তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সাগরের ‘স্রোত চক্রে’ বিপর্যয়

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ২৫ ২০২৩, ২১:৫৩

উত্তর মেরুতে গলে যাচ্ছে হিমবাহ। ছবি: সংগৃহীত

উত্তর মেরুতে গলে যাচ্ছে হিমবাহ। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে তবে কয়েক দশকের মধ্যে মহাসাগরগুলোর স্রোতের একটি গুরুত্বপূর্ণ চক্র ভেঙে পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ ঘটনা বৈশ্বিক আবহাওয়ার জন্য বিপর্যয়কর হবে যা ‘গ্রহের প্রত্যেককে প্রভাবিত করবে।’

নেচার জার্নালে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং কারেন্টের (এএমওসি) গালফ স্ট্রিম অংশ ২০২৫ সাল থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে ভেঙে পড়তে পারে।

এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত নন এমন বিজ্ঞানীরা সিএনএনকে বলেছেন, পুরো চক্র কখন ভেঙ্গে পড়বে (টিপিং পয়েন্ট) সেটা অনিশ্চিত। স্রোত এখন পর্যন্ত খুব কম পরিবর্তন দেখিয়েছে। তবে তারা একমত হয়েছেন যে ফলগুলি এসেছে তা উদ্বেগজনক। ভেঙ্গে পড়ার সময়টি পূর্বের ধারণার চেয়ে তাড়াতাড়ি ঘটতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

এএমওসি বিশাল বৈশ্বিক কনভেয়ার বেল্টের মতো কাজ করে। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চল থেকে উষ্ণ পানি নর্থ আটলান্টিকের দিকে পরিবহন করে যেখানে পানি শীতল হয় ও লবণাক্ত হয়ে যায়। এরপর ঠাণ্ডা পানি দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে পড়ার আগে সমুদ্রের গভীর স্তরে নেমে যায়।

এটি জলবায়ুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সঙ্গে বৈশ্বিক আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। এই ব্যবস্থা থেমে গেলে জীববৈচিত্রে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এই প্রভাবের মধ্যে রয়েছে তীব্র শীতকাল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। এগুলো ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার কিছু অংশে বিপর্যয় ডেকে আনবে। এর সঙ্গে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে বর্ষার সময় পরিবর্তন হয়ে যাবে।

বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু সংকট বৃদ্ধির সঙ্গে স্রোতের ভূমিকা সম্পর্কে সতর্ক করে আসছেন। এই স্রোতের শক্তি নির্ভর করা তাপমাত্রা এবং লবণাক্ততার ভারসাম্যকে বিঘ্নিত হওয়ারও হুমকি রয়েছে এতে।

মহাসাগর গরম হয়ে বরফ গলে যাওয়ার সঙ্গে আরও স্বাদু পানি সমুদ্রে প্রবাহিত হয় ও পানির ঘনত্ব হ্রাস করে। যখন পানি বেশি পরিষ্কার অথবা খুব উষ্ণ বা উভয়ই হয় তখন কনভেয়ার বেল্ট বা চক্র বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে ১২,০০০ বছর পূর্বে দ্রুত হিমবাহ গলে যাওয়ায় এএমওসি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে এক দশকের মধ্যে উত্তর গোলার্ধে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছিল।

উডস হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউশনের প্রেসিডেন্ট পিটার ডি মেনোকাল এ প্রসঙ্গে বলেন, স্রোত থেমে যাওয়া ‘পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে প্রভাবিত করবে। কারণ এটি এতটাই বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।’

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জাতিসংঘের আন্তঃসরকারি প্যানেলের ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে, এএমওসি এই শতাব্দীতে দুর্বল হয়ে পড়বে। তবে ২১০০ সালের আগে এর সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

নতুন গবেষণাটি আরও উদ্বেগজনক উপসংহারে এনেছে গবেষকদের।

এএমওসি ২০০৪ সাল থেকে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাই গবেষকরা আরও বেশি ডেটা পেয়েছেন। ডেটা থেকে দেখা গেছে যে জলবায়ুর পরিবর্তন ছাড়াই স্রোতের আচরণ কেমন।

বিজ্ঞানীরা ১৮৭০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১৫০ বছর ধরে গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণে উত্তর আটলান্টিকের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করেছেন।

মহাসাগরের এই অংশে এএমওসি-এর পানি ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে উত্তরে যাওয়ার জন্য উষ্ণ হয়। ডিটলেভসেন বলেন, ‘এটি শীতল হওয়ার কারণ হলো এএমওসি দুর্বল হচ্ছে।’

গবেষকরা স্রোত কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা বোঝার জন্য পানির তাপমাত্রার ওপর মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খতিয়ে দেখছেন।

তারা এএমওসিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ‘প্রাথমিক সতর্কতা সংকেত’ খুঁজে পেয়েছেন। ফলে তারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলছেন যে এটি ২০২৫ সালের প্রথম দিকে এবং ২০৯৫ সালের পরে বন্ধ বা ভেঙে যেতে পারে।

ডিটলেভসেন সিএনএনকে বলেন, ‘এটা সত্যি ভিতিকর অবস্থা। এটি এমন কিছু নয় যা আপনি হালকাভাবে কাগজে লিখে রাখবেন। আমরা আত্মবিশ্বাসী ফলটি সঠিক রয়েছে।’

ডি মেনোকাল বলেন, ‘নতুন গবেষণাটি একটি তথ্য দিয়েছে যাতে করে এটা বোঝা যাচ্ছে যে এএমওসি কখন ভেঙ্গে পড়তে পারে। এই ঘটনাটি বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবের কারণে দ্রুত ঘটবে।’

তবে তার মতে এএমওসি ভেঙে পড়ছে এমন কোনও পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ পটসড্যামের ফিজিক্স অফ দ্য ওশানসের অধ্যাপক স্টিফেন রহমস্টোর্ফ এর মতে, এই গবেষণা আগের গবেষণাকে ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করবে।

তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘এএমওসির টিপিং পয়েন্ট কোথায় রয়েছে তা নিয়ে এখনও বড় ধরণের অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে নতুন গবেষণাটি যোগ করেছে যে এটি কয়েক বছর আগে আমরা যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অনেক কাছাকাছি। এখন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হল যে আমরা আগামী এক বা দুই দশকের মধ্যে একটি টিপিং পয়েন্ট অতিক্রম করার সম্ভাবনাও অস্বীকার করতে পারি না।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন