ইরানকে বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। জি-সেভেন সম্মেলন সংক্ষিপ্ত করে ফিরে এসে বুধবার হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন তিনি। পরে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ইরানকে কোনো শর্ত ছাড়াই আত্মসমর্পণ করতে হবে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরানের তথাকথিত সুপ্রিম লিডার কোথায় লুকিয়ে আছেন, সেই তথ্য রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। যদিও ওয়াশিংটন এই মুহূর্তে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করছে না বলেও জানান ট্রাম্প।
এরপর বুধবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে সাফ জানিয়ে দেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি—ইরান আত্মসমর্পণ করবে না। তিনি বলেন, আরোপিত কোনো যুদ্ধ কিংবা চাপিয়ে দেওয়া শান্তি তেহরান মেনে নেবে না। একইসঙ্গে ট্রাম্পের হুমকিকে ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
খামেনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পরোক্ষ আলোচনার মধ্যেই জায়োনবাদী আগ্রাসন শান্তি প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করেছে। আগ বাড়িয়ে যুদ্ধ বাধিয়ে পেন্টাগনের সহায়তা চাওয়াকে কাপুরুষতা বলে সমালোচনা করেন তিনি।
এদিকে সিএনএন সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্প ক্রমেই ইরানের বিরুদ্ধে হামলার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন। যদিও প্রকাশ্যে পরমাণু চুক্তির কথা বলছেন, কিন্তু বাস্তবে তিনি ধৈর্য হারাচ্ছেন। যে কোনো সময় প্রেসিডেন্ট আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারেন বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, আরব সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের রণতরী, ডেস্ট্রয়ার ও গাইডেড মিসাইল ক্রুজার অবস্থান করলেও এখন ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চল থেকেও অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজ পাঠানো হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে।
রুশ উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়াবকভ এ অবস্থায় তেল আভিভকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার কারণে ওয়াশিংটনকে সরাসরি সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এর ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে এবং ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, যদি তেহরানে পেন্টাগন হামলা চালায়, তবে তা হবে এক ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ খুলে দেওয়ার মতো ভয়াবহ সিদ্ধান্ত। ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর সিনিয়র ফেলো এলি জেরানমায়েহ জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন এক জটিল সিদ্ধান্তের মুখোমুখি। তিনি কি পিছু হটবেন, নাকি যুদ্ধ বেছে নেবেন—এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
তাঁর মতে, অতীতেও ট্রাম্প যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে সরে এসেছেন। এবারও তা সম্ভব, তবে যদি ট্রাম্প ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্ত নেন, তবে সেটি সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণার সামিল হবে বলে মনে করছে তেহরান।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘেরি আল জাযিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মদদে ইসরায়েল গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইরানে হামলা চালিয়েছে। তাই এই অবস্থায় আত্মরক্ষার জন্য রুখে দাঁড়ানো ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।