ঘূর্ণিঝড় ‘মোকা’: আশ্রয়কেন্দ্রে হাফ মিলিয়ন মানুষ

টিবিএন ডেস্ক

মে ১৩ ২০২৩, ২১:৫১

দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বৃষ্টি, বিপজ্জনক এলাকায় সতর্কবার্তা দিতে তোলা হয়েছে লাল পতাকা। ছবি: সংগৃহীত

দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বৃষ্টি, বিপজ্জনক এলাকায় সতর্কবার্তা দিতে তোলা হয়েছে লাল পতাকা। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

বাংলাদেশে ‘মোকা’ ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের প্রায় হাফ মিলিয়ন মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

দুই দশকের মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে পারে মোকা। আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে ঘণ্টায় ১০৬ মাইল বেগে বাতাস এবং তিন দশমিক ছয় ফিট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস নিয়ে রোববার আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড়টি।

আশঙ্কা করা হচ্ছে কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী ক্যাম্পে আঘাত হানবে মোকা। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থী এই ক্যাম্পে বসবাস করছেন।

দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বৃষ্টি, বিপজ্জনক এলাকায় সতর্কবার্তা দিতে তোলা হয়েছে লাল পতাকা।

মেগাফোন দিয়ে লোকেদের আশ্রয় বা সরে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে সতর্ক করছেন কর্মকর্তারা। ছবি: রহমত উল্লাহ্‌

বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলে এগিয়ে আসায় কাছাকাছি বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাগরে জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়ার ওপর দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। 

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে স্থাপন করা হয়েছে ১,৫০০টি আশ্রয়কেন্দ্র। কক্সবাজারের কর্মকর্তারা জানান, ইতোমধ্যে একটি এলাকা থেকে ১,০০০ লোককে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি একটি ওয়ার্ড থেকে আরও ৮,০০০ লোককে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভূষণ কান্তি দাস বিবিসিকে বলেন, ‘যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত… একটি জীবনও হারাতে দিতে চাই না আমরা।’

তিনি জানান, সমুদ্র সৈকতের হোটেলে পর্যটকরা নিরাপদ থাকবেন। ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে বসবাস করা জেলে ও পরিবারগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হবে।

রোহিঙ্গাদের শরণার্থী শিবির ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেকে ভয় ও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

মোহাম্মদ রফিক ও তার পরিবার। ছবি: বিবিসি নিউয

৪০ বছর বয়সী মোহাম্মদ রফিক জানান, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। নিরাপত্তার জন্য কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, দেশে ফিরে যাওয়ার পথও বন্ধ।

তিনি বলেন, ‘আমরা আগে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। আমাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। আশা করি এবার তা হবে না।’

পাহাড়ি শিবিরে ভূমিধস নিয়মিত ঘটনা। ঘূর্ণিঝড়ের সময়কার বৃষ্টি ভূমিধসের কারণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ওই অঞ্চলের মানুষকে রক্ষায় তারা যথাসম্ভব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

শরণার্থী ও ক্যাম্প তত্ত্বাবধায়নে নিয়োজিত কর্মকর্তা এমডি শামসুল দৌজা জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ক্যাম্পের এনজিওগুলোর সঙ্গে কাজ করছেন তারা।

শরণার্থীদের ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নেয়া সহজ নয় জানিয়ে শামসুল দৌজা বলেন, ‘আমাদের বোঝা উচিত এক মিলিয়ন উদ্বাস্তুকে স্থানান্তর করা খুবই কঠিন কাজ। আমাদের পরিকল্পনা মানুষের জীবন বাঁচানো। ভারী বৃষ্টির ফলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধস হতে পারে- সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।’

এদিকে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিটওয়ে শহরে শুক্রবার রাতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ায় রাস্তাগুলো খালি পড়ে আছে। অনেকে উঁচু ভূমিতে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন। লাইফজ্যাকেট সংকটে ভুগছেন অনেকে। পেট্রল স্টেশন শনিবার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শহর থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন