
ফ্লোরিডায় আইসের বিশাল অভিযান: কতজন গ্রেপ্তার, লক্ষ্য কারা

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ২ ২০২৫, ০:০০

ফ্লোরিডায় অভিযানে গ্রেপ্তার এক ব্যক্তিকে নিয়ে যাচ্ছেন আইস ও পুলিশ সদস্যরা। ছবি: আইস
- 0
ফ্লোরিডায় চালানো ওই অভিযানে এক হাজার এক শর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তারের কথা বৃহস্পতিবার জানায় প্রশাসন।
ফ্লোরিডা স্টেইটে এপ্রিল মাসে ছয় দিনব্যাপী বিশাল অভিযান চালিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। এ অভিযানে কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কাদের লক্ষ্য করে এটি চালানো হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
কতজন গ্রেপ্তার
ফ্লোরিডায় চালানো ওই অভিযানে এক হাজার এক শর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তারের কথা বৃহস্পতিবার জানায় প্রশাসন। বিতাড়ন ত্বরান্বিত করতে এ ধরনের অভিযানে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভরতা বাড়ছে।
‘একটি স্টেইটে ইতিহাসের অন্যতম বড় অভিযান’
এপ্রিলের অভিযানে ফ্লোরিডা ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন কমিশন এবং স্টেইটের ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনসের সঙ্গে বিভিন্ন কমিউনিটিতে তল্লাশি চালান ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইস কর্মকর্তারা।
আইস জানায়, এটি ছিল একটি অঙ্গরাজ্যে পরিচালিত সংস্থাটির ইতিহাসের অন্যতম বড় অভিযান।
আইসের ডেপুটি ডিরেক্টর ম্যাডিসন ডি. শেহান জানান, মডেলটি তারা সারা দেশে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা অনেক গুণে বাড়ানো যাবে।
কাদের লক্ষ্য করে অভিযান
আইস কর্মকর্তারা জানান, এ অভিযান মূলত তাদের লক্ষ্য করে পরিচালনা হয়, যাদের বিরুদ্ধে বিতাড়নের আদেশ আছে এবং যাদের অপরাধমূলক রেকর্ড রয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ব্যক্তি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ছিলেন অথবা অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আইসের চার শতাধিক চুক্তি
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ট্রাম্প প্রশাসন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিবাসন আইন প্রয়োগে সহায়তার জন্য করা চুক্তির সংখ্যা বাড়িয়েছে।
এ ছয় দিনের অভিযানে যেসব ফ্লোরিডাভিত্তিক সংস্থা অংশ নিয়েছে, তারাও এ ধরনের চুক্তিতে সই করেছে।
আইস জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে সংস্থাটি স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে চার শতাধিক চুক্তিতে সই করেছে।
এসব চুক্তি ২৮৭(জি) নামের এক কর্মসূচির অংশ। এ কর্মসূচির মাধ্যমে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ফেডারেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে অভিবাসন আইন প্রয়োগে সহযোগিতা করতে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের হেফাজতে থাকা অভিবাসীদের বিষয়ে আইসকে সহায়তা করত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে অভিবাসন-সংক্রান্ত গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয় আইস।
অভিযান নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ইমিগ্রেশন ডেটা বিশ্লেষণকারী সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটির গবেষণা অধ্যাপক অস্টিন কোচার বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর সময় থেকে আইস দুই শতাধিক এমন চুক্তি করেছে, যেগুলোর মাধ্যমে স্থানীয় কর্মকর্তারা নিজেরাই গ্রেপ্তার করতে পারেন।
তিনি বলেন, আইস দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালানোর ক্ষমতা রাখে, তবে স্থানীয় বাহিনীর নিজে থেকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা থাকলে সংস্থাটির সবচেয়ে বেশি উপকার হবে।
বাইডেন প্রশাসনের সাবেক জ্যেষ্ঠ আইস কর্মকর্তা স্কট শুচার্ট বলেন, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততা বাড়লে আইস কর্মকর্তারা বিতাড়ন প্রক্রিয়ার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ সামলানোতে মনোযোগী হতে পারবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অন্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কাজ করে ফেরত পাঠানোর জন্য ভ্রমণ-সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহ এবং ফ্লাইট প্রস্তুত করা।
শুচার্ট বলেন, যদি এ মডেল অন্য জায়গাতেও প্রয়োগ করা হয়, তাহলে আইস তাদের বিতাড়ন কার্যক্রম অনেক বাড়াতে পারবে।
অভিযান নিয়ে আপত্তি
আইসের কর্মসূচি নিয়ে আগে থেকেই আপত্তি ছিল। অ্যামেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন-এসিএলইউ এ বছর বিভিন্ন স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দেয়। এতে এ ধরনের কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
একটি চিঠিতে লেখা হয়, এসব কর্মসূচির মাধ্যমে জননিরাপত্তার ক্ষতি, স্থানীয় লোকজনের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি এবং নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস রয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ইনস্পেক্টর জেনারেল ২০১০ সালে বলেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী কাজ করেনি আইস ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
২০১২ সাল নাগাদ তৎকালীন ওবামা প্রশাসন স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে এমন ধরনের চুক্তি করা বন্ধ করে দেয়। এর লক্ষ্য ছিল ওই পুলিশ সদস্যদের অভিবাসন-সংক্রান্ত গ্রেপ্তার কার্যক্রমে সহায়তার অনুমোদন দেওয়া। ওই সময় স্থানীয় পুলিশের মূল লক্ষ্য ছিল শুধু বন্দিশালায় আটক অভিবাসীদের হস্তান্তরে সহায়তা করা।