
ধর্মান্তরের অভিযোগে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নৈশভোজে পুলিশ ও মবের হানা

টিবিএন ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৩ ২০২৫, ৬:১০ হালনাগাদ: ডিসেম্বর ৩ ২০২৫, ১৬:০০
.jpg)
খ্রিস্টান পরিবারের নৈশভোজের অনুষ্ঠানে মবের হানা। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
- 0
স্থানীয় গির্জার একজন যাজক জানিয়েছেন, পুলিশ ও উচ্ছৃঙ্খল জনতা মিলে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু লোককে মারধর করেছেন।
ভারতের ঝাড়খন্ডের জামশেদপুরের একটি হাউজিং সোসাইটিতে খ্রিস্টান পরিবারের একটি নৈশভোজের অনুষ্ঠানের সময় ঘটে গেছে তুলকালামকাণ্ড। খ্রিস্টান পরিবারটির ঐ অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে ধর্মান্তরের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যার জের ধরে পুলিশের সাথে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ অনুষ্ঠানে ঢুকে পড়ে।
তবে পুলিশের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, পুলিশ সেখানে ধর্মান্তরের কোনও প্রমাণ পায়নি। বিষয়টিকে গুজব হিসেবে অভিহিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
গোলমুড়ি থানার আওতাধীন জামশেদপুরের একটি ২৬শে জুলাই এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে। সেদিন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের ধর্মীয় রীতি মেনে ২১ দিনের উপবাস প্রার্থনার সমাপ্তি উপলক্ষে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। যে হাউজিং সোসাইটিতে রাতের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানকার কিছু বাসিন্দা দুটি ফ্ল্যাটে ৫০ জনের উপস্থিতি নিয়ে সন্দেহজনক সমাবেশের দাবি করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
গোবিন্দপুরের স্থানীয় গির্জার একজন যাজক জিতু লিমা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘'আমাদের গির্জার প্রায় ৫০ জন সদস্য ২১ দিনের উপবাসের সময় ওই দুটি ফ্ল্যাটে থাকছিলেন। তাঁরা প্রায় সবাই আত্মীয় ও পরস্পরের সঙ্গে চেনাজানা।’
জিতু লিমা আরও জানান, ফ্ল্যাট দুটি কেবল থাকার জন্য ব্যবহার হচ্ছিল। সেখানে কোনো প্রার্থনা বা ধর্মীয় কার্যক্রম চলছিল না। উপবাসের শেষ দিন হওয়ায় রাতের খাবার খেতে সবাই সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। এতে ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই ছিলেন।
গির্জার যাজক বলেন, এই অবস্থায় সেখানে পুলিশের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল জনতার একটি দল হঠাৎ একটি ফ্ল্যাটে ঢুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তারা ছয়জনকে থানায় নিয়ে যান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গির্জার একজন সদস্য অভিযোগ করেন যে, পুলিশ ও উচ্ছৃঙ্খল জনতা মিলে তাদের হয়রানি করেছে এবং থানায় নিয়ে যাওয়ার পর কিছু লোককে মারধরও করা হয়েছে।
জিতু লিমা ঘটনার বর্ণনায় বলেন, রাত ৯টার দিকে যে কক্ষে রাতের খাবারের আয়োজন চলছিল সেখানে মব ঢুকে লাঠি চার্জ শুরু করে। এরপর পুলিশ ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং কাউকে বের না হতে নির্দেশ দেয়। সেখানে ১০০ জনের বেশি মানুষ ছিলেন। কিছু পুলিশ সদস্য সাদাপোশাকে ছিলেন। তাই বোঝা যাচ্ছিল না, কে পুলিশ আর কে মবের লোক।
যাজক বলেন, ‘প্রায় তিন ঘন্টা ধরে আমাদের কক্ষে আটকে রাখা হয়। রাত ১২.৩০ মিনিটের দিকে, আমি সহ আমাদের ছয়জনকে স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে আমাদের কয়েকজনকে মারধর করা হয়েছিল। তিনি অভিযোগ করেন যে একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা তাদের মারধর করেছেন এবং জিজ্ঞাসা করেছেন যে তারা কেন মানুষকে ধর্মান্তরিত করছে?
এদিকে মারধরের বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন গোলমুড়ি স্টেশন হাউস অফিসার (এসএইচও) রাজেন্দ্র কুমার। তিনি বলেন, ‘আমি এটা জানি না। আমি তাদের জল দিয়েছিলাম এবং সম্মানের সাথে আচরণ করেছি। হতে পারে যে আমি যখন বাইরে বেরিয়েছিলাম তখন সোসাইটির কেউ তাদের উপর আক্রমণ করে থাকতে পারে।’
রাজেন্দ্র কুমার আরও বলেন, ওড়িশা এবং বাংলার মতো রাজ্য থেকে প্রায় ৫০ জন মানুষ সমাবেত হয়েছেন বলে কিছু বাসিন্দার কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পান তারা। তাই পুলিশ সেই রাতে হাউজিং সোসাইটিতে যায়।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমরা তৎক্ষণাৎ অন্যায় কিছু করার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাইনি। কেউ লিখিত কোনো অভিযোগও জমা দেননি।’
গত বুধবার অল ইন্ডিয়া খ্রিষ্টান মাইনরিটি ফ্রন্টের সহসভাপতি ও সংখ্যালঘু অধিকারকর্মী অজিত তিরকে জামশেদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ধর্মান্তরের মিথ্যা অভিযোগের অজুহাত তুলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নিপীড়ন বাড়ছে।
পুলিশ হেফাজতে মারধরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জামশেদপুরের ডেপুটি কমিশনার কর্ণ সত্যার্থি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘এমনটি হয়ে থাকলে তা অন্যায়। অপরাধী ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে কার সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা হবে, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আমরা ঘটনাটি আমলে নিচ্ছি এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মিলে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’