ভাগনার বিদ্রোহ: জুনিয়র কমান্ডাররা ছিলেন ধোঁয়াশায়

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ২৯ ২০২৩, ১৪:৫১

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

  • 0

ভাগনার গ্রুপের নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোজিন মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়ায় বিদ্রোহ সংঘটিত করেন। তিনি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রোস্তোভে নিজের সৈন্য পাঠানোর পর মস্কোর দিকে অগ্রসর হন।

ভাগনার যোদ্ধারা খুব কমই মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। তবে বিবিসি রাশিয়ান একজন জুনিয়র কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলেছে, যিনি নিজেকে সবকিছুর মাঝখানে আবিষ্কার করেছিলেন।

তার মতে, তিনি ও তার সহযোদ্ধারা কী ঘটছে সে সম্পর্কে ‘কিছুই জানতেন না’।

গ্লেব (ছদ্মনাম) এর আগে পূর্ব ইউক্রেনের প্রতীকী শহর বাখমুতের জন্য লড়াই করেছেন। বিদ্রোহ শুরুর পরপর তিনি রাশিয়ান অধিকৃত লুহানস্ক অঞ্চলের ব্যারাকে নিজের ইউনিটের সঙ্গে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

তারা ইউক্রেন ছেড়ে ২৩ জুন ভোরে ভাগনার যোদ্ধাদের একটি দলে যোগ দেয়ার জন্য ডাক পেয়েছিলেন। এই আদেশটি ভাগনার কমান্ডারের কাছ থেকে এসেছিল। তিনি নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক, তবে তিনি প্রিগোজিন এবং ভাগনার কমান্ড কাউন্সিলের আদেশে কাজ করছিলেন।

তাকে বলা হয়েছিল, ‘এটি একটি সম্পূর্ণ সেনা মোতায়েন। আমরা একটি বিশাল দল নিয়ে যাচ্ছি, আসুন বেরিয়ে যাই।’

গ্লেব বলেছেন দলটি কোথায় যাচ্ছে তা কাউকে জানানো হয়নি। তবে তিনি অবাক হয়েছিলেন যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে তারা ফ্রন্টলাইন থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ভাগনার যোদ্ধারা রাশিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করে রোস্তোভ অঞ্চলে প্রবেশের সময় কোনো প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমি কোনো সীমান্তরক্ষীকে দেখিনি, কিন্তু পথে ট্রাফিক পুলিশ আমাদের স্যালুট জানায়।’

মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে ভাগনারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত চ্যানেলগুলো পরে দাবি করেছিল বুগায়েভকা চেকপয়েন্টে সীমান্তরক্ষীরা ওয়াগনার যোদ্ধারা পৌঁছানোর পরপরই তাদের অস্ত্র জমা রেখেছিল।

এই চ্যানেলগুলো ঘটনাস্থল থেকে একটি ছবি শেয়ার করেছে যেখানে দুই ডজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে ছদ্মবেশে দেখা গেছে।

তারা রোস্তোভ-অন-ডনের কাছে পৌঁছানোর পরপর যোদ্ধাদের শহরের সমস্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভবনগুলো ঘিরে ফেলার এবং সামরিক বিমানবন্দরটি দখলের আদেশ দেয়া হয়। ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে বলা হয় জিএলবির ইউনিটকে।

ভাগনার গ্রুপ যখন বিল্ডিংয়ের কাছাকাছি তখন সেটি পুরোপুরি তালাবদ্ধ এবং খালি ছিল বলে মনে হয়েছিল। তারা ভিতরে জীবনের কোনো চিহ্ন আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য একটি ড্রোন উড়িয়েছিল।

অবশেষে আধা ঘণ্টা পর একটি দরজা খুলে দুজন রাস্তায় নেমে আসেন।

গ্লেব বর্ণনা করেন, ‘তারা বলছিলেন বন্ধুরা আসুন একটি চুক্তি করি। আমি বললাম, চুক্তি করার কী আছে? এটা আমাদের শহর।’

রোস্তোভের সাংবাদিকরা শহর ও এর আশেপাশের অনেক সরকারি ভবনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন। ভাগনার যোদ্ধারা প্রথমে তাদের উপর দিয়ে ড্রোন উড়িয়েছে এবং তারপর তাদের ঘিরে ফেলেছে। কাউকে বের হতে দেয়া হয়নি, তবে ডেলিভারি কুরিয়ারদের খাবার নিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

ভাগনার নেতা প্রিগোজিন তখন রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সাউদার্ন মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট হেডকোয়ার্টারে রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইউনূস-বেক ইয়েভকুরোভ এবং ডেপুটি চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল ভ্লাদিমির আলেক্সিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন।

প্রিগোজিন দাবি করেছিলেন, তারা চিফ অফ জেনারেল স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুকে হস্তান্তর করতে বলেছিলেন।

একই সময়ে যখন প্রিগোজিন তার বৈঠকে ছিলেন, ভাগনার যোদ্ধাদের আরেকটি গ্রুপ তখনও অগ্রসর হচ্ছিল।

গ্লেব সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন ভাগনার প্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি উতকিন, যিনি একজন সাবেক স্পেশাল ফোর্স অফিসার। তাকে খুব কম জনসমক্ষে দেখা গেছে।

তিনি বলেন, এই দলটি ভোরোনেজের দিকে প্রধান মহাসড়কে ছিল এবং মস্কোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

তাহলে গ্লেব কি পরিকল্পনাটি জানতেন যে প্রিগোজিন কী করতে চেয়েছিলেন বা পরিকল্পনা করছিলেন?

এ প্রশ্নে তিনি শপথ করে বলেন, তার কোনো ধারণা ছিল না এ নিয়ে।

তিনি বলেন, ‘আমরা টেলিগ্রামের কাছ থেকে জেনেছি এ বিষয়ে, ঠিক যেমনটি আপনি জেনেছেন।’

দিন যাওয়ার সঙ্গে রোস্তোভে যা ঘটছে তার ছবি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকরা তাদের শহর দখল করে চুপচাপ থাকা ভাগনার যোদ্ধাদের সঙ্গে হাসছেন এবং আড্ডা দিচ্ছেন দেখে অন্যান্য লোকেরা বেশ অবাক হয়েছিল।

গত বছর ভাগনারে যুক্ত হওয়া অনেকে বন্দি বা সাজাপ্রাপ্ত উল্লেখ করায় গ্লেব বলেন, ‘এটি ছিল তাদের আগের প্রতিকূলতা। কেউ তাদের বলেনি না আসতে, কেউ তাদের যত্ন নেয়নি।’

গ্লেবের মতো প্রতিষ্ঠিত যোদ্ধাদের জন্য, যাদেরকে ইউক্রেনে যুদ্ধের অনেক আগে ভাড়া করা হয়েছিল তাদের দেখলে নিয়মগুলো আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়।

বিবিসিকে তিনি বলেন, সিনিয়র কমান্ড তাদের বলেছিলেন, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যে কথা বলবে তাকে ‘বাতিল’ করা হবে। এর মানে হচ্ছে তাকে হত্যা করা হবে। বেশ কয়েকজন সাবেক ভাগনার যোদ্ধা আমাদের একই কথা বলেছেন।

গ্লেবের সঙ্গে ২৪ জুন সন্ধ্যায় তার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যোগাযোগ করেন। কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তিনি বলেছিলেন তাকে ও তার ইউনিটকে এখন লুহানস্কের ঘাঁটিতে ফিরে যেতে হবে।

তারা ব্যারাকে ফেরার সময় টেলিগ্রামে খবরটি অনুসরণ করেছিলেন।

তারা খবরে পড়েছিলেন, প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে। তারপর তা তুলে নেয়া হয় এবং তাকে বেলারুশে নির্বাসিত হতে হয়।

তারা খবরে পড়েছিলেন, ভাগনার যোদ্ধাদের ‘যুদ্ধের যোগ্যতার’ কারণে বিদ্রোহে তাদের ভূমিকার জন্য দায়বদ্ধ হবেন না বলে মত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

গ্লেব ও তার ইউনিটের জন্য, তাদের ভবিষ্যত এখনও অস্পষ্ট। তাদের লুহানস্কের ব্যারাকে থাকতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী আদেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, তাদের হোস্ট তথাকথিত লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের কর্তৃপক্ষ পূর্ব ইউক্রেনের রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী হবে এবং তাদের সরঞ্জাম ও গোলাবারুদের কী হবে সে সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী।

ভাগনারকে ছাড়ছেন না কেন তিনি জানতে চাইলে গ্লেব একটি সহজ উত্তর দিয়েছেন, ‘আমার চুক্তির মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি।’