প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যা করতে চান ট্রাম্প

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ৯ ২০২৩, ১৬:৩২

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যা করতে চান ট্রাম্প
  • 0

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার ২০২৪ সালের নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন। দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হলে অ্যামেরিকায় কী পরিবর্তন আনবেন তা সুনির্দিষ্ট করেছেন তিনি।

ট্রাম্পের নির্বাচিত হলে ইউক্রেইন যুদ্ধের অবসান ঘটানো, ১০টি নতুন শহর তৈরি, মাদক চোরাকারবারীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান তৈরিসহ নানান প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এর মধ্যে অনেক প্রতিশ্রুতিই পরিষ্কার নয় এবং কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সে ব্যাপারে অস্পষ্টতা রয়েছে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্রাম্পের দেয়া প্রতিশ্রুতি হলো:

ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ

ডনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে এক ভিডিওতে বলেন, ‘অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে ড্রাগ কার্টেলরা। সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে অ্যামেরিকার যুদ্ধ চালানোর।’

ট্রাম্প ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রচার চালানোর সময় ঘোষণা করেন, মাদক কারবারি ও মানব পাচারকারীরা তাদের ‘জঘন্য কাজের’ জন্য যাতে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পায় সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে বলবেন কংগ্রেসকে। এছাড়াও কার্টেলরা যাতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যুক্ত হতে না পারে সে ব্যাপারে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।

শিক্ষা

ট্রাম্প জানুয়ারির প্রচার ভিডিওতে শিক্ষাখাত নিয়ে কথা বলেছেন। এতে তিনি বলেন, ‘যখন আমি প্রেসিডেন্ট হব তখন আমরা বাবা-মায়েদের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেব এবং তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেব।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি সেইসব স্কুলের তহবিলে অগ্রাধিকার দেবেন এবং ‘অনুকূল আচরণ’ দেখাবেন যে স্কুলগুলো অভিভাবকদের প্রিন্সিপাল নির্বাচন করতে দেয়। একই সঙ্গে শিক্ষকদের মানসম্পন্ন পাঠদানে উৎসাহিত করতে মেধা অনুযায়ী বেতন দেয় এবং স্কুল প্রশাসকদের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগের তদারকি করে যেসব স্কুল সেগুলোর কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

ট্রাম্প প্রচারাভিযানের ভিডিওতে আরও বলেন, তিনি এমন স্কুলগুলোর তহবিল কমাবেন যেগুলো সমালোচনামূলক জাতিতত্ত্ব ও জেন্ডার আইডিওলজি শেখায়।

পরবর্তী বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেন, ১৭৭৬ কমিশনকে ফিরিয়ে আনবেন যা অ্যামেরিকানদের মূল্যবোধ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে শিশুদের কাছে প্রচার করবে। ট্রাম্পের আগের প্রশাসনে এটা চালু করেছিল।

শিক্ষা বিভাগ থেকে ‘মার্কসবাদীদের’ সরিয়ে দেয়ার অঙ্গীকারও করেছেন দিয়েছেন তিনি।

জেন্ডার কেয়ার

চলতি বছরের মার্চে কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আমাদের তরুণদের হরমোনাল পরিবর্তন ওবং যৌন অঙ্গচ্ছেদে উৎসাহ জোগানো বাইডেনের প্রতিটি নীতি বাতিল করব এবং কংগ্রেসকে ৫০টি স্টেইটে শিশুদের যৌন অঙ্গচ্ছেদ নিষিদ্ধ করতে আমার কাছে একটি বিল পাঠাতে বলব।’

ট্রাম্প একটি প্রচারাভিযানের ভিডিওতে যোগ করেন, ফেডারেল এজেন্সিগুলোর লিঙ্গ পরিবর্তনের প্রচারমূলক কর্মসূচি বন্ধে তিনি একটি নির্বাহী আদেশ জারি করবেন। পাশাপাশি কংগ্রেসকে লিঙ্গ-নিশ্চিতকরণ পদ্ধতির প্রচার এবং অর্থ প্রদান করতে বলবেন।

অপরাধ

ট্রাম্প ফেব্রুয়ারির দুটি প্রচার ভিডিওতে বলেন, ‘মার্কসবাদী’ প্রসিকিউটররা অপরাধের অভিযোগ আনতে অস্বীকার করেন এবং ‘আমাদের শহরগুলো সহিংস অপরাধীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে’, তাহলে তিনি ‘শান্তি ও জননিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে ফেডারেল আইন প্রয়োগকারীদের পাঠাতে দ্বিধা করবেন না।’

পুলিশ নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ জোরদারের প্রতিশ্রুতিও তিনি দিয়েছেন।

পররাষ্ট্র নীতি

ট্রাম্প নিউ হ্যাম্পশায়ারের একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়ার পরপরই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে ভয়ঙ্কর যুদ্ধের মীমাংসা করব।’

অন্য বক্তৃতায় ট্রাম্প বলেন যুদ্ধ শেষ করতে তার এক দিনের বেশি সময় লাগবে না। তবে কীভাবে যুদ্ধ বন্ধ করবেন সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু জানাননি ট্রাম্প। তিনি লবিস্ট ও সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া বন্ধ করবেন বলেও জানান।

অ্যামেরিকা থেকে মৌলবাদী ইসলামিক সন্ত্রাসীদের দূরে রাখতে তিনি কয়েকটি মুসলিম দেশকে দেয়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করবেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২১ সালে ট্রাম্পের এ ‘বিস্ময়কর’ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিলেন।

নতুন শহর

ট্রাম্প একাধিক প্রচারে বলেছেন তিনি সীমান্ত পুনরুদ্ধার করতে, অ্যামেরিকার স্বপ্ন পুনরুজ্জীবিত করতে, কয়েক হাজার যুবককে এবং সমস্ত পরিশ্রমী পরিবারকে বাড়ির মালিকানায় একটি নতুন সুযোগ দেওয়ার জন্য ফ্রিডম সিটিস নির্মাণের প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেবেন। যা আসলে অ্যামেরিকান ড্রিম।

তার পরিকল্পনায়, ফেডারেল সরকার ফেডারেল ভূমিতে ১০টি নতুন শহর প্রস্তাব করবে। সেগুলোর সার্বিক উন্নয়ন প্রস্তাবসহ শহর বাস্তবায়ন করবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক প্রচারে বলেছিলেন ফ্রিডম সিটিগুলি অ্যামেরিকান উৎপাদন, অর্থনৈতিক সুযোগ, নতুন শিল্প এবং সাশ্রয়ী জীবনযাত্রা আনবে।

বাণিজ্য

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্য আইনের অধীনে বলেছেন, ‘কোন দেশ অ্যামেরিকার উপর শুল্ক আরোপ করলে আমরাও তাদের উপর একই পরিমাণ শুল্ক আরোপ করব।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, অ্যামেরিকার লক্ষ্য হচ্ছে অন্যান্য দেশগুলোকে তাদের শুল্ক প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা।

ট্রাম্পের প্রস্তাবে চায়নার প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ করার পাশাপাশি চায়নাকে আমেরিকার কিছু কেনা থেকে বিরত রাখা এবং চায়নায় অ্যামেরিকান কোম্পানিগুলির বিনিয়োগ বন্ধ করার চার বছরের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

অর্থনীতি

ট্রাম্প তার নভেম্বরের নির্বাচনি প্রচারে বলেছিলেন, ‘জয়ের সঙ্গে আমরা আবার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্থনীতি গড়ে তুলব এবং এটি খুব দ্রুতই করা হবে।’

এ সময় ট্রাম্প সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি প্রস্তাব করেননি বা ব্যাখ্যা করেননি কীভাবে তিনি অর্থনীতির উন্নতি ঘটাবেন।

ট্রাম্প আরও বলেন বাইডেনের ট্যাক্স বৃদ্ধি তিনি প্রত্যাহার করবেন। মুদ্রাস্ফীতিকে তিনি ‘অবিলম্বে মোকাবিলা করবেন’।

সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট

ট্রাম্প ২০২৩ সালের এপ্রিলে ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন ইনস্টিটিউট ফর লেজিসলেটিভ অ্যাকশন লিডারশিপ ফোরামে বলেছিলেন, ‘আমি ফেডারেল সরকারকে আগ্নেয়াস্ত্র শিল্পকে টার্গেট করে বানানো বাইডেনের এক্সিকিউটিভ আদেশ আমি ছিঁড়ে ফেলব এবং প্রথম দিনেই এটিকে ফেলে দেব।’

সাবেক প্রেসিডেন্ট এক বক্তৃতায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সরকার নাগরিকদের সেকেন্ড অ্যামেন্ডমেন্ট অধিকার লঙ্ঘন করবে না।

চায়না

ট্রাম্প একটি প্রচার ভিডিওতে বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট হলে অ্যামেরিকার ভবিষ্যত অ্যামেরিকানদের হাতেই থাকবে ঠিক যেমনটা আমি আগে প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ছিল।’

ট্রাম্প অ্যামেরিকার জ্বালানি, প্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ এবং প্রাকৃতিক সম্পদে চায়নার মালিকানা সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, তিনি চায়নিজদের বর্তমান হোল্ডিং বিক্রি করতে বাধ্য করবেন যাতে তারা জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে না পারে। এ সময় তিনি বলেন ‘অর্থনৈতিক নিরাপত্তা হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা।’

ফার্মাসিউটিক্যালস

ট্রাম্প তার আগের নির্বাহী আদেশ পুনর্বহাল করতে জুনের প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, অ্যামেরিকান সরকার আমেরিকান ভোক্তাদের উপর এই বৈশ্বিক ফ্রিলোডিং একবারে বন্ধ করতে অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর মতো ওষুধের জন্য একই মূল্য প্রদান করবে।

সাবেক প্রেসিডেন্টের কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল নীতি বাইডেন বাতিল করেছেন। ট্রাম্প ভিডিওতে বলেন, তার প্রশাসনের এ নীতির জন্য অন্যান্য দেশগুলো ওষুধের সেরা দাম দেবে। এই নীতিতে ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, আমেরিকানদের জন্য খরচ কমানোর সঙ্গে অন্যান্য দেশের জন্য দাম বাড়তে পারে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন