নাইজারে সেনা অভ্যুত্থান, প্রেসিডেন্ট আটক

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ২৭ ২০২৩, ১৩:১৭

নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুম। ছবি: সংগৃহীত

নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুম। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

নাইজারে রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার উৎখাত করেছে দেশটির প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড। একইসঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে আটক, সংবিধান বাতিল ও দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে সবকিছুই তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে।

প্রেসিডেন্টের একটি সূত্র জানায়, নাইজারের অভিজাত প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের অসন্তুষ্ট সদস্যরা রাজধানী নিয়ামের প্রেসিডেন্ট বাসভবন এবং অফিসগুলোতে তার প্রবেশ বন্ধ করে দেয়।

বাজুমের সঙ্গে আলোচনা ভেঙ্গে যাওয়ার পরে তাকে ‘মুক্ত করতে অস্বীকার’ করে তারা।

দেশটির রিজিওনাল ও বৈশ্বিক নেতারা বাজুমের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।

নাইজারের স্বাধীনতার পর প্রথম শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে দুই বছর আগে বাজুম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

ওয়েস্ট অ্যাফ্রিকান স্টেইটসের অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের (ইকোওয়াস) প্রধান প্রতিবেশী দেশ বেনিনের প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস ট্যালন অভ্যুত্থানকারী ও বাজুমের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার জন্য নিয়ামে যাচ্ছেন।

একটি টেলিভিশন ভাষণে বুধবার রাতে কর্নেল-মেজর আমাদু আবদারমানে বলেছেন, ‘আমরা, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী প্রেসিডেন্ট বাজুমের শাসনের অবসান করেছি। দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি, দুর্বল অর্থনৈতিক ও সামাজিক শাসনের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

এ সময় তার পাশে আরো নয়জন ইউনিফর্মধারী সেনা দেখা যায়।

তারা বলেন, নাইজারের ‘সব প্রতিষ্ঠানের’ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। দেশটির সীমান্তও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ রাত ১০ টা থেকে সকাল ৫ টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।

দেশটির সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেছে বিক্ষুদ্ধ সেনারা।

‘মানবাধিকার নীতি অনুসারে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের শারীরিক ও নৈতিক সততার প্রতি সম্মানের বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে’ আশ্বস্ত করেছেন আবদারমানে।

সাহেলের পশ্চিমাপন্থী নেতাদের একটি ক্ষয়িষ্ণু গোষ্ঠীর সদস্য মোহাম্মদ বাজুম ২০২১ সালের এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

তিনি দারিদ্র্য, দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতা এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিহাদি বিদ্রোহ জর্জরিত নাইজারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

প্রেসিডেন্ট কার্যালয় বাজুমের আটকের পর ‘এক্স সংকেতে’ তাদের লোগো পরিবর্তন করে টুইটার বার্তায় বলেছে, ‘প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড (পিজি) সদস্যদের মেজাজ ক্ষিপ্ত ছিল এবং তারা জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী ও জাতীয় রক্ষীদের সমর্থন পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল।’

প্রেসিডেন্টের অফিস বলেছে, প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের সদস্যরা যদি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসে তাহলে সেনাবাহিনী ও জাতীয় রক্ষীরা পিজির ওপর আক্রমণে প্রস্তুত রয়েছে।

তারা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার ভালো আছেন।’

বাজুমকে আটকের কয়েক ঘন্টা পরে, তার সমর্থকরা অফিসিয়াল কমপ্লেক্সের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে পিজির সদস্যরা তাদের সতর্ক করতে গুলি চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।

এ ঘটনায় এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তবে তিনি বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়।

রাজধানী নিয়ামেতে নাইজারের ক্ষমতাসীন জোটের দলগুলো একটি বিবৃতিতে পিজির অভ্যুত্থানকে ‘আত্মঘাতী এবং প্রজাতন্ত্র বিরোধী উন্মাদনা’ বলে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট এবং তার পরিবারকে, সেই সঙ্গে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন ও অন্তরীণ করে রেখেছে।’

এ ঘটনায় পুরো বিশ্বেও নিন্দার ঝড় উঠেছে।

ইকোওয়াস ও অ্যাফ্রিকান ইউনিইয়ন ঘটনাটিকে ‘অভ্যুত্থানের চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছে।

ইকোওয়াস অবিলম্বে বাজুমের নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানিয়ে পিজিকে সতর্ক করে বলেছে, এই ঘটনায় জড়িত সবাইকে তার নিরাপত্তার জন্য দায়ী করা হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইকোওয়াস’র বিবৃতি সমর্থন করে বলেছে, এটি নাইজারের ‘গণতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করার ও দেশটির স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্বক হুমকি’।

জাতিসংঘ প্রধান অ্যান্টোনিও গুটেরেস এবং ইউনাইটেড স্টেইটস সেক্রেটারি অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, তারা বাজুমের সঙ্গে কথা বলে তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
নাইজারের সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স এবং প্রতিবেশী দেশ আলজেরিয়াও এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, তারা নাইজারে ‘জোর করে ক্ষমতা দখলের যে কোনো প্রচেষ্টা বা ‘অস্থিতিশীল’ করার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন