ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধে কি পরীক্ষায় মস্কো-তেহরান দোস্তি?

টিবিএন ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২৫ ২০২৫, ০:২৫

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এপি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এপি

  • 0

ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর মস্কো-তেহরান কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তির দৃশ্যমান কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।

ইসরায়েলের যুদ্ধে যুক্ত হয়ে ২২ জুন ইরানের পরমাণু ক্ষেত্রে হামলা করে অ্যামেরিকা। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি নিন্দা জানায় রাশিয়া। জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত বলেন, প্যান্ডোরার বাক্স খুলছে অ্যামেরিকা।

অন্যদিকে হামলার পর সহায়তার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে ছুটে যান ইরানের শীর্ষ কূটনীতিক, তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচির সঙ্গে আলাপে পুতিন আরও কিছু নিন্দাবাক্য ছোড়েন। তার ভাষ্য ছিল, অ্যামেরিকার হামলা ‘বিনা উসকানিতে আগ্রাসন’ এবং এটি কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।

রাশিয়া-ইরান বন্ধুত্বের জন্য পুতিনের এ প্রতিক্রিয়ার অর্থ খোঁজার চেষ্টা করেছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এপি।

নেই স্পষ্ট সহায়তা

আরাগচির সঙ্গে সাক্ষাতের পর স্পষ্ট কোনো সামরিক সহায়তা ছাড়া পুতিনের প্রতিক্রিয়া ইরানকে অসন্তুষ্ট করতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্য, মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার হ্রাসমান প্রভাবের প্রতিফলন দেখা গেছে পুতিনের আচরণে।

মধ্যপ্রাচ্যে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র বাশার আল-আসাদের পতন দেখেছে রাশিয়া। দেশটি এ অঞ্চলে সূক্ষ্ম কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নতুন যুদ্ধের যে প্রভাব পড়তে পারত মস্কোতে

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে স্বল্পমেয়াদে কিছু সুবিধা পেতে পারত রাশিয়া। যুদ্ধের ফলে তেলের দাম বেড়ে গেলে পড়ন্ত অর্থনীতিকে টেনে তোলার সুযোগ বাড়ত মস্কোর। এ ছাড়া ইউক্রেনের সঙ্গে তিন বছরের যুদ্ধ থেকে বিশ্ববাসীর নজর আড়াল করতে পারত দেশটি।

তেহরান-মস্কো দোস্তি

ইউক্রেনে ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরুর পর তেহরানের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক বাড়তে থাকে। রাশিয়াকে শাহেদ ড্রোন দেওয়ার পাশাপাশি এগুলো বানানোর প্রযুক্তিও সরবরাহ করে ইরান। এ যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র ছিল ড্রোনগুলো।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তিতে সই করে রাশিয়া ও ইরান। চুক্তিটির লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক জোরদার করা। এর প্রশংসা করে মস্কো।

এ বিষয়ে এপির সঙ্গে কথা বলেন লন্ডনভিত্তিক থিংকট্যাংক চ্যাটাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো রিনাদ মানসুর। তার মতে, চুক্তিটি করা হয়েছিল ২০২৪ সালের পর। সে বছরটি ইরানের জন্য ছিল খুবই বাজে অভিজ্ঞতার সাল। ইসলামি প্রজাতন্ত্রটি একদিকে আঞ্চলিক মিত্র বাশারের উৎখাত দেখে, অন্যদিকে লেবাননভিত্তিক আরেক মিত্র হিজবুল্লাহকেও দুর্বল অবস্থায় পায় তেহরান।

এমন বাস্তবতায় ইরান রাশিয়ার ওপর নির্ভর করতে চেয়েছিল বলে মনে করেন মানসুর।

চুক্তির দৃশ্যমান প্রভাব নেই যুদ্ধে

ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর মস্কো-তেহরান কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তির দৃশ্যমান কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়া কিংবা ইরান যদি অন্য কোনো দেশের দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে হামলাকারী দেশটিকে সাহায্য করতে পারবে না মস্কো কিংবা তেহরান। এটি পারস্পরিক কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়।

মানসুর বলেন, ইরানের দিক থেকে দেখতে গেলে, মস্কোর সাহায্যের ইচ্ছার পরিধি নিয়ে কিছুটা হতাশ তেহরান। ইরান মনে করছে, তারা ইসরায়েল ও অ্যামেরিকার মতো বিশাল শক্তির সঙ্গে লড়েছে। অথচ তাতে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি রাশিয়া।

যদিও ইরানকে একা ছেড়ে দেওয়া কিংবা উপেক্ষা করা হয়নি বলে দাবি করেছে ক্রেমলিন। মস্কো ইরানকে অর্থপূর্ণ সহায়তা দেয়নি বলে যে দাবি করা হয়েছে, তা অস্বীকার করেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

তিনি মঙ্গলবার জানান, অনেকে মস্কো ও তেহরানের মধ্যে অংশীদারত্ব নষ্ট করতে চাইছে।

তার ভাষ্য, রাশিয়া পরিষ্কার অবস্থান নিয়ে ইরানকে সহায়তা করেছে। দেশটির লক্ষ্য ইরানের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও উন্নত করা।

তেহরানকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মতো সরঞ্জাম রাশিয়া দেবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর সোমবার দেন পেসকভ।

তিনি জানান, সব নির্ভর করছে ইরানি বন্ধুদের চাওয়ার ওপর।