ঢাকা থেকে ট্রেনে কক্সবাজার সেপ্টেম্বরে

টিবিএন ডেস্ক

জুন ১০ ২০২৩, ১১:৫৩

কক্সবাজারে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন রেল স্টেশন। গ্রাফিক্স: সংগৃহীত

কক্সবাজারে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন রেল স্টেশন। গ্রাফিক্স: সংগৃহীত

  • 0

বাংলাদেশের পর্যটন জেলা কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হতে পারে সেপ্টেম্বরে। জেল শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিপাড়া এলাকায় ২৯ একর জমির ওপর নির্মিত আইকনিক রেল স্টেশনও উদ্বোধন হবে ওই মাসেই।

ঝিনুকের আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন এ স্টেশন ভবনটির আয়তন ১৮২ হাজার বর্গফুট। ছয় তলা ভবনটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

বাংলাদেশের রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই আইকনিক রেল ভবনটির উদ্বোধন হবে। একই সঙ্গে উদ্বোধন হবে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন সার্ভিস। এখন পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ।

মন্ত্রী সুজন গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শন করেন। 

বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী বাসসকে বলেন, সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আরামদায়ক হিসেবে রেলকে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দোহাজারী থেকে কক্সবাজারে সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে ট্রেনে করে আসার জন্য সারাদেশের মানুষ ভীষণ আগ্রহী হয়ে আছে। আগামী আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করে সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের সার্বিক চেষ্টা করা হচ্ছে।’

মন্ত্রী সুজন বলেন, ‘আমাদের সবার জন্য গর্বের একটা বিষয় কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং। এ রকম অনন্য স্থাপনা অন্য কোথাও নেই।’ 

ঝিনুকের আদলে তৈরি স্টেশনটিতে আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি ক্যান্টিন, লকার, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্র সৈকতে বা দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। এ স্টেশন দিয়ে দিনে ৪৬ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেল রাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। তবে আমরা চেষ্টা করছি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করতে। রেল স্টেশনগুলোর নির্মাণকাজও চলমান আছে।’

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলওয়ে প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ম্যানেজার আবদুল জাবের মিলন বলেন, ‘সমুদ্র সৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা এলাকায় ২৯ একর জমিতে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন স্টেশন। আইকনিক এ স্টেশনটি নির্মাণে চায়না, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন আধুনিক স্টেশনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। 

‘পুরো প্রকল্পে ১১০ জন বিদেশিসহ মোট ২৫০ জন প্রকৌশলী এবং ছয় শ’র বেশি মানুষ কাজ করছেন। চার বছরের শ্রমে আইকনিক রেলস্টেশন ভবনটি এখন দৃশ্যমান। বর্তমানে গ্লাস ফিটিংস, ছাদের স্টিল ক্যানোফিসহ নানা ধরনের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে।’

তিনি বলেন, ‘এ স্টেশন হবে এশিয়ার প্রথম শতভাগ পর্যটনবান্ধব কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছয়তলা বিশিষ্ট স্টেশন। এতে থাকবে পর্যটকের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। পর্যটকরা যেন কক্সবাজারে দিনে এসে ঘুরে আবার ফিরে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। স্টেশনে রাখা হচ্ছে লাগেজ ও লকার সিস্টেম। এ ছাড়া থাকছে আধুনিক ট্রাফিক সুবিধা। 

‘স্টেশনের নিচতলায় থাকছে টিকেট কাউন্টার, অভ্যর্থনা কেন্দ্র, লকারসহ নানা সুবিধা। দ্বিতীয় তলায় শপিংমল ও রেঁস্তোরা। তিন তলায় থাকবে তারকা মানের হোটেল। এছাড়া থাকছে মসজিদ, শিশুযত্ন কেন্দ্র ও চলন্ত সিঁড়ি। এখনে থাকছে এটিএম বুথ, পোস্ট অফিস, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথসহ নানা সেবা কেন্দ্র।’

২০১৮ সালের জুলাইয়ে দোহাজারি থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণে মেগা প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ মেগা প্রকল্পে ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।’

প্রকল্পের আওতায় দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। রেলপথে স্টেশনের সংখ্যা নয়টি। এগুলো হলো, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়ার সাহারবিল, ডুলাহাজারা, ঈদগাও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুমধুম। 

এতে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম থাকবে নয়টি, ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম থাকবে নয়টি। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। এ ছাড়া ৪৩টি মাইনর সেতু, ২০১টি কালভার্ট, সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় একটি ফ্লাইওভার, ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং এবং রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং রয়েছে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন