পাকিস্তানে বিক্ষোভকারীদের কঠোর বার্তা সেনাবাহিনীর

টিবিএন ডেস্ক

মে ১১ ২০২৩, ০:০২

লাহোরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি বাড়িতে বিক্ষোভকারীরা হামলার পর আগুন দেয়। ছবি: এএফপি

লাহোরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকার একটি বাড়িতে বিক্ষোভকারীরা হামলার পর আগুন দেয়। ছবি: এএফপি

  • 0

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর পাকিস্তানজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা এবং সেনানিবাসে হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। ‘কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে না’ বলেও কড়া হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

ইমরান খান গ্রেফতার হএয়ার পর মঙ্গলবার অনেক বিক্ষোভকারী বিভিন্ন সেনানিবাস, জেনারেল হেডকোয়ার্টার (জিএইচকিউ) এবং ফ্রন্টিয়ার ক্রপসের অফিসের বাইরে জড়ো হয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাবাহিনীর সদরদপ্তরে ঢুকে পড়েন এবং লাহোরে একজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার বাসায় হামলা চালানো হয়। স্যোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সামরিক বাহিনীবিরোধী বক্তব্যও প্রচার করা হচ্ছে। 

এসব ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ৯ মে দেশের ইতিহাসে একটি ‘কালো অধ্যায়’ তৈরি করেছে। 

বিবৃতিতে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, ‘আমরা কাউকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে দেব না।’

সেনাবাহিনীর মিডিয়া উইংয়ের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ইমরান খানকে ‘আইন অনুসারে’ ইসলামাবাদ হাইকোর্ট এলাকা থেকে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। “এই গ্রেফতারের পরপরই সেনাবাহিনীর সম্পত্তি ও স্থাপনায় হামলা চালানো হয় এবং সেনাবাহিনী বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়।”

আইএসপিআর বলেছে, “একদিকে এই দুর্বৃত্তরা তাদের সীমিত ও স্বার্থপর উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জাতির আবেগকে উসকে দিচ্ছে এবং অন্যদিকে তারা সেনাবাহিনীর গুরুত্ব তুলে ধরে জনগণকে প্রতারিত করছে। এটি ভণ্ডামির একটি উদাহরণ।”

সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইংয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এই রাজনৈতিক পরিচয়ধারীরা ক্ষমতার লালসায় এবার যা করেছে, দেশের শত্রুরা গত ৭৫ বছরে তা করতে পারেনি।’ 

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সেনাবাহিনী ধৈর্য ও সংযম দেখিয়েছে এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নিজেদের সুনামকে পাত্তা না দিয়ে চরম সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। ঘৃণ্য পরিকল্পনার অধীনে এই পরিস্থিতি তৈরি করে সেনাবাহিনীকে উসকে দেয়ার জঘন্য প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল, যেটি ঘটলে ঘৃণ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেত।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সেনাবাহিনীর পরিপক্কতা সেই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছে। আমরা ভাল করেই জানি যে এর পিছনে কিছু অশুভ শক্তির নেতৃত্ব, নির্দেশ ছিল এবং ঘটনাটি সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত ছিল।’

বিক্ষোভের সহায়তাকারী, পরিকল্পনাকারী এবং রাজনৈতিক কর্মীদের চিহ্নিত করা হয়েছে দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে ‘আইন অনুযায়ী’ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

‘সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সামরিক ও রাষ্ট্রীয় স্থাপনা এবং সম্পত্তিসহ সেনাবাহিনীর উপর যেকোনও হামলার কঠোরভাবে বদলা নেয়া হবে এবং এর দায়ভার সেই দলটির উপরেই বর্তাবে যারা পাকিস্তানকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চায়।’ 

এদিকে সহিংস পরিস্থিতির মধ্যেই পিটিআই-এর পক্ষ থেকে পাকিস্তান ‘অচল’ করে দেয়ার ডাক এসেছে। দলের কর্মীরা দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে যাত্রার পরিকল্পনাও সাজাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ চলছে। 

ব্যাপক সহিংসতার মুখে পাকিস্তানের চার প্রদেশের তিনটিতে জরুরি আদেশ জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দেশজুড়ে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানায়, বিক্ষোভ মোকাবিলায় পাঞ্জাবে সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। প্রদেশটিতে অন্তত ১ হাজার পিটিআই কর্মীকে গ্রেফতার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বালুচিস্তান প্রদেশ কর্তৃপক্ষও সেনা মোতায়েনের জন্য কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারে অন্তত চার বিক্ষোভকারী প্রাণ হারিয়েছেন। সেখানকার লেডি রিডিং হসপিটালের মুখপাত্র মুহাম্মদ আসিমের বরাতে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, সংঘর্ষে আহত ২৫ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  

পেশোয়ারে রেডিও পাকিস্তান ভবন হামলার শিকার হয়েছে। রেডিও পাকিস্তানের মহাপরিচালক তাহির হুসাইন এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, বিক্ষোভকারীরা ভবনে হামলা চালিয়ে প্রধান গেট ভেঙে ফেলে। এরপর ভবনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। 

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আট দিনের পুলিশি হেফাজতে দিয়েছে ইসলামাবাদের একটি আদালত। ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি বিউরো এই আট দিন আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।  

দুটি মামলার শুনানির নির্ধারিত দিন মঙ্গলবার ইমরান খান হাইকোর্টে গেলে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাকে আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর তথ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ইমরান ও তার স্ত্রী একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ৫০ বিলিয়ন রুপি বৈধ করার বিনিময়ে কয়েক বিলিয়ন রুপি উৎকোচ গ্রহণ করেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইমরান খান গেট পেরিয়ে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে ঢোকার পরপরই আধা-সামরিক বাহিনী রেঞ্জার্সের সদস্যরা সাঁজোয়া যান নিয়ে সেখানে প্রবেশ করে।

সাঁজোয়া যানের বহর গেটের সামনে রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় এবং কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ইমরানকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনার পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। 


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন