ট্রাম্পের কাছে কী চায় সৌদি, কাতার, আমিরাত?

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১৩ ২০২৫, ০:০৬ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ১৩ ২০২৫, ১৯:২৩

(বাম থেকে) কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ও সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুলআজিজ আল সৌদের সঙ্গে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: গালফ বিজনেস

(বাম থেকে) কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ও সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুলআজিজ আল সৌদের সঙ্গে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: গালফ বিজনেস

  • 0

চলতি সপ্তাহে ট্রাম্পের সফরে নিজেদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দৃশ্যমান অর্জন করতে চায় জ্বালানিসমৃদ্ধ উপসাগরীয় আরব তিন দেশ। দেশগুলো ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করেছে।

বিশ্বের অন্যতম ধনী হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার সফরে বেরিয়েছেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তার এ সফরে দেশ তিনটি কী অর্জন করতে চায়, সে সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিয়েছে সিএনএন।

প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা

চলতি সপ্তাহে ট্রাম্পের সফরে নিজেদের প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দৃশ্যমান অর্জন করতে চায় জ্বালানিসমৃদ্ধ উপসাগরীয় আরব তিন দেশ। দেশগুলো ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করেছে।

তারা সামষ্টিকভাবে অ্যামেরিকার বিনিয়োগে ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা গাজা থেকে ইউক্রেন ও ইরান পর্যন্ত যেসব সংকটের সমাধান চান ট্রাম্প, সেগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেদের হাজির করেছে।

এসব কাজের মধ্য দিয়ে দেশগুলো দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে থাকা ট্রাম্পকে আতিথ্য দেওয়ার সুযোগ করে নিয়েছে।

সফরসূচির অংশ হিসেবে অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট মঙ্গলবার প্রথমে সৌদিতে পা রাখবেন। পরবর্তী সময়ে ১৬ মে পর্যন্ত তিনি কাতার ও আমিরাত সফর করবেন।

ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক ট্রাম্পের লেনদেনমূলক পররাষ্ট্রনীতির কারণে অনেক কিছুই চাওয়ার আছে মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশের।

তিন সম্পর্কে বৈচিত্র্য চায় সৌদি ও আমিরাত

ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে অ্যামেরিকার সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। জো বাইডেনের আমলে প্রয়োজন পূরণে অ্যামেরিকার দৃশ্যত অনীহায় বিরক্ত ছিল দেশ দুটি। ট্রাম্প জমানায় তারা চায় সামরিক, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে বৈচিত্র্য। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসায় ‘জীবনে একবার আসা সুযোগ’ কাজে লাগাতে চায় দেশগুলো।

আবুধাবিভিত্তিক থিংক ট্যাংক এমিরেটস পলিসি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট এবতেসাম আলকেতবি বলেন, দেশগুলোর জায়গা থেকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর সময় এখনই। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিত করতে চায় তারা।

ট্রাম্পের সফরসূচিতে থাকা তিন দেশেরই রয়েছে অগ্রাধিকারের তালিকা।

নিরাপত্তা চুক্তি

সৌদি আরবের লেখক ও দেশটির রাজনৈতিক অর্থনীতিবিষয়ক ভাষ্যকার আলি শিহাবি বলেন, ট্রাম্পের সফরে সৌদি আরবসহ অন্য উপসাগরীয় দেশগুলো সবচেয়ে বেশি চাইবে ‘নিরাপত্তা, নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তা’।

শিহাবি সিএনএনকে বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলোর স্থিতিশীলতার বিষয়ে অ্যামেরিকার অঙ্গীকার পূরণে ট্রাম্পের কাছ থেকে ফের নিশ্চয়তা চাইবে দেশগুলো।

এ বিশ্লেষক আরও বলেন, ট্রাম্পের অগ্রাধিকারের তালিকায় অনেক বিষয় থাকে এবং তিনি খুব দ্রুত আগ্রহ হারিয়ে ফেলার জন্য পরিচিত। এ কারণে দেশগুলো চাইবে তাকে সম্পৃক্ত রাখতে।

গত বছর প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য নিয়ে ঐতিহাসিক এক চুক্তিতে পৌঁছার দ্বারপ্রান্তে ছিল সৌদি ও অ্যামেরিকা, তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পথে হাঁটতে ইসরায়েলকে সৌদির তাগিদের কারণে সেবার চুক্তিটি আটকে যায়।

এবার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলেও সৌদির সঙ্গে চুক্তি হয়ে যেতে পারে অ্যামেরিকার।

এ বিষয় ইউরেশিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরাস মাকসাদ বলেন, সৌদি-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলেও বড় চুক্তির পথে হাঁটতে পারেন ট্রাম্প। কারণ ট্রাম্পের মতে, স্বাভাবিকীকরণ ‘মৃত’ বিষয়।

উভয় পক্ষের লাভ চায় সৌদি

সৌদি আরব দৃশ্যত উভয় পক্ষের লাভের ভিত্তিতে অ্যামেরিকার সঙ্গে সম্পর্ককে সাজাচ্ছে।

মার্চে ট্রাম্প জানান, অ্যামেরিকায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করলে তিনি সৌদিতে যাবেন। সৌদি সে সংখ্যার কথা না বললেও অ্যামেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক চার বছরে ৬০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা জানুয়ারিতে প্রকাশ করে দেশটি।

এআইয়ে আধিপত্যের জন্য অ্যামেরিকাকে দরকার আমিরাতের

বিনিয়োগকে প্রধান রেখে অ্যামেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গভীর করতে চায় আমিরাত। দেশটি অ্যামেরিকায় ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এ বিষয়ে আলকেতবি বলেন, অ্যামেরিকা-আমিরাত কৌশলগত অংশীদারত্ব বাড়ানোর একটি উপায় হলো বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

এআই, সেমিকন্ডাক্টর, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও জ্বালানিতে ১০ বছর মেয়াদে ১.৪ ট্রিলিয়ন বিনিয়োগের পরিকল্পনা মার্চে প্রকাশ করে আমিরাত। দেশটি ২০৩১ সালের মধ্যে এআইয়ে শীর্ষস্থানীয় হতে চায়। অ্যামেরিকার উন্নত মাইক্রোচিপ ছাড়া সে লক্ষ্য পূরণ সহজ নয়।

কাতারের বৈশ্বিক কূটনীতি

অ্যামেরিকার সঙ্গে সবচেয়ে আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তা সম্পর্ক থাকা দেশ হলো কাতার। মধ্যপ্রাচ্যে অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় সামরিক স্থাপনা আছে দেশটিতে।

গাজা থেকে শুরু আফগানিস্তান পর্যন্ত অনেক সংঘাতের মধ্যস্থতাকারী কাতার। দেশটির এ অবস্থানকে ওয়াশিংটনের কাছে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা হিসেবে দেখেন বিশেষজ্ঞরা।

ট্রাম্পের এবারের সফরে নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে থাকা সিরিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা অপসারণের বিষয়টি কাতার উত্থাপন করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আল-শারার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।