দৃষ্টিহীন চিত্রশিল্পীর ১০০ বছর পুরোনো চিত্রকর্ম

টিবিএন ডেস্ক

জুলাই ৩ ২০২৩, ২১:৫৮

বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের আঁকা শান্তিনিকেতনের দৃশ্য

বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের আঁকা শান্তিনিকেতনের দৃশ্য

  • 0

প্রায় এক শ’ বছর আগে ভারতের বিখ্যাত দৃষ্টিহীন চিত্রকর বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের আঁকা একটি হ্যান্ডস্ক্রল খুঁজে পাওয়া গেছে। এটি কোলকাতায় প্রথমবারের মতো সর্বজনীন প্রদর্শনীর উদ্দেশে রাখা হয়েছে।

জাপানিজ স্টাইলের চিত্রকর্মটির শিরোনাম ‘শান্তিনিকেতনের দৃশ্য’। এটি মাত্র ছয় ইঞ্চি চওড়া, লম্বায় প্রায় ৪৪ ফুট।

কোলকাতায় প্রথমবারের মতো সর্বজনীন প্রদর্শনীর উদ্দেশে রাখা হয়েছে হ্যান্ডস্ক্রলটি।

প্রথম ফ্রেমে গাছের নীচে বসে থাকা একজনকে দেখা যায়, যিনি দর্শকদের শান্তিনিকেতন ভ্রমণে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।

জাপানিজ ও চাইনিজ খসড়ায় এতে ঘন ঘন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ২২টি মানুষ, ২২টি গবাদি পশু, তিনটি মুরগি, একটি কুকুর এবং একটি পাখির ছবি রয়েছে এই খসড়ায়। জমি ও আকাশকে চিত্রিত করতে ব্যবহার করা হয়েছে শূন্যস্থান।

শান্তিনিকেতনের দৃশ্য

চলতি মাসে চিত্রকর্মটি শান্তিনিকেতনে নেয়া হবে। কোলকাতায় পৌঁছানোর আগে দুবার হাত পরিবর্তন হয় স্ক্রলটির। ১৯২৯ সালে শান্তিনিকেতনের আর্ট স্কুলের শিক্ষার্থী সুধীর খাস্তগিরকে এটি দিয়েছিলেন বিনোদ। খাস্তগির স্ক্রলটি অন্য এক শিল্পীকে উপহার দিয়েছিলেন, যিনি ছয় বছর আগে আর্কিভিস্ট রাকেশ সাইনির কাছে সেটি বিক্রি করেন।

শান্তিনিকেতনের দৃশ্য

শিল্প ইতিহাসবিদ শিব কুমার বলেন, ‘স্ক্রলটিতে শিল্পীর নিঃসঙ্গতা ও বিচ্ছিন্ন অনুভূতিকে সূক্ষ্মভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে...’

শান্তিনিকেতনের দৃশ্য

শান্তিনিকেতনে বিনোদের শিক্ষক ছিলেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী নন্দলাল বসু, যিনি আর্ট স্কুলের প্রধান ছিলেন। শিব কুমার জানান, নন্দলাল বসু একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রের বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘সে কি আন্তরিক? সে কি আগ্রহী? তবে তাকে থাকতে দাও।’

বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনেকতন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পরে শিক্ষক ছিলেন বিনোদ। ল্যান্ডস্কেপ ও ফ্রেস্কো পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে বিশ শতকে ভারতের আধুনিক শিল্পকে সংজ্ঞায়িত করতে চেয়েছিলেন তিনি। ছিলেন ম্যুরালিস্ট ও ভাস্করও।

তার জন্ম ১৯০৪ সালে কোলকাতায়। এক চোখে অন্ধ ছিল তার, অন্য চোখে ঝাপসা দেখতেন। ৫৩ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। মারা যান ১৯৮০ সালে।

বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সত্যজিৎ রায় (বাঁয়ে)। ছবি: নিমাই ঘোষ

অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায় ১৯৭২ সালে বিনোদ বিহারীর উপর ‘দ্য ইনার আই’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন। এতে বলা হয়, ‘অন্ধত্ব একটি নতুন অনুভূতি, একটি নতুন অভিজ্ঞতা, একটি নতুন অবস্থা।’


0 মন্তব্য

মন্তব্য করুন