এমনই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে অ্যামেরিকার স্যান ফ্র্যান্সিস্কোয় বসবাসকারী স্কট লিবারম্যানের জীবনে।
লিবারম্যান বরাবর জানতেন তাকে চিলি থেকে অ্যাডপ্ট করা হয়েছে। তবে প্রকৃত সত্যি হলো তাকে শিশু অবস্থায় চুরি করা হয়েছিল।
চিলিতে ৭০ এর দশকে জেনারেল আগাস্টো পিনাশেয়ের স্বৈরতন্ত্রের সময় (১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত) বিপুলসংখ্যক শিশুকে দত্তক সংস্থার কাছে পাঠানো হয়।
তবে ধনী শিশুদের পরিবার নিজেদের সম্মান রক্ষায় পরে সন্তান ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
যেসব শিশু দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছিল তাদের আসলে চুরি করে আনা হয়েছিলো। লিবারম্যান এমনই এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান।
সিএনএনের ডকুমেন্টারি দেখার পর চিলির শিশু চুরির স্ক্যান্ডাল জানতে পারেন লিবারম্যান। তিনি ভাবতে শুরু করেন তার সঙ্গেও এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিল কিনা।
অবশ্য লিবারম্যানের অ্যামেরিকান পরিবার তার ‘স্টোলেন কিড’ হওয়ার সম্ভাবনার কথা কখনো ভেবে দেখেনি।
ধীরে ধীরে তিনি তার অ্যামেরিকান পরিবারের ভাষ্য ও চিলির ঘটনার মিল খুঁজে পান। তিনি সিদ্ধান্তে আসেন উভয় দেশের দুই পরিবারকেই ঠকিয়েছে তৎকালীন দত্তক সংস্থাগুলো।
তিনি চিলিতে থাকা তার পরিবার খুঁজে পান। তবে তার মা ইয়েসটার ম্যারডোনিয এখন আর বেঁচে নেই। তার সৎ বোন এস্কালোনা হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাইকে ফিরে পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত।
লিবারম্যান বলেন, ‘আমি আমার জীবনের ৪২ বছর কাটিয়ে দিয়েছি এটা না জেনেই যে আমাকে চুরি করে আনা হয়েছে। আমি জানতামই না ৭০ বা ৮০ দশকে চিলিতে কি ঘটেছিল। আমি চাই মানুষ জানুক… এখনও অসংখ্য পরিবার একত্রিত হতে পারে।’
এস্কালোনা জানিয়েছেন, তাদের মা এক ডাক্তারের বাড়িতে কাজ করতেন। সে সময় লিবারম্যানকে চুরি করেন ডাক্তারের সঙ্গে কাজ করা নার্সদল। তাদের মা বহু বছর লিবারম্যান খুঁজে বেড়িয়েছেন। এমনকি চিলির আইন কর্মীদের সাহায্য চাইলে লিবারম্যানকে বিদেশে পাচার করার কথা জানান তারা। তবে কখনও আশাহত হননি ইয়েস্টার।
জন্মের সময় চিলির শিশুদের চুরি করে অন্য দেশে বিক্রি করে দেয়ার একাধিক ঘটনা গত দশক জুড়ে নথিভুক্ত করেছে বার্তাসংস্থা সিএনএন।
চিলির কর্তৃপকক্ষের দাবি, সে সময়ে প্রিস্ট, নান, ডাক্তার, নার্স ও অন্যরা অবৈধ দত্তক নেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিলো। শিশু চুরির ঘটনার মূল উদ্দেশ্যই ছিল অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া।
তারা বলেছেন, চিলি থেকে হাজার হাজার শিশু চুরি হয়েছে এবং তাদের অবৈধভাবে দত্তক দেয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে চলা সেসব ঘটনার তদন্ত থমকে গিয়েছে।
শিশু চুরির ঘটনায় সম্পৃক্ত অনেকেই মারা গেছেন, অনেক হাসপাতাল ও দত্তক সংস্থা আর আগে ঠিকানায় নেই।