নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতে জাতিসংঘ সম্মেলনে শেখ হাসিনার ৫ দফা
টিবিএন ডেস্ক
জুলাই ২৫ ২০২৩, ১১:৪২
- 0
বিশ্বব্যাপী টেকসই, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সম্মেলনে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইটালির রোমে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সদর দপ্তরে ‘সাসটেইনেবল ফুড সিস্টেমস ফর পিপল, প্লানেট অ্যান্ড প্রোসপারেটি: ডাইভার্স পাথওয়েজ ইন আ শেয়ারড জার্নি’ প্রতিপাদ্য নিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ব্যবস্থাপনা+টু স্টকটেকিং মোমেন্ট (ইউএনএফএসএস+টু) শীর্ষ সম্মেলনে এই প্রস্তাব দেন তিনি।
পাঁচ দফার প্রথমটিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জলবায়ুু-সহনশীল খাদ্য ব্যবস্থার জন্য জোট সক্রিয় করতে হবে, ২০২১ সালের জাতিসংঘ খাদ্য ব্যবস্থা শীর্ষ সম্মেলনে যার সহ-নেতৃত্ব দিতে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছিল।’
তিনি প্রস্তাব করেন, ‘উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ুু-অভিযোজিত কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিয়ে জলবায়ুু অর্থায়নের জন্য খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তরকে অগ্রাধিকার হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।’
জাতিসংঘ খাদ্য ব্যবস্থা সমন্বয় কেন্দ্রকে গবেষণা ও উদ্ভাবনে আন্তঃশৃঙ্খলা সহযোগিতার মাধ্যমে জ্ঞান-ব্যবস্থাপনা বাড়ানোর এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে খাদ্য এবং সারের চাহিদার নিরিখে জলবায়ুু-ইতিবাচক সমাধান প্রচারে বেসরকারি খাতকে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করার প্রস্তাবও দেন প্রধানমন্ত্রী।
তার দেয়া পঞ্চম প্রস্তাবটি হলো, ডেল্টা ও উপকূলীয় অঞ্চলের মতো জলবায়ুু ঝুকিপূর্ণ অঞ্চলে কার্যকর কৃষি-খাদ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব জোরদার করা।
আধুনিক কৃষি-খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের অন্যতম বড় অবদানকারী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবহার এবং সুষ্ঠু বিন্যাস জলবায়ু-নিরপেক্ষ করতে বিনিয়োগ করা উচিত… এর জন্য অবশ্য আমাদের যথেষ্ট রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক জনমত প্রয়োজন।'
বাংলাদেশ সম্প্রতি গ্লোবাল মিথেন অঙ্গীকারে যোগ দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি এই উদ্যোগের প্রধান পৃষ্ঠপোষকরা তাদের প্রতিশ্রুত আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে আসবে।’
সম্মেলনে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সামুদ্রিক এলাকায় টেকসই গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য বিদেশি বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এখন আবার জলবায়ু-স্মার্ট ’কৃষি-খাদ্য বিপ্লবের' সময় এসেছে। কৃষি খাতকে রূপান্তর করতে প্রকৃতি-ইতিবাচক সমাধান এবং উন্নত প্রযুক্তি দুটোই প্রয়োগ করতে হবে। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে আমাদের কঠোর অর্জনের ফলে, বাংলাদেশকে অনন্যভাবে বিশ্বব্যাপী এসব বিষয়ে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য স্থান দেয়া হয়েছে… আমি মুগ্ধ যে কপ-২৮-এর মনোনীত প্রেসিডেন্ট এই ইস্যুর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে গত সপ্তাহে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।”
জলবায়ু-সহনশীল কৃষি-খাদ্য সমাধানে বাংলাদেশের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার আমাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বাজেট এবং সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে… এই সরকারের শাসনামলে গত ১৪ বছরে মোট ৬৯০টি উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন বা প্রবর্তন করা হয়েছে… আমাদের বিজ্ঞানীরা দীর্ঘায়িত জলাবদ্ধতা এবং খরা প্রতিরোধী ধানের জাত নিয়ে কাজ করছেন। পুষ্টির উন্নতির জন্য আমরা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ডায়াবেটিক এবং প্রো-ভিটামিন জাতসহ আটটি জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাত প্রবর্তন করেছি।’
সম্মেলন শেষে এফএও সদর দফতরে বাংলাদেশ-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কক্ষের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সঙ্গে ছিলেন এফএও মহাপরিচালক কিউ ডংইউ।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ এফএও সদর দফতরে এই ছোট অংশটি পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত। বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে এফএওর সদস্যপদ লাভ করে… বাংলাদেশ এবং এফএওর মধ্যে পঞ্চাশ বছরের চমৎকার সম্পর্কের প্রতীক এই কক্ষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করছি, এই কক্ষে বসে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা আমাদের অর্জনগুলোকে এক মুহূর্তের জন্য হলেও ভাববেন।’