খালেদা-তারেক কেউ নির্বাচনে লড়তে পারবেন না: আনিসুল

টিবিএন ডেস্ক

জুন ১১ ২০২৩, ১৫:২৪

‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: বাসস

‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি: বাসস

  • 0

বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দুই বছরের বেশি সময়ের জন্য দণ্ডিত হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া পলাতক তারেক রহমান একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তিনিও নির্বাচনে লড়তে পারবেন না।

ঢাকায় ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) আয়োজিত ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে রোববার তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে আইনমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন সরকার, ই-জুডিশিয়ারি, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী।

খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সংবিধানের ৬৬ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা আছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি নৈতিক স্খলনের কারণে দুই বছরের বেশি সময়ের জন্য দণ্ডিত হন, তাহলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আর তিনি যদি কোনো রাজনৈতিক সভায় যোগ দেন, তাহলে প্রমাণিত হবে, তিনি সুস্থ। স্বাভাবিকভাবে তিনি যদি সুস্থ হন, তাহলে তার দায়িত্ব হচ্ছে বাকি সাজা খাটা। যে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে (খালেদা) মুক্তি দেয়া হয়েছে, সেটি বাতিল হলে সাজা কার্যকর হবে। তার সাজার মেয়াদ এখনও রয়ে গেছে।

‘আমি এই গুজব শুনেছি যে খালেদা জিয়ার মুক্তির ফাইল নাকি আইন মন্ত্রণালয়ে চলে এসেছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারি, আমার মন্ত্রণালয়ে এ রকম কোনো ফাইল আসেনি এবং আমি এটাও বলতে পারি যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও এ রকম কোনো ফাইল উঠেছে বলে আমি জানি না।’

খালেদা জিয়ার সভা-সমাবেশে যাওয়ার কোনো বাধা আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি শর্তসাপেক্ষে মুক্ত আছেন। কী আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে- সেটার পেছনে তো একটা ইতিহাস আছে। আবেদনটা হচ্ছে, তার ভাই এই মর্মে আবেদন করেন যে, তার বোন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। সেই অসুস্থতার পরিপ্রেক্ষিতেই, খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির যে মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণে, সেই সাজা স্থগিত রেখে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ এর ১ ধারায় শর্তযুক্তভাবে সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেয়া হয়।

‘এখন তিনি যদি বলেন, সুস্থ তাহলে তাকে তার যে সাজা, সেটা খাটার জন্য জেলখানায় যেতে হবে। তিনি যেই মুহূর্তে বলবেন তিনি সুস্থ-স্বাভাবিক, সেই মুহূর্তে তার অসুস্থতার আবেদনটা আর থাকল না। আর তিনি এখন যে মুক্ত, সেটার প্রমাণ হলো, তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গেলে, তাকে কিন্তু এখন সরকারের অনুমতি নিয়ে যেতে হয় না।’

এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়ার নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি পলাতক তারেক রহমান একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তিনিও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

সংলাপের পরিকল্পনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। এমন চিন্তা করা হচ্ছে না। এমন ভাবনা আসবেও না।’

একদিকে জামায়াতে ইসলামীকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে, অন্যদিকে দলটিকে ১০ বছর পর সমাবেশ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটা সাংঘর্ষিক কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘আদালতের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতকে দোষী বলা যাবে না। বিচার করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত রায় না হয়, দোষী সাব্যস্ত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি বলতে পারব না, জামায়াত নিষিদ্ধ।’

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেসব তথ্য এসেছে, তাতে যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করার যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে। এ সংক্রান্ত আইনটি সংশোধনের জন্য কিছুদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।’

জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এই অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাই এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতে পারেন।’

অ্যামেরিকার নতুন ভিসা নীতি ও দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অ্যামেরিকার নতুন ভিসা নীতি বিষয়ে আমি পিটার হাসকে জানিয়েছি, এটি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক। সেটা যার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হোক। যদি বিরোধী দলের বিরুদ্ধেও এ ব্যবস্থা নেয়া হয়, সেক্ষেত্রেও আমি বলব, এটি অপমানজনক।’

আনিসুল হক জানান, তিনি অ্যামেরিকান রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, এই ভিসা নীতি যদি যুক্তিসংগতভাবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে তাদের কোনো বক্তব্য নেই। আর যদি ইচ্ছেমতো একটি দলের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়, তাহলে তাদের আপত্তি আছে। রাষ্ট্রদূতকে তিনি এ কথাও বলেছেন, ভিসা নীতি নিয়ে সরকার বিচলিত নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার আছে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই ওই দুটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। জনগণ ভোট দিতে কেন্দ্রে গেছেন।’

নির্বাচনকালে ছোট সরকার হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংসদে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব আছে, তাদের নিয়ে নির্বাচনকালে একটি ছোট সরকার গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য তার কাজ করবে। আর সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত না নিয়ে দৈনন্দিন কাজ করবে।’

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে অঙ্গীকার করেছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করায় সংবিধান থেকে কেয়ারটেকার সরকার বাতিল হয়ে যায়। সংসদে প্রতিনিধিত্ব আছে, এমন রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে নির্বাচনকালীন ছোট সরকার গঠন হবে। আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে যে অঙ্গীকার করেছিল, সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সে প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।’

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে হয়রানি ও এই আইনের অপব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হচ্ছে বলেও জানান আনিসুল হক।

তিনি বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম বন্ধে পৃথিবীর বহু দেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি সংক্রান্ত আইন রয়েছে। জাতিসংঘের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এটি নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। তারাও আইনটি বিদ্যমান রাখার কথা বলেছেন। তবে কিছু সংশোধনীর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এখন এ আইনে মামলা হলেই যেন কাউকে গ্রেফতার করা না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একটি সেল গঠন করা হয়েছে। মামলা হলে, আগে সেখানে এটি পরীক্ষা করা হবে। ফ্রাইমা ফেসি কেইস (অপরাধের প্রাথমিক উপাদান) দেখে পরবর্তী কার্যক্রমে এগোতে হবে, যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন এবং কেউ যেন আইনটি অপব্যবহারের সুযোগ না নিতে পারেন।’

গুমের অভিযোগ প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, ‘গুম নিয়ে যখন কথা হয়, তখন আমরা গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে গেলাম। তখন সংবাদপত্র বলা শুরু করল, সরকার তাদের হয়রানি করছে। তখন তাদের পরিবারকে বলা হলো, পুলিশকে জানান। কিন্তু তারা (পরিবার) সাড়া দিল না। এতে আমাদের কী করার আছে! তারা তো সহযোগিতা করছে না।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু গুম আছে, যারা বাসায় বসে আছেন। কিন্তু গুমের অভিযোগ তুলছেন।’

বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলার অবিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলার কথা বলছে, সেটা ঠিক নয়। তাদের অপরাধের জন্য মামলা হচ্ছে। ২০০১ সালের পর তারা আওয়ামী লীগের ওপর ব্যাপক নির্যাতন করেছে। অপরাধ ছাড়া কোনো মামলা হয় না।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত সব মামলার নিষ্পত্তি না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থাকবে। এখনও সেখানে যত মামলা আছে, তাতে আরও ১০ থেকে ১৫ বছর ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম চলবে।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন