসময়ের বিপজ্জনক নিউ ইয়র্কে নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়।
তার নেতৃত্বে চূড়ান্ত পরীক্ষা হিসেবে আসে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। সে সংকটের মুহূর্তে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়িয়ে দৃঢ় নেতৃত্ব দেওয়ায় তিনি অ্যামেরিকার মেয়র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি দুই দফা মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাইকেল ব্লুমবার্গ (২০০২ থেকে ২০১৩)
ব্যবসায়ী মাইকেল ব্লুমবার্গ ২০০২ সালে নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের দায়িত্ব নেন এবং শহরের আধুনিকায়নে বিশাল ভূমিকা রাখেন। অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, শিক্ষা, সংস্কার এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে তার প্রশাসন ছিল অত্যন্ত সক্রিয়।
তিনি প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করেন এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে খাদ্যদ্রব্যের মোড়কে ক্যালোরির তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক করেন। মাইকেল ব্লুমবার্গ ২০০৮ সিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের দুই দফার মেয়াদসীমা আইন পরিবর্তন করেন এবং তিনি তৃতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন।
পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে নতুন এক গণভোটে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দারা আবার আগের নিয়ম, তথা দুই দফা সীমাবদ্ধতা পুনঃস্থাপন করেন।
বিল ডি ব্লাজিও (২০১৪ থেকে ২০২১)
২০১৪ সালে ‘টেল অব টু সিটিজ’ স্লোগান নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন বিল ডি ব্লাজিও, যার প্রধান লক্ষ্য ছিল শহরের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য দূর করা। তার অন্যতম সফল উদ্যোগ ছিল বিনা মূল্যে প্রিকে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা।
তার দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি আঘাত হানে এবং তিনি শহর পরিচালনায় একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন।
তার প্রশাসনের শেষ ভাগ কেটেছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটের মোকাবিলায়।
তিনি দুই দফা মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এরিক অ্যাডামস (২০২২ থেকে)
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এরিক অ্যাডামস ২০২২ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে একাধিক বড় সমস্যা মোকাবিলা করেন। বিশেষ করে অপরাধ দমন, তীব্র বাসস্থান সংকট এবং অভূতপূর্ব অভিবাসী সংকট।
তিনি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিউ ইয়র্ককে আরও প্রযুক্তিনির্ভর ও নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তবে তার মেয়াদের শেষ সময় এসে ব্যাপক বিতর্কের মুখে পড়েন।
এরিক এডামস স্বাভাবিকভাবেই এবারে নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার জন্য মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তবে তার রাজনৈতিক পথটি বেশ জটিল হয়ে ওঠে।
তিনি প্রথমে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারি থেকে সরে আসেন। এরপর তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এরিক ঘুষ গ্রহণ, রাজনৈতিক তহবিল, জালিয়াতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক ফেডারেল অভিযোগের মুখে পড়েন। এসব অভিযোগ তার ভাবমূর্তি ও জনপ্রিয়তাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে মেয়র অ্যাডামস তার পুনর্নির্বাচনের প্রচার থেকে চূড়ান্তভাবে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
তার সরে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচন অন্য একটি মোড় নেয়।
তিনি ডেভিড ডিনকিনসের পর নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম মেয়র হিসেবে এক দফা দায়িত্ব পালন করেই পথ ছাড়ছেন।