বিচিত্র বিশ্ব সংস্কৃতিতে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী মেনে চলছে নিজস্ব নানান রীতিনীতি। এগুলোর কিছু কিছু আছে চমকে ওঠার মতো।
ল্যাটিন অ্যামেরিকার অ্যামাজন রেইনফরেস্টে বসবাস করে ক্ষুদ্র আদিবাসী জনগোষ্ঠী ‘ইয়ানোমামি’। অবাক করা বিষয় হলো, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আপনজনের মৃতদেহ পুড়িয়ে খাওয়ার রেওয়াজ চালু আছে এই জনগোষ্ঠীতে। এভাবে তারা প্রয়াত আপনজনের প্রতি জানান গভীর ভালোবাসা।
‘ইয়ানোমামি’ জনগোষ্ঠীকে অনেকে ‘ইয়ানাম’ অথবা ‘সেনেমা’ নামেও চেনেন। ভেনেযুয়েলা ও ব্রাযিলের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে তাদের বাস। প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি গ্রামে বসবাসকারী ইয়ানোমামিরা সংখ্যায় প্রায় ৩৫ হাজার। এক একটি গ্রামে বাস করেন ৫০ থেকে ৪০০ জন।
এই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সৎকার প্রথা অনেকটা ক্যানিবালিযমের সঙ্গে সম্পর্কিত। সুনির্দিষ্টভাবে একে বলা হয় এনডোক্যানিবালিযম, যা নিজ সমাজ অথবা সম্প্রদায়ের মৃত মানুষের মাংস খেতে অনুপ্রেরণা যোগায়। ইয়ানোমামিদের বিশ্বাস, এর ফলে মৃত ব্যক্তির আত্মা চিরন্তন প্রশান্তি লাভ করে!
আদি ভারতীয় এই জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রথমে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলে ও পোড়া দেহের কালি দিয়ে নিজেদের মুখ অংকন করেন। এর আগে আত্মীয় হারানোর শোক প্রকাশে মরদেহের পাশে বসে গাইতে থাকেন দুঃখের গান।
ইয়ানোমামিদের এই সৎকার রীতির পরের ধাপে ৩০-৪৫ দিন পর্যন্ত পোড়াদেহকে পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। এরপর পাতা সরিয়ে হাড়গুলো বের করে এনে গুঁড়া করা হয়। সবশেষ এ তালিকায় যোগ হয় কলা। এটি মিশিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ এক স্যুপ, যা আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীর মাঝে বিলি করা হয়।
এই প্রক্রিয়া একমাত্র তখনই বদলায়, যখন কোনো শত্রু তাদের অঞ্চলে বাস করা কাউকে হত্যা করে। সেক্ষেত্রে শুধু নারীরা এই ছাই খেয়ে থাকেন। আর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে সবাই মিলে শত্রুর এলাকায় হামলা চালান।
ইয়ানোমামিদের বিশ্বাস, এভাবে মৃত মানুষদের ভক্ষণ করলে তাদের আত্মা গোষ্ঠীর সঙ্গে থেকে যায়। শুধু তাই নয়, সেসব আত্মা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। সব মিলিয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে গোষ্ঠীর মানুষ।