বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মসনদে বুলবুল, ফারুকে অনাস্থা কেন?

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৩০ ২০২৫, ১৪:৪৫

ফারুক আহমেদ ও আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ফাইল ছবি

ফারুক আহমেদ ও আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ফাইল ছবি

  • 0

দুই দিনের নাটকীয়তার পর চমকপ্রদ পটপরিবর্তনের পথ ধরে ফারুক আহমেদের জায়গায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান হলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

নয় মাস আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি পদে দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। তখন তাকে ঘিরে ছিল উচ্চাশা, পেশাদারিত্বের আশা, আর ক্রিকেট কাঠামোয় পরিবর্তনের প্রত্যাশা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই আস্থা যেন ভেঙে পড়েছে। অবশেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নেতৃত্বে এল নতুন পরিবর্তন—সভাপতির আসনে বসলেন আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। প্রশ্ন উঠেছে-এত দ্রুত কেন বিদায় নিতে হলো ফারুক আহমেদকে?

২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের পর বিসিবিতে নেতৃত্ব পরিবর্তনের পর ফারুক আহমেদকে আনা হয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটা থেকে বোর্ড পরিচালক হিসেবে। পরে পরিচালকদের সমর্থনে তিনি নির্বাচিত হন বোর্ড সভাপতি। একজন সাবেক অধিনায়ক হিসেবে তার অভিজ্ঞতা এবং নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি নিয়ে অনেকেই ছিলেন আশাবাদী।

নয় মাস পেরোতেই বোর্ডের ভেতরে-বাইরে শুরু হয় ফিসফাস। বোর্ড পরিচালনায় দুর্বলতা, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বিলম্ব, স্ট্যান্ডিং কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগের ঘাটতি, এবং মাঠপর্যায়ে কাঠামোগত সংস্কারের অভাব-সব মিলিয়ে তৈরি হয় অসন্তোষ।

বিশেষ করে হাই পারফরম্যান্স ইউনিট ও গেম ডেভেলপমেন্ট উইং কার্যত নেতাহীন অবস্থায় চলে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, মাঠপর্যায়ের উন্নয়নের চেয়ে কথার ফুলঝুরিতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন ফারুক।

বিসিবির এফডিআর অন্য ব্যাংকে সরানো, বোর্ডের অভ্যন্তরে ‘ঘনিষ্ঠ মহল’ গড়ে তোলার অভিযোগও এসেছে। এছাড়া তার অতীত রাজনৈতিক সংযোগ নিয়ে ঘনীভূত হয়েছে অনাস্থা-যদিও তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কোনো ফ্যাসিস্ট শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক নেই।’

কিন্তু বোর্ডে তার বিরুদ্ধে আস্থার সংকট এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে, কিছু পরিচালক প্রকাশ্যেই তার পদত্যাগ দাবি করতে শুরু করেন। এই পরিস্থিতিতে বোর্ড পরিচালকদের একাংশ প্রস্তাব করেন, বোর্ডের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ফেরাতে এবং ক্রিকেট উন্নয়নের গতি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন নতুন নেতৃত্ব। আলোচনার পর সমঝোতায় উঠে আসে আরেক সাবেক অধিনায়কের নাম-আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

বোর্ডের অভিজ্ঞ এবং ‘মধ্যমপন্থী’ নেতা হিসেবে বুলবুলের ভাবমূর্তি এবং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কও তাকে এগিয়ে দেয়। অবশেষে এক অভ্যন্তরীণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

এই পরিবর্তন বোঝায়, বিসিবির নেতৃত্ব শুধু নামমাত্র কোনো পদ নয়—এটি দায়বদ্ধতা, দক্ষতা এবং বোর্ড পরিচালনায় বাস্তব ক্ষমতার প্রশ্ন। ফারুক আহমেদ হয়তো তার অভিপ্রায়ে আন্তরিক ছিলেন, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত কাঠামোগত সংস্কার ও সমন্বয় নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

বুলবুলের সামনে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ-বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা, কাঠামো মজবুত করা এবং মাঠের ক্রিকেটে দৃশ্যমান উন্নতি নিশ্চিত করা।