উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত
স্কুল শেষে কোচিং ক্লাস চলার সময় আছড়ে পড়ে বিমানটি

ইউএনবি

প্রকাশিত: জুলাই ২১ ২০২৫, ১৯:২১ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৪ ২০২৫, ৬:৪৩

ভাইয়ের ইউনিফর্ম হাতে ক্রন্দনরত স্বজন। ছবি: মাহমুদ নকীব/ ইউএনবি

ভাইয়ের ইউনিফর্ম হাতে ক্রন্দনরত স্বজন। ছবি: মাহমুদ নকীব/ ইউএনবি

  • 0

ভুক্তভোগীদের স্বজনরা জানান, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ভবনটিতে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস পরিচালনা করা হতো। স্কুল ছুটি হওয়ার পর বিমানটি বিধ্বস্তের সময় কোচিং ক্লাস চলছিল।

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল ছুটি হয় সোমবার দুপুর সোয়া একটায়। এরপর দোতলা ভবনে কোচিং ক্লাসে মগ্ন হয়ে ছিল শিক্ষার্থীরা। সে সময় হঠাৎ করে কেঁপে ওঠে স্কুল ভবন।

মধ্য দুপুরের নীরবতা ভেঙে সবাইকে স্তব্ধ করে দেয় বিকট শব্দ। ছত্রখান হয়ে যায় সবকিছু।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, স্কুল ছুটির পর ভবনটিতে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোচিং করত।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এখন পর্যন্ত পাইলটসহ ২০ জন নিহত ও ১৭১ জন আহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর।

হতাহতের একটি বড় অংশই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী, যাদের বয়স চার থেকে ১৮ বছর।

ভুক্তভোগীদের স্বজনরা জানান, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া ভবনটিতে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস পরিচালনা করা হতো। স্কুল ছুটি হওয়ার পর বিমানটি বিধ্বস্তের সময় কোচিং ক্লাস চলছিল।

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তানের খোঁজ নিতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আসেন শাহেদা বেগম (৪০)।

তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘আমার ছেলের স্কুলে কোচিংয়ের ক্লাস চলছিল। আজ কোচিং ক্লাস না করলে আমার মনি সুস্থ থাকত।’

তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই চাই না; আমার ছেলের সুস্থতা চাই।’

সায়েম নামে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের সহোদর বলেন, ‘আমার ভাইয়ের শরীরে কিছু নাই। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। সে কোচিং ক্লাস করছিল। তখনই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।’

বার্ন ইনস্টিটিউটে আসা ইফতিসার হোসেন ইফতি নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমার ভাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের স্কুল ছুটি দেওয়ার পর আমার ভাই কোচিং না করেই বেরিয়ে গিয়েছিল। সে সুস্থ আছে, কিন্তু তার বন্ধু আগুনে পুরোপুরি পুড়ে গেছে। এমন হতাহতের সংখ্যা বহু।’

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিমানটি একটি ভবনের গেইটে আছড়ে পড়ে। সেটি অ্যাকাডেমিক ভবন। সেখানে স্কুলের বাচ্চাদের ক্লাস চলছিল। একের পর এক আহতদের বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে।’

আইএসপিআর জানায়, বিমান বাহিনীর ‘এফ-৭ বিজেআই’ প্রশিক্ষণ বিমানটি সোমবার দুপুর একটা ছয় মিনিটে উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়।

যখন এই বিপর্যয় নেমে আসে, এইসএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাহিন ছিলেন উত্তরা মাইলস্টোন কলেজের আট তলা ভবনের সাত তলায়।

১৯ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘তখন সবে আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই, কলেজ ভবন কেঁপে ওঠে। পরে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে উদ্ধার অভিযানে যোগ দিই।

‘সর্বত্র তাপ ও ঘন ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। কিছু শিশুকে দেখলাম স্কুল থেকে বেরিয়ে আসছে। কেউ কেউ মারাত্মকভাবে দগ্ধ। আমরা যতটা পেরেছি, সহায়তা করেছি।’

অতিরিক্ত তাপ ও ক্লান্তিজনিত কারণে মাহিন নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।