অ্যামাজনে বিমান দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর ৪ শিশু জীবিত উদ্ধার

টিবিএন ডেস্ক

জুন ১০ ২০২৩, ১৩:৪৩

শুক্রবার উদ্ধারের পর শিশুদের সঙ্গে কলম্বিয়ান সৈন্যরা। ছবি: কলম্বিয়ান প্রেসিডেন্সি

শুক্রবার উদ্ধারের পর শিশুদের সঙ্গে কলম্বিয়ান সৈন্যরা। ছবি: কলম্বিয়ান প্রেসিডেন্সি

  • 3

কলম্বিয়ার দুর্গম অ্যামাজন জঙ্গলের অ্যারারাকুয়ারা এলাকা থেকে গত ১ মে স্যান হোসে ডেল গুয়াভিয়ের শহরের উদ্দেশে রওনা দেয় দ্য সেসনা টু-জিরো-সিক্স মডেলের একটি বিমান। দুই পাইলটসহ এতে আরোহী ছিলেন ম্যাগডালেনা মুকুটুনি ভ্যালেন্সিয়া ও তার চার সন্তান।

তবে কিছুদূর ওড়ার পর রাডার থেকে উধাও হয়ে যায় বিমানটি। পরে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে দুই সপ্তাহ পর সাউদার্ন ক্যাকুটা প্রভিন্সের জঙ্গলে এর ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়। বিমানের ভেতরে পাওয়া যায় দুই পাইলটসহ ভ্যালেন্সিয়ার মরদেহ। তবে বিস্ময়করভাবে ভ্যালিন্সিয়ার চার সন্তানকে পাওয়া যায়নি। 

বিমানের আশপাশের কিছু নমুনায় বোঝা যাচ্ছিল চারটি শিশু বেঁচে আছে। দুর্ঘটনাস্থলের কিছু দূরে ফিডার ও আধা-খাওয়া ফল পড়ে থাকতে দেখেন উদ্ধারকর্মীরা। আশপাশে তল্লাশি চালিয়ে লাঠি ও গাছের ডাল দিয়ে তৈরি একটি কাঠামোও খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। উদ্ধারকর্মীরা ধারণা করেন, শিশুরা সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। জুতা, কাঁচি ও চুল বাঁধার ব্যান্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল সেখানে। 

এরও চার সপ্তাহ অর্থাৎ দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর চার শিশুকে জীবিত উদ্ধারের কথা জানালো কলম্বিয়ার কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে সবার বড় লেসলি জ্যাকোবোম্বারির বয়স ১৩ বছর, তার পরের শিশুটি সোলেনি জ্যাকোবোম্বারি মুকুটুনির বয়স ৯ বছর, এর পরের তিয়েন র‌্যানোকুই মুকুটুনির বয়স ৪ বছর এবং সবার ছোট ক্রিস্টিন র‌্যানোকুই মুকুটুনির বয়স মাত্র ১১ মাস। 

জঙ্গলের ওই অংশে আদিবাসী হুইটোটো সম্প্রদায়ের বসবাস। দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখান থেকে নদীপথ বা রাস্তা ব্যবহার করে শহরে যাতায়াত বেশ কঠিন। এ কারণে বাসিন্দারা শহরে যেতে সাধারণত বিমান ব্যবহার করেন।

চার শিশু জীবিত আছে ধরে নিয়ে জঙ্গলে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এতে কলম্বিয়ার বিশেষ বাহিনীর শতাধিক সৈন্য এবং ৭০টিরও বেশি আদিবাসী স্কাউট যোগ দেন। 

কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা অনুসন্ধানে শিশুদের পায়ের ছাপ, নোংরা ডায়াপার, বোতলসহ বেশকিছু ব্যবহৃত সামগ্রী পাওয়ায় তাদের জীবিত উদ্ধারের আশা বাড়তে থাকে। ওই শিশুদের পরিবারের সদস্যরা জানান, সবচেয়ে বড় শিশুটির বনের পরিবেশে টিকে থাকার কৌশল জানা আছে, সেই সম্ভবত বাকিদের নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। 

টানা তল্লাশি শেষে চার শিশুকে উদ্ধারের ঘটনা পুরো দেশের জন্য আনন্দদায়ক উল্লেখ করে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো বলেন, ‘শিশুগুলো একা ছিল, তারা নিজেরা বাঁচিয়ে রাখার উদাহরণ তৈরি করে ইতিহাস গড়েছে। তারা এতদিন জঙ্গলের সন্তান ছিল, এখন তারা গোটা কলম্বিয়ার সন্তান।’

কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, চার শিশুকে হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করা হচ্ছে। এরপর চিকিৎসার জন্য তাদের রাজধানী বোগোটায় নেয়া হয়। 

প্রেসিডেন্ট পেট্রো জানান, তাদের (শিশুগুলোর) গ্র্যান্ড-ফাদারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে; যিনি বলেছেন ‘অরণ্যমাতা শিশুগুলোকে ফিরিয়ে দিয়েছে।’

উদ্ধার হওয়া শিশুদের গ্র্যান্ড-মাদার মারিয়া ফাতিমা ভ্যালেন্সিয়া উদ্ধার অভিযানে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। 


(3) মন্তব্য

মন্তব্য করুন