বিদেশি কূটনীতিকরা এসকর্ট পাবেন না, ফের জানাল বাংলাদেশ

টিবিএন ডেস্ক

মে ১৬ ২০২৩, ২২:০৫

বিদেশি কূটনীতিকরা এসকর্ট পাবেন না, ফের জানাল বাংলাদেশ
  • 0

বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আন্তর্জাতিক আইন ও প্রচলিত রীতির প্রতি বাংলাদেশ শ্রদ্ধাশীল বলে জানিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কিছু সংবাদমাধ্যমে ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বা বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা বিধান নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিভ্রান্তি দূর করতে মঙ্গলবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।

তাতে বলা হয়েছে, ‘নিরাপত্তা প্রত্যাহার সম্পর্কিত বিভ্রান্তিকর খবরটি সঠিক নয়। প্রতিটি দূতাবাসেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা বিধান অব্যহত রেখেছেন এবং রাষ্ট্রদূতদের জন্য পুলিশ প্রদত্ত গানম্যান নিয়োজিত আছেন… বাংলাদেশ পুলিশ বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তার গুরুদায়িত্বটি সবসময় পালন করে থাকে। তবে বাংলাদেশের কয়েক বছর আগের একটি ঘটনার পরবর্তী সময় থেকে কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিককে অলিখিতভাবে গাড়িসহ নিয়মিত ট্রাফিক মুভমেন্টের সহায়তার জন্য বাড়তি কিছু লোকবল দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই তাদেরকে বাড়তি নিরাপত্তা প্রদানের কোন আবশ্যকতা নেই। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কার্যপরিধি বৃদ্ধির জন্য এই বাড়তি সুবিধাটি এখন অব্যাহত রাখা যাচ্ছে না।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘পৃথিবীর কোনো দেশেই বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রদূতকে বাড়তি নিরাপত্তা ও চলাচলের ক্ষেত্রে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো সুবিধা প্রদান করা হয় না… তাদের সকলের সুবিধার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ আনসার বাহিনীতে একটি চৌকস দল তৈরি করেছে। বিদেশি কূটনীতিকরা তাদের খরচে এ সুবিধাটি গ্রহণ করতে পারবেন। কোন দূতাবাস আনসার সদস্যদের এই সুবিধা অব্যাহত রাখতে চাইলে বা বাড়তি সুবিধা নিতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানালে সেই ব্যবস্থাটি গ্রহণ করা হবে।’

শিগগিরি সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে সব বিদেশি দূতাবাসকে জানিয়ে দেয়া হবে বলে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। 

এর আগে সোমবার বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি অ্যাম্বাসেডর ও হাই কমিশনারদের একই ধরনের বৈষম্যহীন নিরাপত্তা সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। এর ফলে অ্যামেরিকা, বৃটেইন, ইন্ডিয়াসহ যেসব দেশের অ্যাম্বাসেডর ও হাই কমিশনাররা পুলিশের এসকর্ট সুবিধা পেতেন, সেটি আর পাবেন না।

এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সব রাষ্ট্রদূতের অতিরিক্ত সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারণ উন্নত দেশে এ ধরনের সুবিধা কেউ দেয় না। এছাড়া আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা এত খারাপ না যে রাস্তায় গুলি করে মেরে ফেলে, শপিং মলে গুলি করে মেরে ফেলে- এ রকম আমাদের দেশে অবস্থা নেই।’

তিনি বলেন, ‘তৃতীয় কারণ হচ্ছে কৃচ্ছ্রসাধন। অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত বাড়তি সুবিধা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন এবং এ কারণে এটি বেশি হয়ে যাচ্ছিল। দিন দিন খালি বাড়ছিল।

‘আমাদের ফোর্সগুলো প্রয়োজন, কারণ আমাদের মেট্রো ও পদ্মা সেতু চালু হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেউ যদি চায় এই ফোর্স, তারা ভাড়া করতে পারবে অর্থের বিনিময়ে এবং এটি অন্য দেশেও আছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশে কোনো রাষ্ট্রদূত পতাকা উড়িয়ে ভ্রমণ করেন না। অ্যামেরিকা, বৃটেইন বা ইউরোপের কোনো দেশে। আমরা চিন্তা করছি, এ বিষয়টিও আমরা প্রত্যাহার করবো কিনা।’

অ্যামেরিকার স্টেইট ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপ্যাল ডেপুটি স্পোক্সপারসন ভেদান্ত প্যাটেল মঙ্গলবারই এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন। 

তিনি জানান, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী সমস্ত কূটনৈতিক কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

ভেদান্ত বলেন, 'ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, যে কোনো স্বাগতিক দেশকে কূটনৈতিক মিশন প্রাঙ্গণ ও কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে বাধ্যবাধকতা বজায় রাখতে হবে। কর্মীদের ওপর কোনো আক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে হবে।'

স্টেইট ডিপার্টমেন্ট মুখপাত্রের এই বক্তব্যের পরদিন কূটনীতিকদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন