জাতিসংঘ থেকে শুরু করে চীন, রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ সবাই এখন তালেবান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। মানবিক সহায়তা, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই যোগাযোগ বাড়ছে।
তালেবান ২০২১ সালে কাবুল দখলের পর আন্তর্জাতিকভাবে এখনো স্বীকৃতি না পেলেও, বাস্তব রাজনীতির কৌশলে ধীরে ধীরে তাদের ঘিরে তৈরি হচ্ছে কূটনৈতিক আগ্রহের বলয়। এক সময়ের নিষিদ্ধ, বিচ্ছিন্ন এবং আতঙ্কের নাম তালেবান। কিন্তু আজ সেই গোষ্ঠীর সঙ্গেই বিভিন্ন দেশ সরাসরি বা আড়ালে সংলাপে বসছে, এমনকি বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতেও হাত মেলাচ্ছে।
চীন কাবুলে নিজস্ব দূতাবাস চালু রেখেছে এবং আফগান খনিজ সম্পদে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। রাশিয়া তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে খোলামেলা বৈঠক করেছে মস্কোতে। ভারত ও ইরান একদিকে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে, অন্যদিকে নিজেদের সীমান্ত নিরাপত্তার কারণে তালেবান সরকারের সঙ্গে কৌশলগত সংলাপে অংশ নিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, তালেবানকে উপেক্ষা করার অর্থ আফগানিস্তানকে উপেক্ষা করা। এখন দেশটি কার্যত তালেবানের নিয়ন্ত্রণে, এবং যারা আফগানিস্তানে প্রভাব বজায় রাখতে চায়, তাদের জন্য তালেবানকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের একজন বিশ্লেষক বলেন, ‘আফগানিস্তানে তালেবান ছাড়া অন্য কোনও রাজনৈতিক শক্তি নেই এখন। কাজেই চাইলেও বিশ্ব তাদের এড়িয়ে যেতে পারছে না।’
আফগানিস্তানের সীমান্তজুড়ে চোরাচালান, অস্ত্র পাচার, জঙ্গিগোষ্ঠীর ঘাঁটি তৈরির আশঙ্কা—এসব কারণে প্রতিবেশী দেশগুলো তালেবানের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে বাধ্য হচ্ছে। চীন উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন ও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের জন্য, রাশিয়া মধ্য এশিয়ার নিরাপত্তার জন্য, এবং পাকিস্তান নিজ দেশের তালেবানপন্থী গোষ্ঠী ঠেকাতে তালেবান সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো তালেবানকে সরাসরি স্বীকৃতি না দিলেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে। দেশটিতে নারী অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলেও, সেখানকার ৪ কোটির বেশি জনগণের মানবিক প্রয়োজন মেটাতে তারা তালেবান সরকারের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয়ে যাচ্ছে।
এখনো কোনো বড় শক্তি তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু ‘ডি ফ্যাক্টো’ সরকার হিসেবে তালেবানকে মেনে নেওয়ার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। অনেকেই মনে করছেন, কিছু শর্ত পূরণ করলেই মধ্যপ্রাচ্য বা এশিয়ার কিছু দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিতে পারে।