মিশিগান: দ্য গ্রেট লেক স্টেইট

তাহমিনা তাশরিফ মীম, টিবিএন ডেস্ক

মার্চ ২৯ ২০২৩, ২১:২৭

মিশিগান স্টেইট ম্যাপ

মিশিগান স্টেইট ম্যাপ

  • 0

মিশিগান অ্যামেরিকার মধ্য স্টেইটগুলো পূর্ব-উত্তর দিকের একটি। অজিবওয়া শব্দের ফ্রেঞ্চ ভার্সন মিশিগামা থেকে মিশিগান নামের উদ্ভব। এর অর্থ ‘বিস্তৃত জলরাশি’ বা ‘বড় লেক’।

মিশিগান দুটি উপদ্বীপ নিয়ে গঠিত। এছাড়া পাঁচটি গ্রেট লেকের মধ্যে চারটি- লেক সুপিরিয়র, লেক মিশিগান, লেক হুরন ও লেক এরির উপকূলরেখা মিশিগানকে ছুঁয়ে গেছে। গ্রেট লেক বলতে বোঝায় নর্থ অ্যামেরিকার পূর্ব-মধ্য অংশের পাঁচটি বড় এবং পস্পরের সঙ্গে যুক্ত লেকের একটি অঞ্চল। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিঠা পানির এলাকা হিসেবে পরিচিত। 

মিশিগান ক্যানাডার অন্টারিও প্রভিন্স, অ্যামেরিকার অহিও স্টেইট, ইন্ডিয়ানা ও উইসকনসিনের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটি ইলিনয় ও মিনেসোটার সঙ্গে একটি জলসীমা ভাগভাগি করেছে।   

মিশিগান ‘দ্যা গ্রেট লেক স্টেইট’ নামে পরিচিত। এছাড়া একে ‘দ্য উলভারিন স্টেইট’, ‘দ্য মিটেন স্টেইট’ নামেও ডাকা হয়। মিশিগানের আলফা সিটি, ডেট্রয়েট, অ্যামেরিকার অটো ইন্ডাস্ট্রির কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি কনটেম্পোরারি মিউজিকের কেন্দ্র হিসেবে এর খ্যাতি রয়েছে। যেমন ডেট্রয়েট সাউন্ড, মোটাউন, ডেট্রয়েট হিপ-হপ, গ্যারেজ রক বা প্রোটো-পাঙ্ক এবং ডেট্রয়েট টেকনো। 

ইতিহাস

১৬৬০ সাল থেকে ফ্রেঞ্চ শাসনের শেষ পর্যন্ত মিশিগান ছিল নিউ ফ্রান্সের এক রাজকীয় প্রভিন্স। ১৭ শতকে ফ্রেঞ্চ-ক্যানাডিয়ান পশম ব্যবসায়ী এবং জেসুইট মিশনারিরা প্রথম ইউরোপিয়ান হিসেবে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। ১৬৯১ সালে ফ্রেঞ্চরা সেইন্ট যোসেফ নদীর উপর সেইন্ট যোসেফ ফোর্ট নির্মাণ করেন। এরপর ১৭০১ সালে তারা ফোর্ট পন্টচারট্রেইন ডু ডেট্রয়েট (ফোর্ট ডেট্রয়েট) স্থাপন করেন। রাতারাতি শহরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পশম বাণিজ্য ও শিপিং কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে।

১৭৬০ সালে ফ্রেঞ্চ মন্ট্রিল ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে যাওয়ার মাধ্যমে ফ্রেঞ্চ-ইন্ডিয়ান যুদ্ধের (১৭৫৪-১৭৬৩) সমাপ্তি ঘটায় এবং বর্তমান মিশিগান অঞ্চলটি ব্রিটিশ প্রদেশ কুইবেইকের অংশ হয়ে ওঠে। 

১৮২৫ সালে এরি ক্যানেল খুলে দেয়ার আগ পর্যন্ত মিশিগান অঞ্চলের জনসংখ্যা (কার্যত ডেট্রয়েট এবং আশেপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত) ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকে। এই ক্যানেল গ্রেট লেক ও হাডসন নদীকে নিউইয়র্ক ও অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত করে। 

এই নতুন রুট মিশিগানে মানুষের ঢল নিয়ে আসে। ১৮৩০ সালের ভেতরই মিশিগানের জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৮০,০০০ এ, যা একটি স্টেইটের যোগ্যতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট। ১৮৩৭ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন একটি বিলে সইয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে মিশিগানকে সার্বভৌমত্ব দেন। এর মাধ্যমে মিশিগান ২৬তম স্টেইট হিসেবে ইউনিয়নে যোগ দেয়। 

ভৌগোলিক অঞ্চল

দুটি উপদ্বীপ নিয়ে গঠিত হওয়ার কারণে মিশিগান একটি ব্যতিক্রমী আকৃতির স্টেইট হিসেবে পরিচিত। মিশিগানের আয়তন ২৫০,৪৮৫ বর্গকিলোমিটার (৯৬,৭১৩ বর্গমিটার) যা বৃটেইনের চেয়ে সামান্য বড়। মিশিগান পূর্ব-উত্তর-মধ্য স্টেইটগুলোর মধ্যে বৃহত্তম, তবে আলাস্কার প্রায় সাত ভাগের এক ভাগ।

মিশিগানের পরিচিতি দ্য উলভারিন স্টেইট নামে, যা একটি উচ্চ উপদ্বীপ এবং একটি নিম্ন উপদ্বীপ নিয়ে গঠিত। এই দুটি উপদ্বীপ ১৯৫৭ সালে ম্যাকিনাক ব্রিজ নির্মাণের আগ পর্যন্ত পরস্পর থেকে আলাদা ছিল। ম্যাকিনাক ব্রিজ এই উপদ্বীপ দুটির মাঝে সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করেছে। 

উচ্চ উপদ্বীপ

উলভারিন স্টেইটের উচ্চ উপদ্বীপের পূর্বদিকের চারপাশ নিচু পাহাড়ে ঘেরা এবং মাঝে মাঝে জলাভূমি ও পশ্চিমে কিছু রুক্ষ ভূখণ্ডের সঙ্গে উঁচু পাহাড় লক্ষ্য করা যায়। এ উপদ্বীপের পূর্ব অংশটি গ্রেট লেকের সমতলভূমির একটি অংশ এবং পশ্চিম অংশটি লেক সুপিরিয়র থেকে পরকুপাইন মাউন্টেইনের ভেতর সুপিরিয়র উচ্চভূমি জুড়ে বিস্তৃত। 

নিম্ন উপদ্বীপ

নিম্ন উপদ্বীপটিও গ্রেট লেকের সমভূমির অংশ, যা পশ্চিমে লেক মিশিগান, পূর্বে লেক হুরন ও লেক এরি এবং দক্ষিণে ইন্ডিয়ানা ও ওহিও স্টেইটের সীমানা নির্ধারক। ভূখণ্ডটির দক্ষিণ অংশের চারদিকে নিচু পাহাড়ে ঘেরা এবং উত্তরে সমতল ভূমি উত্তরের এই অংশটিকে দক্ষিণের পাহাড় থেকে আলাদা করে। 

এ নিম্ন উপদ্বীপে মূলত চার ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায়।

 উপদ্বীপের নিচের অর্ধেক অংশ জুড়ে রয়েছে পাহাড়ি মোরাইনস অঞ্চল; এটি মোরাইন, শিলা এবং পলল দিয়ে গঠিত। নিচের দিকে বহমান হিমবাহ উপদ্বীপটির গ্লেইসিয়ার গঠন করে। 

নিচু এই উপদ্বীপের সমুদ্র সৈকত এবং টিলা নিচু বন দিয়ে আচ্ছাদিত। 

মুস্কেগন-স্যাগিনাউ উপসাগরের উত্তর প্রান্তে উঁচু সমতল ভূমি এবং মোরেইন অঞ্চলে উঁচু পাহাড়ি শৃঙ্গ রয়েছে। পূর্বাঞ্চলের নিম্ন সমতল ভূমি স্যাগিনাউ উপসাগর থেকে নিম্ন উপদ্বীপের প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে ডেট্রয়েটসহ স্টেইটের সবচেয়ে শিল্পায়িত অঞ্চল রয়েছে।

জনসংখ্যা

২০১৯ সালের আনুমানিক হিসাব আনুযায়ী, মিশিগান অ্যামেরিকার দশম জনবহুল স্টেইট, যেখানে জনসংখ্যা প্রায় ৯.৯৮ মিলিয়ন।  

এ স্টেইটের ক্যাপিটালের নাম ‘ল্যান্সিং’ । মিশিগানের সবচেয়ে বড় শহরের নাম ডেট্রয়েট এবং এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মেট্রোপলিটন এলাকা হলো মেট্রো ডেট্রয়েট, যা অ্যামেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম মেট্রোপলিটন এলাকা।  

১০০ হাজারেরও বেশি জনসংখ্যাসহ এই স্টেইটের অন্য প্রধান শহরগুলো হলো গ্র্যান্ড র‍্যাপিডস, ওয়ারেন, স্টারলিং হাইটস, ল্যান্সিং, অ্যান অর্রবর ও ফ্লিন্ট। 

জাতি ও জাতিগোষ্ঠী 

মিশিগানের জনসংখ্যার ৭৪.৯ শতাংশ হোয়াইট। অ্যাফ্রিক্যান-অ্যামেরিক্যান ১৪.১ শতাংশ, হিস্পানিক বা ল্যাটিনো ৫.২ শতাংশ, এশিয়ান ৩.৪ শতাংশ এবং নেইটিভ অ্যামেরিক্যান ০.৭ শতাংশ। 

বিমানবন্দর

মিশিগান স্টেইটের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর হলো ডেট্রয়েট মেট্রোপলিটন ওয়েন কাউন্টি বিমানবন্দর ।

গ্র্যান্ড র‍্যাপিডস শহরে রয়েছে যেরাল্ড আর ফোর্ড আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ফ্লিন্ট শহরে বিশপ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

প্রধান শহর

ডেট্রয়েট মিশিগানের অন্যতম প্রধান শিল্প শহর এবং একটি গ্রেট লেক শিপিং সেন্টার। গ্র্যান্ড র‍্যাপিডস মিশিগানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এছাড়া রয়েছে ওয়ারেন, স্টারলিং হাইটস, ল্যান্সিং, অ্যান অর্রবর এবং ফ্লিন্ট, ডিয়ারবর্ন ও লিভোনিয়া।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন