ট্রাম্পের সম্পদের আর্থিক মূল্য কত?

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৬ ২০২৫, ২৩:৫৭

গ্রাফিক্সে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যরত চিত্র। ছবি: সিক্স স্কয়ার ফিট নিউ ইয়র্ক সিটি

গ্রাফিক্সে ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যরত চিত্র। ছবি: সিক্স স্কয়ার ফিট নিউ ইয়র্ক সিটি

  • 0

ট্রাম্পের সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসা ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং তারা তাদের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব প্রকাশ করেন না।

প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে ধনকুবের দাবি করে এলেও তিনি কী পরিমাণ অর্থসম্পদের মালিক, তা নিয়ে নিউ ইয়র্কেরঅ্যাটর্নি জেনারেলসহ সাংবাদিক ও হিসাবরক্ষকদের অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

তার সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসা ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং তারা তাদের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব প্রকাশ করেন না।

ট্রাম্পের আয়ের কিছু অংশ আসে আবাসন ব্যবসা থেকে, তবে এসব সম্পদের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন। এ ছাড়া পরিবারের সদস্য ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কিছু সম্পদের যৌথ মালিকানায় রয়েছেন তিনি। ফলে সম্পদের কোন অংশটি একান্তভাবে তার, তানির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। এরপরও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কিছু আর্থিক পরিমাণের (যেমন: শেয়ারবাজার ও ক্রিপ্টোকারেন্সি) তথ্য প্রকাশ্যে রয়েছে।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতি বছরদেওয়া বাধ্যতামূলক আর্থিক বিবরণীতে তার ব্যবসার কিছু অস্পষ্ট দিকও প্রকাশ্যে এসেছে। এতে শোধ না করা ঋণের তথ্যের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক কিছু বিচারিক সিদ্ধান্তের কথাও রয়েছে।

এসব তথ্য দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এর পেছনে মূল অবদান ক্রিপ্টো বিনিয়োগের।

ধারণা করা হচ্ছে বর্তমানে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার বা তারও বেশি হতে পারে। তবে এর বেশির ভাগই নগদ নয়। অর্থাৎ এ সম্পদ থেকে বাস্তব অর্থের হিসাব পেতে তাকে নানা বিনিয়োগ তুলে নিতে হবে এবং বিভিন্ন ব্যবসা থেকে নিজের অংশ বিক্রি করতে হবে।

ক্রিপ্টোকারেন্সি

ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রাম্প পরিবারের জন্য তুলনামূলক নতুন একটি খাত। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ট্রাম্প ক্রিপ্টো খাতের বিভিন্ন শাখায় ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করেছেন। এ খাতে তার সম্পদের আর্থিক মূল্য ৭.১ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের।

মিমকয়েন

ট্রাম্পের সম্পদের একটি বড় অংশ মাত্র ছয় মাস পুরোনো। এটি ‘মিমকয়েন’ নামে পরিচিত। একে ট্রাম্পকয়েনও বলা হয়।

জানুয়ারিতে শপথ গ্রহণের কয়েক দিন আগে তিনি এ মিমকয়েন চালু করেন।

মিমকয়েন হলো একধরনের ডিজিটাল মুদ্রা। এখন পর্যন্ত তৈরি হওয়া বেশির ভাগ ট্রাম্পকয়েনের মালিক ট্রাম্প এবং তার অংশীদাররা। হাতে থাকা এ কয়েনের মোট বাজারমূল্য দাঁড়ায় আনুমানিক ৬.৯ বিলিয়ন ডলার, তবে এই সম্পদ ‘তরল’ নয়। অর্থাৎ ট্রাম্প বর্তমানে এসব কয়েন বিক্রি করতে পারবেন না। আর একসঙ্গে বেশি পরিমাণ কয়েন বিক্রির চেষ্টা করলে এর মূল্যে ধস নামতে পারে।

তা ছাড়া এ কয়েনের মধ্যে কতটা ট্রাম্পের নিজের আর কতটা তার অংশীদারদের, সেটাও স্পষ্ট নয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মালিকানাধীন ট্রাম্পকয়েনের মূল্য ছাড়াও মিমকয়েনের প্রতিটি লেনদেন থেকে তিনি লেনদেন ফি উপার্জন করেন। এসব অর্থ ট্রাম্প পরিবার তাদের ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন।

স্টক, বন্ড ও নগদ অর্থ

ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপের আর্থিক মূল্য অন্তত ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। মিমকয়েনের পরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পদের সবচেয়ে বড় উৎস হলো ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ নামে তার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম গড়ে তোলার উদ্যোগ।

ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ নামে একটি পাবলিক কোম্পানি এটি পরিচালনা করে। ট্রাম্পের এ কোম্পানিতে থাকা শেয়ারের মোট মূল্য প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। তবে যতক্ষণ না ট্রাম্প এসব শেয়ার বিক্রি করছেন, ততক্ষণ শুধু কাগজে-কলমে এ সম্পদের মূল্য বিদ্যমান।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প মিডিয়ার শেয়ারের দাম নাটকীয়ভাবে পড়ে যায়। শেয়ারের সর্বোচ্চ দামের সময়ে কোম্পানিটিতে ট্রাম্পের মালিকানা ছিল প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ।

অন্যান্য বিনিয়োগ

২০২৪ সালে জমা দেওয়া সর্বশেষ আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের আর্থিক বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর আনুমানিক মূল্য ছিল কমপক্ষে ২৩৬ মিলিয়ন ডলার, তবে এর মাধ্যমে আসল বিবরণীর আকার জানা যায় না। কারণ আর্থিক সম্পদের বিবরণীতে সম্পদের মূল্য বিস্তৃত পরিসরে দেখানো হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস গত বছর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জমাকৃত আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণ করে তার বন্ড, নগদ অর্থ ও শেয়ার ধারণের পরিমাণ নিরূপণ করেছিল।

ট্রাম্পের প্রতিটি সম্পদের সর্বনিম্ন মূল্য বিবেচনা করা হলে তার পোর্টফোলিওর প্রায় ৬০ শতাংশ বন্ডে বিনিয়োগ করা আছে বলে প্রতীয়মান হয়, যেখানে নগদ অর্থ এবং অনুরূপ বিনিয়োগ প্রায় ৩০ শতাংশ। আর শেয়ারের অংশ ১০ শতাংশেরও কম। সর্বনিম্ন মানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের বন্ড বিনিয়োগের প্রায় ৮০ শতাংশই মিউনিসিপ্যাল বন্ডে।

গত বছর ট্রাম্পের শেয়ার, বন্ড এবং নগদ অর্থের বিনিয়োগ থেকে অন্তত ১৩০ মিলিয়ন ডলারের লভ্যাংশ ও সুদ আয় হয়েছে।

আবাসন ও অন্যান্য ব্যবসায়িক সম্পদ

ট্রাম্প ক্রিপ্টো মুদ্রার দুনিয়ায় প্রবেশের আগে থেকেই তার মোট সম্পদের বড় একটি অংশ আসত আবাসন ব্যবসা থেকে। হোটেল, আবাসিক ভবন, গলফ ক্লাব ও বাণিজ্যিক টাওয়ারের মতো সম্পদ থেকে তিনি আয় করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব ব্যবসায় ওঠানামা চললেও এখনও ট্রাম্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস এগুলো।

ট্রাম্পের আবাসন সম্পদের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ আর্থিক বিবরণীতে তিনি শুধু আনুমানিক মূল্য উল্লেখ করে থাকেন।

সর্বশেষ বিবরণীতে তিনি ১৯টি ভিন্ন স্থাবর সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলোর প্রতিটির মূল্য ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও তিনি কোনো সর্বোচ্চ মূল্য উল্লেখ করেননি।

সব মিলিয়ে ট্রাম্প তার আবাসন ও অন্যান্য ব্যবসায়িক সম্পদের সর্বনিম্ন মূল্য ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বলে উল্লেখ করেছেন। সে হিসাবে ট্রাম্প মিডিয়া ও ওয়ার্ল্ড লিবার্টির হিসাব ধরা হয়নি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল অভিযোগতুলেছেন, ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার লক্ষ্যে তিনি নিজের আবাসন সম্পদের মূল্য ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িয়ে দেখিয়েছেন।

রয়্যালটি

রয়্যালটি থেকে ২০২৪ সালে ট্রাম্প অন্তত ১১ মিলিয়ন ডলার আয় করেন । প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার নাম ব্যবহার করে নানা ভোক্তা পণ্যের বিপণনে অংশ নিয়েছেন। এসব পণ্যের বিপণন চুক্তি থেকে তিনি নিয়মিত রয়্যালটি পেয়ে থাকেন।

ঋণ ও সুদের পরিমাণ

ট্রাম্পের ঋণ আছে ৬৪০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। এর সঙ্গে রয়েছে সুদও। আবাসনে অন্য যেকোনো বিনিয়োগকারীর মতো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পেরও বিভিন্ন সম্পত্তির বিপরীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ রয়েছে।

মামলার রায়ের দায়

ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় ঋণের উৎস তার সাম্প্রতিক আইনি বিপর্যয়। নিউ ইয়র্কেরঅ্যাটর্নি জেনারেলের দায়ের করা এক দেওয়ানি মামলায় আদালত তার বিরুদ্ধে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ আদায়ের রায় দেয়। এসব মামলায় আদালতে একের পর এক পরাজয়ের পর ট্রাম্পকে আপিল করার সুযোগ পেতে ‘অ্যাপিলেট বন্ড’ হিসেবে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের জামানত দিতে হয়েছে। এর ফলে আপিল চলাকালে তিনি ক্ষতিপূরণ পরিশোধ থেকে সাময়িক ছাড় পেয়েছেন।

এ বন্ড সংগ্রহের জন্য ট্রাম্পকে নিজের বিপুল পরিমাণ সম্পদ বন্ধক রাখতে হয়েছে, তবে শেষ পর্যন্ত যদি ট্রাম্প আপিলে হেরে যান, তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণের সম্পূর্ণ অর্থের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে সুদও পরিশোধ করতে হবে।