বন্যায় বাড়িছাড়া অ্যামেরিকানদের পুনর্বাসন নিজ এলাকাতেই

টিবিএন ডেস্ক

জুন ২৪ ২০২৩, ২২:০১

বন্যা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য  শহর ও স্টেইটগুলোকে অর্থ যোগান দিচ্ছে অ্যামেরিকান সরকার। ছবি: সংগৃহীত

বন্যা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য শহর ও স্টেইটগুলোকে অর্থ যোগান দিচ্ছে অ্যামেরিকান সরকার। ছবি: সংগৃহীত

  • 0

অ্যামেরিকার সরকার বন্যার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার জন্য চার দশকেরও বেশি সময় ধরে শহর ও স্টেইটগুলোকে অর্থ যোগান দিচ্ছে।

হারিকেন বা বন্যায় কোনো এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে নেইবারহুডের সদস্যরা স্থানীয় অথবা স্টেইট সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত জমি বা বাড়িটি কিনে নেয়ার আবেদন জানাতে পারেন, যাতে ওই অর্থ দিয়ে তারা অন্য কোথাও বসবাস শুরু করতে পারেন।

দ্য ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির (এফইএমএ) জমি কিনে নেয়ার কর্মসূচিকে ‘পরিকল্পিত অপসারণ’ বলা হয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ। মানুষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি ও অবকাঠামোকে জলবায়ু প্রভাবিত এলাকা থেকে দূরের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়াই এ প্রকল্পের লক্ষ্য। মানুষজন নতুন বাসস্থান কোথায় তৈরি করেছে এবং এতে তাদের জলবায়ু ঝুঁকি কমেছে কিনা তা এতদিন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি।

নিউ ইয়র্ক সিটিতে চলতি সপ্তাহে একটি ‘পরিকল্পিত অপসারণের’ সম্মেলনের সঙ্গে এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা মিলে যায়। বাড়ি কেনা-বেচার একটি পরিষ্কার চিত্র তুলে ধরেছে এটি।

পরিসংখ্যানে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষ তাদের আগের বাড়ি থেকে খুব একটা দূরে যাচ্ছে না। প্রায়ই তারা একই বন্যাপ্রবণ এলাকায় নতুন করে বাড়ি কিনছে।

গবেষকরা দেখেছেন, জাতিগত প্রভাব নতুন এলাকায় সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

রাইস ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও গবেষণা দলের সদস্য জেমস এলিয়ট সিএনএনকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান বিমা খরচ উপকূল ও বন্যাকবলিত এলাকা থেকে মানুষকে সরে যেতে চাপ দিচ্ছে। মানুষ কোথায় যাচ্ছে সেদিকে আমাদের আরও মনোযোগ দিতে হবে।‘

তিনি জানান কীভাবে সারা দেশে বিভিন্ন কমিউনিটি ও এলাকায় পোগ্রামটি ভিন্নভাবে কাজ করে তা নির্দেশ করে এ অনুসন্ধান।

বন্যার ঝুঁকি অনুমান, আবাসন মূল্য, ইউএস সেনসাস ব্যুরোর জাতি ও আয়ের ডেটা ও ১৯৯০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এফইএমএর স্থানান্তরের ডেটা ব্যবহার করে রাইস ইউনিভার্সিটির গবেষকরা একটি ডেটাবেস তৈরি করেছেন। এতে প্রায় ১০ হাজার অ্যামেরিকান তাদের বন্যা কবলিত বাড়ি কোথায় বিক্রি করেছেন ও কোথায় পুনর্বাসিত হয়েছেন সে তথ্য রয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা এফইএমএর জমি কেনার সুবিধা নিয়েছেন তারা সাধারণত দূরে যাননি ও সাধারণত একই প্লাবনভূমির মধ্যে থাকছেন। মানুষজন সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ২০ মাইলের মধ্যে থেকে যান। ৯৬ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকা থেকে কেউ সরে গেলে তারা আবার কোনো শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত এলাকাতেই ফিরতে চান।

শ্বেতাঙ্গরা ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সাধারণত প্রবল ঝুঁকিতে না পড়লে বাড়ি পরিবর্তন করেন না বলেও দেখা গেছে, যেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এ হার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ।

এলিয়ট জানান, বাড়ি কেনার এই প্রোগ্রামে মানুষ শ্বেতাঙ্গ এলাকার দিকে বেশি গেছে। এফইএমএর প্রোগ্রামটির সুবিধা আগে যারা নিয়েছেন তাদের ৮০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ এলাকায় থেকে গেছেন।

এলিয়ট একটি পুরনো গবেষণায় দেখেছেন জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় কমিউনিটিতে বাড়ি কেনায় অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগই শ্বেতাঙ্গ বাড়ির মালিক।

কলম্বিয়া ক্লাইমেট স্কুলের একজন সিনিয়র গবেষণা বিজ্ঞানী ও নাসার সোসিওইকোনোমিক ডেটা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের ডেপুটি ম্যানেজার আলেকজান্ডার ডি শেরবিনিন বলেন, গবেষণা থেকে এটা স্পষ্ট নয় যে শ্বেতাঙ্গ বাড়ির মালিকরা জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় এলাকায় যেতে অনিচ্ছুক।

গবেষণার প্রতিক্রিয়ায় এফইএমএর মুখপাত্র জেরেমি এম. এডওয়ার্ডস বলেছেন, ‘এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে এজেন্সি ক্রয়বিক্রয়ের জন্য তহবিল সরবরাহ করে। এই তহবিলগুলো দেয়ার সিদ্ধান্ত স্টেইট সরকারের উপরই বর্তায়।’

এলিয়ট বলেন, ‘আমাদের সত্যিই ভাবতে হবে কীভাবে লোকেরা স্থানীয়ভাবে স্থানান্তরিত হচ্ছেন, বিকল্পগুলি কী, কীভাবে চলমান শহুরে পরিবেশ, জাতিগত বিচ্ছিন্নতা এলাকা থেকে সরে যেতে বা না যেতে সহায়তা করছে। যাদেরকে এখন আমরা দেখছি তারা সবাই ফেমার প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন।

“জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটাই সত্যি যে, বাসিন্দাদের এই জায়গাগুলি থেকে সরে যেতে হবে কিনা প্রশ্ন আদতে সেটা নয়, প্রশ্ন হচ্ছে ‘কখন’ ও ‘কীভাবে’ যেতে হবে।”


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন