পাকিস্তানে বসবাসরত অননুমোদিত আফগান অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অভিযানে এ বছরের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ২ লক্ষাধিক আফগান নাগরিক দেশ ছেড়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বার্তা সংস্থা এএফপিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
২০২৩ সাল থেকে পাকিস্তান সরকার অবৈধ অভিবাসীদের, বিশেষ করে আফগান নাগরিকদের, বহিষ্কারের অভিযান শুরু করে। চলতি বছর এপ্রিল মাসে নতুন করে এই অভিযান জোরদার করা হলে মাত্র এক মাসেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হন প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার আফগান। মে মাসে সেই সংখ্যা কমে ৬৭ হাজারে নামলেও জুনের প্রথম দুই দিনেই ফেরত পাঠানো হয়েছে আরও ৩ হাজারের বেশি মানুষ।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই মোট ১০ লক্ষাধিক আফগান পাকিস্তান ছেড়ে আফগানিস্তানে ফিরে গেছেন।
পাকিস্তানে কয়েক দশক ধরে বসবাস করা অনেক আফগান পরিবার, যাদের অনেকে দেশেই জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদেরও বসবাসের অনুমোদন বাতিল করে এই অভিযানের আওতায় আনা হয়েছে। ২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর কয়েক লাখ আফগান পাকিস্তানে আশ্রয় নেন, যা এই সংকটকে আরও জটিল করে তোলে।
পাকিস্তান সরকার আফগান অভিবাসীদের ‘সন্ত্রাসী ও অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও, বিশ্লেষকরা মনে করছেন—এটি মূলত সীমান্ত অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে কৌশলগত চাপ প্রয়োগের একটি অংশ। বিশেষ করে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বেলুচিস্তানে ও উত্তর-পশ্চিমে তালেবান সংশ্লিষ্ট বিদ্রোহীদের দমনে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক চাপে রয়েছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা ইরান ও পাকিস্তান থেকে আফগান নাগরিকদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি বলেছে, এই ধরণের ব্যাপক অনুপ্রবেশ আফগানিস্তানের দুর্বল পুনর্বাসন ও পুনঃএকত্রীকরণ ব্যবস্থাকে বিপদের মুখে ফেলছে।
এদিকে, পাকিস্তান সরকার হুমকি দিয়েছে যে, চলতি বছরের জুনের শেষ নাগাদ জাতিসংঘের দেওয়া ১৩ লাখ আফগান শরণার্থী কার্ডের সুরক্ষা বাতিল করা হতে পারে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আরও লাখো আফগান নাগরিককে দেশ ছাড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ায় দেশটির অভ্যন্তরে আফগান শরণার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ বেড়েছে। এর ফলে বহিষ্কার অভিযানের পক্ষে জনমতও দিন দিন জোরদার হচ্ছে।