
কমেন্ট ডিলিট, অ্যাকাউন্ট আনফলো: অ্যামেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিতে আরও যা যা করছেন ভারতীয়রা

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২ ২০২৫, ১৭:৪৫

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা। ছবি: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
- 0


প্রকাশিত: জুন ২ ২০২৫, ১৭:৪৫

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা। ছবি: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
অ্যামেরিকায় পড়াশোনার জন্য সবচেয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী যান ভারত থেকে। আকাশপথে ১৩ হাজার ৫৯৫ কিলোমিটার দূরের দেশে শিক্ষা নিতে প্রতি বছরই ভারত ছাড়েন অনেকে। ব্যতিক্রম নয় এ বছরও, তবে এবারের শরতে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তায় ফেলেছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের একটি সিদ্ধান্ত।
এ অনিশ্চয়তা কাটাতে ‘ভিসা মন্দিরে’ গমনসহ যেসব কাজ করছেন ভারতীয় শিক্ষার্থীরা, তা তুলে ধরেছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস।
কমেন্ট ডিলিট ও বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট আনফলো
শিক্ষার্থীদের নতুন করে ভিসা সাক্ষাৎকারের সময়সূচি দেওয়া স্থগিত রাখতে অ্যামেরিকার দূতাবাসগুলোকে সম্প্রতি নির্দেশ দেয় হোয়াইট হাউস। ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খতিয়ে দেখার পরিসর বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসনের তৎপরতার মধ্যে এমন নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে অনিশ্চয়তায় পড়ে অ্যামেরিকায় পড়তে ইচ্ছুক ভারতীয় শিক্ষার্থীরা। সুদূর প্রবাসে শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করতে তারা এখন নজর দিয়েছে নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টে।
অ্যামেরিকার স্টেইট ডিপার্টমেন্ট সম্ভাব্য শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম খতিয়ে দেখার কথা বলেছে। এ কারণে বিপদের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, এমন কমেন্ট ডিলিট করছেন ভারতীয় শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে অনেক অ্যাকাউন্ট আনফলো করে দিচ্ছেন তারা। বার্তার গোপনীয়তা রক্ষায় কেউ কেউ আবার গোপন গ্রুপে মেসেজ চালাচালি করছেন।
থেরাপিস্ট বনে গেছেন ক্যারিয়ার পরামর্শকরা
ক্যারিয়ার পরামর্শকদের রীতিমতো থেরাপিস্ট বানিয়ে দিয়েছেন অনিশ্চয়তায় থাকা ভারতীয় শিক্ষার্থীরা। তাদের কেউ কেউ বিকল্প পরিকল্পনা কিংবা অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার নিয়ে নতুন করে ভাবছেন।
কৌশিক শর্মা নামের ২৮ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অ্যামেরিকার শীর্ষ পলিসি প্রোগ্রামগুলোতে জায়গা করে নিতে খুব সতর্কভাবে নিজের প্রোফাইল নির্মাণ করেছি।’
অ্যামেরিকায় পড়তে যাওয়াকে ‘স্বপ্ন’ আখ্যা দেওয়া এ শিক্ষার্থী জানান, বর্তমান বাস্তবতায় আবেদনে ভরসা পাচ্ছেন না তিনি।
কৌশিকের ভাষ্য, ‘আমি সেখানে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভয়ের মধ্যে থাকতে চাই না।’
এ শিক্ষার্থী বর্তমানে বৃটেইন কিংবা সিঙ্গাপুরে একই ধরনের পাবলিক পলিসি প্রোগ্রামে পড়াশোনার কথা ভাবছেন।
এ বিষয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে কথা বলেন ক্যারিয়ার পরামর্শদাতা করণ গুপ্ত। প্রতি বছর প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থীকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি।
করণ জানান, গত কয়েক দিনে কলের বন্যা বয়ে গেছে।
আবেদনপত্র থাকা কিছু শিক্ষার্থী জানেন না তারা ভিসা সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক পাবেন কি না। এ ধরনের শিক্ষার্থীরা কল করছেন করণকে। এ ছাড়া অ্যামেরিকায় ভিসার অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষার্থী এবং আগামী বছর দেশটির ইউনিভার্সিটিতে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরাও করণের শরণাপন্ন হচ্ছেন।
এ পরামর্শক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানান, তিনি শিক্ষার্থীদের এ বলে আশ্বস্ত করছেন যে, পরিসংখ্যানগতভাবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পরিকল্পনা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
অ্যামেরিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় ৩৩০ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী ভারতীয়। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে সংখ্যায় চায়নিয শিক্ষার্থীদেরও ছাড়িয়ে গেছেন ভারতীয়রা।
‘ভিসা মন্দিরে’ গমন
ভিসাপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের আত্মিক প্রশান্তির জায়গা হিসেবে পরিচিত ভারতের কিছু মন্দির। দিল্লিতে তেমন এক ‘ভিসা মন্দিরে’ ফেব্রুয়ারিতে একটি নোট রেখে আসেন এক পুণ্যার্থী। তিনি জানান, প্রার্থনার ফলে শিক্ষার্থী ভিসা মিলেছে তার। আর এ শিক্ষার্থী ভিসার বদৌলতে বৃটেইনে গিয়ে স্থায়ী কাজের ভিসাও পেয়েছেন তিনি।
মন্দিরটির পুরোহিত নারায়ণ মিশ্র বলেন, ‘যেসব লোক ভিসা পাচ্ছেন না, তারা এখানে আসেন। তারা বিরক্ত ও হতাশ।’
পুরোহিত জানান, শিক্ষার্থীরা নিয়মিত মন্দিরে এসে প্রার্থনা করছেন।
অ্যামেরিকার ইউনিভার্সিটিতে পড়া বিখ্যাত ভারতীয়রা
উচ্চ মানসম্পন্ন শিক্ষা, উদ্ভাবন ও নানা সুযোগের কারণে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু অ্যামেরিকা। দেশটির ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা, আলফাবেটের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাই। দুজনই ভারতে বেড়ে ওঠার পর অ্যামেরিকার ইউনিভার্সিটিতে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হন।
ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড-আইএমএফের ফার্স্ট ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর গীতা গোপীনাথ এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি-এমআইটির অধ্যাপক অভিজিৎ ব্যানার্জিও অ্যামেরিকায় আসার আগে ভারতে পড়ালেখা করেন।