নিজের মস্তিষ্কে নিজের সার্জারি!

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ২০ ২০২৩, ১৬:০২

রাগুডার টুইটার থেকে পাওয়া ছবি

রাগুডার টুইটার থেকে পাওয়া ছবি

  • 0

ঘুমের ভিতরে কী স্বপ্ন দেখবেন তা নিজ থেকেই ঠিক করতে চেয়েছিলেন মিখাইল রাডুগা। তবে এটা তো চাইলেই করা যায়না, সবার আগে বাগে আনতে হবে মস্তিষ্ককে। আর তাই নিজেই নিজের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের চেষ্টা করেছেন রাডুগা। ভয়ঙ্কর এই কাজটি তাকে ঠেলে দিয়েছিল একদম মৃত্যুমুখে।

রাডুগার বাড়ি রাশিয়ার নোভোসিবিরস্ক অঞ্চলে। সৌভাগ্যক্রমে চিকিৎসকদের চেষ্টায় এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেছেন তিনি। উচিত শিক্ষা পেয়ে নিজের মগজে নিজের হাতে অস্ত্রোপচার না করতে এখন সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছেন রাডুগা।

রাশিয়ার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বাযা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ৪০ বছর বয়সী মিখাইল রাডুগা প্রায় এক বছর আগে নিজের মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রোড ইন্সটলের ধারণা পান। সেই থেকে স্লিপ প্যারালাইসিস, আউট-অফ-বডি স্টেইটস ও অ্যাস্ট্রাল প্রজেকশন নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি শুরু করেন তিনি।

রাডুগা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই সব লেখা শেয়ার করে নিজের চিন্তাধারার একটি কাল্টকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালান।

রাডুগা দাবি করেছিলেন, মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট অংশে ইলেক্ট্রোড স্থাপনের মাধ্যমে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গবেষণাকে আরও গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত করার চেষ্টায় নিজের ওপরেই পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

রাডুগা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে পেশাদার নিউরোসার্জনের কাছে যাওয়ার কথা ভাবলেও অপারেশনের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও ক্লিনিককে ঝামেলায় না ফেলতে নিজেই নিজের অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নে একটি হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে নিউরোসার্জারিতে ব্যবহৃত ড্রিলের অনুরূপ ড্রিল কিনে ফেলেন তিনি, এরপর নিজের অ্যাপার্টমেন্টেই শুরু হয় অস্ত্রোপচারের কাজ।

রাডুগা জানান, নিজের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের আগে তিনি নিউরোসার্জারির ওপর কয়েক ঘণ্টার ইউটিউব ভিডিও দেখেছেন। পরে তিনি পাঁচটি ভেড়ার ওপর পরীক্ষামূলক সার্জারি করেন।

এরপর ১৭ মে নিজের অস্ত্রোপচার শুরু করেন রাডুগা। এই অস্ত্রোপচারের ভিডিও ধারণ করেন তিনি। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় চার ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে প্রায় মৃত্যুর কাছে চলে যান।

রাডুগা দাবি করেন, মাথার খুলিতে ড্রিল করার পর তিনি প্রায় এক লিটার রক্ত হারিয়েছেন। স্যোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভয়ঙ্কর ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রাডুগা কাগজের ক্লিপ দিয়ে তার মাথার চামড়া চেপে ধরে রেখেছেন। এরপর তিনি ড্রিল মেশিন ব্যবহার করে নিজের মাথার খুলির পেছনের দিকে ড্রিলিং করেন।

তিনি তার মস্তিষ্কে একটি প্লাটিনাম ও সিলিকন চিপ ইমপ্ল্যান্টের চেষ্টা করেন। তিনি দাবি করেন, এই ইলেক্ট্রোড চিপগুলো তাকে স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেবে।

ভিডিওতে দেখা যায়, চিপ বসানো শেষে রাগুডা নিজের খুলি আবার জোড়া লাগিয়ে দেন।

তবে অস্ত্রোপচারের পাঁচ সপ্তাহ পর গুরুতর শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তিনি জানান, তার ইমপ্ল্যান্ট করা চিপগুলো কোনো কাজে আসেনি। হাসপাতালে ফের অস্ত্রোপচারে তার মস্তিষ্ক থেকে চিপগুলো অপসারণ করেন চিকিৎসকেরা।

রাডুগা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অস্ত্রোপচার চেষ্টার ভিডিও পোস্ট করে অনুসারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ডু নট রিপিট! আমি যা করতে চেয়েছিলাম তা আপনাদের কল্পনার চেয়েও বেশি কঠিন ও তার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। আশা করছি আমার ভিডিও থেকেই আপনারা তার ধারণা পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে আমি বেঁচে গিয়েছি। যদিও আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম।’

রাগুডা ডেইলি মেইলকে জানান, স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণে মস্তিষ্কে ইলেক্ট্রোড ইন্সটলের ধারণা ভবিষ্যতের গবেষণায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেশনাল নিউরোসার্জন অ্যালেক্স গ্রিনসহ অন্য নিউরোসার্জনরা রাগুডার এমন ‘বিপজ্জনক’ পদক্ষেপের নিন্দা করে সবাইকে সতর্ক করেছেন। গ্রিন জানান, মস্তিষ্কের জটিল অপারেশন শুধু যোগ্যতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে করা উচিত।

গ্রিন বলেন, ‘রাগুডার যেকোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারতো। অস্ত্রোপচারের সময় ভুলবশত কোনো কর্টিকাল নার্ভ বা ইন্ট্রাসেরিব্রাল ভ্যাসেল থেকে রক্তক্ষরণ ঘটলে তিনি ব্রেইন স্ট্রোকের সম্মুখীন হয়ে স্থায়ী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হতে পারতেন। এমনকি মৃত্যুও হতে পারত।’

গ্রিন আশঙ্কা করছেন, আগামীতে রাডুগার এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগের সম্ভাবনা রয়েছে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন