প্যারিসে পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহত, রাস্তায় বিক্ষোভ
টিবিএন ডেস্ক
জুন ২৮ ২০২৩, ১৭:৩৬
- 0
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশের গুলিতে কিশোর নিহতের ঘটনায় রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। কাঁদাসে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। কিশোর নিহতের ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্যারিসের ননতেখে মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। প্রসিকিউশন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, নিহত ১৭ বছর বয়সী ছেলেটির নাম নায়েল এম। ঘটনার সময় ট্রাফিক পুলিশ চেক করার জন্য তার গাড়ি আটকায়। এক পর্যায়ে গুলি চালালে নায়েল ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
গাড়িটিতে আরও দুজন ছিলেন, নায়েল সেটি চালাচ্ছিলেন।
ফ্রেঞ্চ সংবাদমাধমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় যে নায়েল গাড়ি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের দিকে তেড়ে যাচ্ছিলেন। আত্মরক্ষায় পুলিশ গুলি করে।
তবে ঘটনার ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ভিন্ন তথ্য প্রকাশ হয়।
ফুটেজে দেখা গেছে, হলুদ রংয়ের গাড়ি থামিয়ে দুজন অফিসার ভেতরে থাকা চালকের সঙ্গে কথা বলছেন। এর মধ্যে একজন চালকের দিকে বন্দুক তাক করে আছেন। এক পর্যায়ে গাড়িটি চলতে শুরু করামাত্র পুলিশ অফিসার গুলি করেন। অল্প কিছদূর গিয়েই নিয়ন্ত্রণহীন গাড়িটি একটি পোস্টে লেগে আটকে যায়।
ভেতরেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় নায়েলকে। ঘটনাস্থলে তাকে মৃত ঘোষণা করে ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম। আর ভেতরে থাকা দুই আরোহীর একজন পালিয়ে যান। আরেকজন অপ্রাপ্তবয়স্ককে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়।
ভিডিও ভাইরাল হলে ন্যানতেরেবাসী প্রতিবাদে মুখর হয়। সে রাতেই রাস্তায় দফায় দফায় হয় বিক্ষোভ।
ক্ষুব্ধ লোকজন বেশ কয়েকটি গাড়ি ও রাবিশ বিনে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাসস্ট্যান্ডের ছাউনি ভাঙচুর করা হয়। স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের সামনে ব্যারিকেডেও আগুন জ্বালানো হয়।
দাঙ্গা পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। আটক করা হয় অন্তত ৩১ বিক্ষোভকারীকে।
এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ দুটি তদন্ত শুরু করেছে, একটি নায়েল হত্যাকাণ্ডের ও অন্যটি পুলিশের নির্দেশে গাড়ি না থামিয়ে চালিয়ে নেয়ার ঘটনার।
অন্যদিকে নায়েলের পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তাতে অভিযোগ করা হয়েছে, পুলিশের দিকে গাড়ি চালিয়ে নেয়া হয়েছিল বলে গুলি চালাতে হয়েছে- এমন বক্তব্য অসত্য।
নায়েলের মা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমি আমার ১৭ বছর বয়সী ছেলেকে হারিয়েছি। ছেলে ছাড়া আমার আর কেউ ছিল না। ওরা (পুলিশ) আমার বাচ্চাকে কেড়ে নিয়েছে। সে তো একটা বাচ্চা ছেলে ছিল।’
নিহতের নানিও নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমি কোনোদিন তাদের (পুলিশ) ক্ষমা করব না… আমি কারও পরোয়া করি না এখন আর… তারা আমার নাতিকে কেড়ে নিয়েছে…।’
পুলিশের এভাবে গুলি চালানো ব্যাখ্যাতীত ও অমার্জনীয় ঘটনা বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাঁক্রো।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানা বলেন, ‘আমি বলতে চাই, ভিডিও যা দেখা গেছে তা তদন্তে সত্য প্রমাণিত হলে এই ঘটনা কোনোভাবেই ন্যায়সঙ্গত বলে মেনে নেয়া যাবে না… আশা করছি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা সামনে আসবে।’
ফ্রান্সের তারকারাও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
দেশটির তারকা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে টুইটারে লিখেছেন, ‘আমার ফ্রান্সের জন্য প্রচণ্ড মর্মাহত আমি। এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ছোট্ট দেবদূতটি অকালেই চলে গেছে। তার পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রতি সহানুভূতি থাকল।’
এ ঘটনার দুই সপ্তাহ আগে পশ্চিম ফ্রান্সের অ্যনগোওলেমেতে ট্রাফিক স্টপে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৯ বছরের এক গাড়িচালক।
দেশটিতে গত বছর ১৩ জন ট্রাফিক স্টপে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।